ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মমতাজ লতিফ

শিশু নির্যাতক খুনী পিশাচ জঙ্গীদের দ্রুত মৃত্যুদন্ড চাই

প্রকাশিত: ০৬:২২, ১১ আগস্ট ২০১৫

শিশু নির্যাতক খুনী পিশাচ জঙ্গীদের দ্রুত মৃত্যুদন্ড চাই

বাস্তবিক, আমাদের মোটামুটি দীর্ঘ জীবনে এই চরম বর্বরতা, পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড এর আগে ঘটেছে বলে দেখিনি, শুনিনি। একেই বাংলাদেশে মুসলিমদের মধ্যে বহুল প্রচলিত যৌতুকের জন্য বধূ, নিজ শিশুদের মাকে হত্যার অতি উচ্চহার নিয়ে উদ্বিগ্ন নারী সমাজ এবং সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে এই সামাজিক অপরাধটি সংখ্যালঘু হিন্দু সমাজেও প্রভাব ফেলছে, যা আগে কখনও দেখা যায়নি! তার ওপর শিশু-বালিকা-তরুণী ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হচ্ছে, যা নিয়ে সচেতন নারী-পুরুষ শঙ্কিত, উদ্বিগ্ন। এর মধ্যে আকস্মিকভাবে যেন প্রতিযোগিতা করে শিশু-কিশোরদের অচিন্তনীয় বর্বর ও পৈশাচিক পন্থায় নির্যাতন করে হত্যা করা শুরু হয়েছে, যার মধ্যে বাঙালী মুসলিম সমাজের ইসলামের শান্তি, শিশু ও নারীর প্রতি সংবেদনশীলতার মূল্যবোধের বিপরীত- জঙ্গী, জিহাদী ইসলামেরই এক রূপ পরিস্ফুট হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে কয়েকটি প্রশ্ন মনে জাগছেÑ ক) কে, কারা, কেন এই দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের দীর্ঘ ৭-৮ ঘণ্টা ধরে অসহ্য যন্ত্রণা দিয়ে এলাকার বিপুল উৎসাহী লোকের উপস্থিতিতে শিশু খুনের ঘটনাটি সংঘটন করল? খ) কেন এলাকার মানুষ নামের সবাই পিশাচ হলো? গ) যেহেতু অন্তত দুটি ঘটনা, রাজীব ও রাকিবের খুন এবং এই শিশু খুনের মোবাইলে ধারণকৃত ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে ভিডিও করা হয়েছে, নির্যাতনের অসহনীয় দৃশ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়েছে, খুনীদের অট্টহাসি পর্যন্ত শোনানো হয়েছে, এক সাদা দাড়িওয়ালা বৃদ্ধের নির্যাতনে অংশ নেয়া, বিশ-পঁচিশটি শিশুর স্বাভাবিক থেকে তাদের মতোই শিশুটির ওপর নির্যাতনের দৃশ্যটি দেখা ইত্যাদি চিত্র খুব বেশি পরিকল্পিত বলে মনে হয় না কি? ঘ) সুতরাং পুলিশকে শুধু নির্যাতক খুনীদের গ্রেফতার করলে চলবে না, চিত্র ধারণকারীদেরও ধরতে হবে। কেননা যারা এ শিশুদের ওপর বর্বর নির্যাতন দীর্ঘ সময় ধরে দেখেও প্রতিবেশী, পুলিশ, আনসারদের খবর দিয়ে এনে ঐক্যবদ্ধভাবে এ নির্যাতনে মৃত্যুর হাত থেকে শিশুকে রক্ষা না করে মোবাইলে ফটো ধারণ করেছে, সেসব অসহ্য, অমানবিক দৃশ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়েছেÑ তারাও কি ওই সব খুনীকে খুনের কাজে সহায়তা করেনি? ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’কে কি এরাই ব্যঙ্গ, বিদ্রƒপ করার হাতিয়ারে পরিণত করতে চেয়েছে? ঙ) এই শিশুদের বর্বর নির্যাতনের মাধ্যমে মেরে ফেলার দুটি ঘটনার একটি ঘটেছে সিলেটে, যেখানে জঙ্গীদের সংখ্যা ও এদের ইন্টারনেটে বিচরণ অনেক বেশি। জামায়াত শিবিরের নানা উপদলের অস্তিত্বও এখানে বেশি। এখানেই অনন্ত জঙ্গীদের হাতে খুন হয়েছে! এর আগে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতায় শিবিরের হাতে ছাত্রলীগ নেতা জগৎজ্যোতিও খুন হয়েছে! এই বর্বর ঘটনা নিয়ে ইন্টারনেটে মুক্তমনা উদার তরুণদের এ সময়টিতে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখা এবং জঙ্গী, জিহাদীদের আপন আপন কর্মতৎপরতা পরিচালনা কি ওই ইন্টারনেটে শিশু নির্যাতন দৃশ্য ধারণকারীদের উদ্দেশ্য ছিল? চ) শিশু রাজীব ও রাকিবকে অকল্পনীয় বর্বর পন্থায় খুন করলে সিলেটবাসী, খুলনাবাসী, দেশবাসী সব জেলা শহরে প্রচণ্ড বিক্ষোভে ফেটে পড়ে যখন প্রতিদিন স্বাভাবিকভাবেই নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোররা প্রতিবাদী মিছিল, মানববন্ধন, সভা করছে, তখন কিন্তু শতাধিক জঙ্গী, জিহাদী সদস্য দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনার লক্ষ্যে গোপন সভা করছিল, যারা র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েছে বলে সংবাদ সূত্রে প্রকাশ পায়। তাহলে কোন একটি গোষ্ঠী কি জঙ্গী-জিহাদীদের কর্মতৎপরতা থেকে জনমানুষের বিশেষত তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারকারী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টি ও মনোযোগ দূরে সরিয়ে রাখার লক্ষ্যে ওই বীভৎস ঘটনাবলীর সংবাদ ইন্টারনেটে প্রচার করেছে? সংবাদপত্রের চেয়ে এই বর্বরতম শিশু নির্যাতন ও হত্যার সংবাদ ইন্টারনেটে আগে এবং বিশদভাবে প্রকাশিত হলো কেন? খবরগুলো ইন্টারনেটে কারা প্রচার করেছে, তাদের পরিচয় বের করা গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ওদিকে, নাটোরের সেই বাগমারা, যে স্থানটি জঙ্গী বাংলাভাইয়ের উত্থানের জন্য কুখ্যাত, সেখানেই বাংলাভাইয়ের প্রধান সহযোগী জঙ্গী কমান্ডার লুৎফর দু’দিন আগে গ্রেফতার হলো র‌্যাবের হাতে! ছ) সারাদেশের প্রগতি শান্তিকামী জনগণ যখন শিশু নির্যাতন ও হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী সভা, সমাবেশে ব্যস্ত, ইন্টারনেটে উদার তরুণ-তরুণীরা এসব বর্বরতার বিরুদ্ধে মন্তব্য দিতে ব্যস্ত, সে সময়ই জঙ্গী নেতা ও জিহাদী সদস্যদের খুলনায়, বাগমারায় গোপন সভায় মিলিত হওয়া কি একেবারেই কাকতালীয়? সরকারকে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে হবে এবং যে কোন কারণে অসতর্ক থাকা বিপজ্জনক হতে পারে। যাই হোক, আমি যখন শিশুর যতœ ও বিকাশ কার্যক্রম প্রণয়ন করেছিলাম, তখন অন্যান্য কর্মসূচীর মতই আমি আমার নিজস্ব ভাবনা-চিন্তা, ধারণা থেকে একটি সহজ কিন্তু কার্যকর নীতি তৈরি করেছিলাম, যেটি হচ্ছেÑ ‘শিশুর মা ভাল থাকলেই শিশু সুস্থ, স্বাভাবিক ও সফল হতে পারে।’ বাস্তবিক, শিশুর প্রথম ও প্রধান প্রয়োজনগুলো শিশুর সবচেয়ে কাছের মানুষ, তার গর্ভধারিণী মা-ই পূরণ করে। যারাই মা-হারা শিশুদের দেখেছেন, তারাই উপলব্ধি করবেন, শিশুর প্রধান মানসিক নিরাপত্তা প্রদানকারী ব্যক্তি হচ্ছেÑ তার মা। মায়ের অভাবে কোন শিশু কিছুতেই সুস্থ, শান্ত, স্বাভাবিক, বিশেষত স্কুলের লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে পারে না। তার মন মেজাজ কখনই স্বাভাবিক হতে পারে না। অথচ গ্রামে-গঞ্জে ও শহরে দেখা যাচ্ছে, প্রতিদিন অন্যায় যৌতুকের দাবিতে বধূ ও শিশুর মা হত্যার শিকার হচ্ছে এবং শত শত শিশু মাকে অন্যায়ভাবে বাবা, দাদি, দাদার হাতে খুন হতে দেখছে। অসময়ে হচ্ছে তাদের সবচাইতে কাছের স্নেহ-আদর মমতাদাত্রী মা-হীন! এ অভাব শিশুরা খুব কম ক্ষেত্রেই পূরণ করে সুস্থ, স্বাভাবিকভাবে বড় হতে পারে। তৃণমূলের পুরুষ ও দাদা-দাদিদের এ শিক্ষা, সচেতনতা সৃষ্টির কাজটি আমার কর্মসূচীর অন্যতম অংশ হিসেবে সে সময় পরিকল্পনা করেছিলাম। কর্মসূচীটি তৃণমূল পর্যায়ে সফল হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে বধূ হত্যার পাশে নতুনভাবে শিশু হত্যা পুরো বাঙালী সমাজকে, আমাদের স্তম্ভিত করে দিয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত আমরা শিশুদের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দিতে শিশুর শ্রমের মূল্য হিসেবে দরিদ্র পরিবারগুলোকে উপবৃত্তি, চাল, গম ইত্যাদি প্রদানের ব্যবস্থার কথা বলেছি এবং সরকার অনেকদিন যাবত শিশুদের শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রদান করছে। শিশুদের জীবন শঙ্কামুক্ত, বিপজ্জনক কর্ম থেকে বিরত রাখার জন্য প্রচারণা চালানো হচ্ছে, যাতে শিশুরা নিরাপদ কাজ করে পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে শিক্ষার পাশাপাশি কিছু সময় কাজ করতে পারে। এখন দেখা যাচ্ছে- শিশুর প্রতিবেশী, ধর্ষক, বলাৎকারক এবং প্রতিহিংসাপরায়ণ নিয়োগকর্তা শিশুকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করতে সক্ষম, যা পাড়া-প্রতিবেশীদের মধ্যে দিনের আলোয় এতদিন অসম্ভব মনে করা হতো। ঘটনাগুলো আরও নির্মম যে কারণে, তাহলো প্রতিবেশীরা উপস্থিত চিত্র ধারণকারী ঘটনাগুলোকে বাধা না দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলতে দিয়ে মোবাইলে ফটো তুলে ইন্টারনেটে প্রচার করছেÑ যা এক কথায় অস্বাভাবিক মানসিকতার পরিচায়ক! এরাও জিজ্ঞাসাবাদের অন্তর্ভুক্ত হয় যেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রসঙ্গক্রমে এ বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে। এতদিন যাবত আমরা দেখে আসছিলাম যে, পশ্চিমের আরব মুসলিম দুনিয়া ভয়ঙ্করভাবে নারীবিরোধী। ওখানে জেন্ডারসমতার কোন প্রশ্নই ওঠে না। ধর্ষণের শিকার নারীকেই পাথরখণ্ড ছুড়ে হত্যা করা হচ্ছে অথচ ধর্ষকের কোন শাস্তি নেই! সাক্ষী আনতে হবে নারীকেই! নির্বাচনে নারীর ভোটাধিকার প্রয়োগ আরবের কয়েকটি দেশে নতুন প্রবর্তন করা হয়েছে! তবে, এখানে মুসলিম আরব পরিবারে নারীদের কঠোর পর্দাপ্রথার পাশেই আছে নারী গৃহকর্মীদের ওপর পরিবারের পুরুষ কর্তৃক নিয়মিত ধর্ষণের অধিকার! একাধিক বিয়ের প্রথা খুবই প্রচলিত। এসব দেশে আমাদের দেশ থেকে লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করে, যারা এসব শিখে ফেরত আসে। সম্প্রতি সৌদি আরব বাংলাদেশ থেকে নারী গৃহকর্মী নিয়োগে প্রাধান্য দিয়েছে, অথচ পুরুষ শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ আছে! এটা কি বাঙালীদের প্রতি এক ধরনের অসম্মান নয়? দুনিয়ার অন্য কোন দেশে, ভারত, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপিন্সে কি তারা শুধু নারী গৃহকর্মী চেয়ে প্রস্তাব দিয়েছে? বা কখনও দেবে? তারা সম্ভবত ৭৫ ভাগ নারীর বিপরীতে ২৫ ভাগ পুরুষ শ্রমিক নিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে! যা হোক, বলছিলাম আমাদের দেশে ঐসব দেশ থেকে রেমিটেন্সের সঙ্গে সঙ্গে আরবীয় পোশাক, হিজাব, বোরকা, আলখেল্লা, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, পর্দাপ্রথা, নারীর শিক্ষা ও স্বাধীনতার বিরোধিতা ইত্যাদি এসবও আমদানি হচ্ছে! ফলে ধর্ষণের হার বেড়ে চলেছে, বেড়ে চলেছে যৌতুকের লোভে বধূ হত্যার হারও। দেশে শিশু ছেলে-সন্তান হত্যা হতে দেখা যায় না, যদিও দরিদ্র শিশুদের ওপর নির্যাতন হয় না, তা বলা যায় না। দেখা যাচ্ছে, সদ্য সংঘটিত চার-পাঁচটি দরিদ্র কর্মজীবী ছেলে সন্তানকে ভয়াবহ নির্যাতনের মাধ্যমে প্রতিবেশী বখাটে যুবক, প্রতিহিংসাপরায়ণ অশিক্ষিত বর্বর গ্যারেজ মালিক- প্রধানত এরাই হত্যাগুলো সংঘটিত করেছে। বধূূ হত্যা, এমনকি এগারো-বারো বছরের বিবাহিত স্ত্রী হত্যা, জোর করে বধূকে এ্যাসিড খাওয়ানো ইত্যাদি সমাজে ও পরিবারে নারীর প্রতি সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেয়ার পরিণতি। ওদিকে জঙ্গী জিহাদীদের গোপন তৎপরতাও চলছে। শুক্রবার জঙ্গীদের হাতে ব্লগার নিলয় নিজ বাসায় খুন হলো এটি বাংলাদেশবিরোধী চক্রের কোন বড় পরিকল্পনার অংশ হলেও হতে পারে। সরকারকে বিনীতভাবে বলব- অভিজিত, রাজীব, অনন্ত, দীপ, বাবু, সদ্য নিহত নিলয়, এদের খুনীদের সব তথ্য দ্রুত বের করুন এবং দয়া করে তাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনুন। মুক্তমনা, মুক্তিযুদ্ধপন্থী ব্লগারদের হয়রানি না করে বরং তাদের সহায়তা গ্রহণ করুন। পুরো জাতি ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চায়, এ কথা কে না জানে। কেননা, তারা হাজার হাজার মুক্তিকামী বাঙালী নারী, পুরুষ, শিশু হত্যা করেছে! এটাই তো ইমরানসহ অন্যসব তরুণ প্রজন্মের মনের ও মুখে উচ্চারিত দাবি, যা জনগণের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন মাত্র! নতুবা বাংলাদেশকে যুদ্ধাপরাধী ও তাদের মিত্রমুক্ত করব কিভাবে? কিভাবে উন্নত সভ্য দেশের মতো বাংলাদেশ হবে যুদ্ধাপরাধী, তাদের মিত্র আগুন সন্ত্রাসী খালেদা-তারেক ও ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশবিরোধী জঙ্গী জিহাদী মুক্ত? লেখক : শিক্ষাবিদ, গবেষক
×