ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানের পাঞ্জাবে ২৮ শিশুর যৌন নিপীড়নের ভিডিও তৈরি করে মা-বাবাকে ব্ল্যাকমেল, গ্রেফতার ৮

ভয়াবহ শিশু যৌন নিগ্রহ

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১১ আগস্ট ২০১৫

ভয়াবহ শিশু যৌন নিগ্রহ

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে একটি ব্যাপক শিশু যৌন নিগ্রহ ও জোর করে অর্থ আদায়ের ঘটনায় দেশব্যাপী প্রচ- ক্ষোভ সৃষ্টির মুখে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ রবিবার অপরাধীদের ‘দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি’ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি এ ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, অভিযুক্তরা শাস্তি থেকে রেহাই পাবে না। প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ভাই শাহবাজ শরীফ ঘটনার সোশ্যাল মিডিয়ায় যাকে জাতীয় লজ্জা বলে বর্ণনা করা হয়েছে, তার বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। খবর এএফপি ও এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের। ওই ঘটনার শিকার পরিবারসমূহের একজন প্রতিনিধি লতিফ আহমদ সারা বলেন, ২৫ জনের একটি দুবৃৃর্ৃৃত্ত দল অন্তত ২৮০ শিশুর যৌন নিগ্রহের চলচ্চিত্র ধারণ করে তাদের অভিভাকদের ওইসব ভিডিও ফাঁস করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করেছে। সারা এবং স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, লাহোরের দক্ষিণ-প্রশ্চিমে কাসুরের হুসেন খানওয়ালা গ্রামে প্রধানত অনুর্ধ ১৪ বছর বয়সী শিশুদের একে অপরের সঙ্গে যৌনক্রিয়া করতে বাধ্য করে ৪ শতাধিক ভিডিও ধারণ করা হয়েছে। আইন সংক্রান্ত মানবাধিকার কর্মী সারা বলেন, শিশুদের প্রায় ৩শ’ ভিডিও ফাঁস করা হয়েছে এবং গ্রামের অর্ধেক শিশুই এর শিকার। প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ মানবাধিকার কর্মীদের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ ও গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের মধ্যে রবিবার স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের এক বিবৃতিতে বলা হয়। ঘটনায় যারা জড়িত তাদের শাস্তি দেয়া হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে যে কোন মূল্যে ন্যায়বিচার প্রদান করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী তদন্ত পরিচালনার জন্য জেলা ও দায়রা জজ সমবায়ে একটি কমিশন গঠনের জন্য লাহোর হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুর আহমদ মালিককে অবিলম্বে অনুরোধ জানাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। শনিবার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটির পেশ করা রিপোর্টে বলা হয়েছে, পুলিশ এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে অন্তত ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে এবং বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। পুলিশ জানিয়েছে, তারা কেলেঙ্কারির ঘটনায় আরও একজনকে গ্রেফতার করেছে। এসপি তদন্ত সৈয়দ নাদিম আব্বাস বলেন, আটককৃতরা শিশুদের যৌনক্রিয়া করতে বাধ্য করে তার ভিডিও করেছে। ‘আমরা তাদের কাছ থেকে পর্নো ভিডিওর সিডি, সেলফোন ও ভিডিও উদ্ধার করেছি।’ পাঞ্জাবের শিশু সুরক্ষা ব্যুরোর প্রধান সাবা সাদিক এ ঘটনাকে ‘পাকিস্তানের ইতিহাসে বৃহত্তম শিশু যৌন নিগ্রহ কেলেঙ্কারি বলে’ বর্ণনা করেছেন। গত সপ্তাহে পাঞ্জাব প্রাদেশিক সরকারের নির্দেশক্রমে পুলিশের দাখিল করা রিপোর্ট অনুযায়ী স্থানীয় কর্তৃপক্ষ অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উল্লেখ করেছিল। তবে, মিডিয়া ও মানবাধিকার কর্মীরা রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, তদন্ত পরিচালনাকারী কর্মকর্তারা পক্ষপাতদুষ্ট। লাহোরের কাছে কাসুরে নিগৃহীত শিশুদের পিতামাতাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধার পর ওই রিপোর্ট প্রকাশ পায়। অপরাধীদের বিচারে সোপর্দ করতে ব্যর্থতার জন্য তারা কর্তৃপক্ষের বিরদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। জানা যায়, দুর্বৃত্তদল ঘটনার শিকার শিশুদের পিতামাতাদের কাছ থেকে ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করে। অর্থ না দিলে তারা স্থানীয়ভাবে ৪০ পাকিস্তানী রূপিতে ভিডিও বিক্রি করার ভয় দেখায়। নিগৃহীত একটি শিশুর মা এএফপির এক রিপোর্টারকে বলেছেন, ‘২০১১ তে তারা আমাদের ছেলের ভিডিও তোলে। তারপর থেকে আমরা ব্ল্যাকমেইলারদের অর্থ দিয় যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, আমি ভিডিওগুলো দেখেছি। সেগুলো জঘন্য। আরেকজন নারী বলেন, তিনি একটি ভিডিও ফিল্ম ফাঁস হওয়ার পর গত মাসে তার ছেলের নিগ্রহের কথা জানতে পারেন। ওই বিপর্যস্ত মা এএফপিকে বলেন, সে (ছেলে) আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। গত দু’বছর থেকে তার ওপর যৌন উৎপীড়ন চালানো হয়েছে। আজ আমি থানায় গিয়ে এজাহার দিয়ে এসেছি।
×