ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশকে কঠিন প্রতিপক্ষ ভাবছে অস্ট্রেলিয়া!

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ১২ আগস্ট ২০১৫

বাংলাদেশকে কঠিন প্রতিপক্ষ ভাবছে অস্ট্রেলিয়া!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এমনই অবস্থা হয়েছে অস্ট্রেলিয়া দলের, বিশ্বাস উধাও হয়ে গেছে। এখন বাংলাদেশকে নিয়েও গভীরভাবে ভাবতে হচ্ছে অস্ট্রেলিয়াকে। যে দলটি কোনদিনই বাংলাদেশের বিপক্ষে খেললে চিন্তা করত না। হেসে খেলে জেতার ভাবনাই থাকত মাথায়। সেই দলটি কিনা বাংলাদেশকে নিয়ে ভয় পাচ্ছে! এ ভয় বাংলাদেশ ক্রিকেটাররাই অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটারদের ভেতর ঢুকিয়ে দিতে পেরেছেন। দেশের মাটিতে যে দুর্বার বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। তাই তো স্টিভেন স্মিথ বলেছেন, ‘আমার মনে হয় বাংলাদেশ সফরটা কঠিন হবে। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের জন্য ওটা সত্যি সত্যিই বিদেশে খেলার মতো কঠিন হবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব ওখানকার (বাংলাদেশ) পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার পথ আমাদেরই খুঁজে বের করতে হবে। এখানে (ইংল্যান্ডে) পারিনি বলে ভাল করিনি। আশা করি, এবার পারব এবং বাংলাদেশে কিছু সাফল্য পাবও।’ এ্যাসেজে একের পর এক ম্যাচে আড়াইদিনেই হেরেও অসিরা নিজেদের ওপর থেকেই যেন বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে অক্টোবরে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলবে অস্ট্রেলিয়া। মাইকেল ক্লার্ক চলে যাওয়ার পর পুরোপুরিভাবেই অধিনায়কত্বে চলে আসছেন অস্ট্রেলিয়ার স্মিথ কাঁধে। এ্যাশেজের শোচনীয় পরাজয়ের গ্লানিই বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজটা সফরকারীদের জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে হতাশাজনক নৈপুণ্য হলে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটে ‘হায় হায়’ রবই উঠবে। ক্লার্কের সঙ্গে রায়ান হ্যারিস, ব্র্যাড হ্যাডিন, শেন ওয়াটসন ও ক্রিস রজার্সকেও দেখা যাবে না বাংলাদেশে। এমন নড়বড়ে অস্ট্রেলিয়াকে বহুদিন দেখেনি ক্রিকেট বিশ্ব। ৩২ টেস্ট খেলা স্মিথের ওপর তাই বিশাল দায়িত্ব দলটাকে ঠিকভাবে গুছিয়ে নেয়ার। প্রতিপক্ষের মাঠ বরাবরই সব দলের জন্য বড় পরীক্ষার ক্ষেত্র। বাংলাদেশেও সে পরীক্ষায় বসতে হবে বলে মনে করছেন স্মিথ। তাই সিরিজ শুরুর দেড় মাস আগেও বাংলাদেশের প্রতি যথেষ্ট সম্মান রেখে কথা বলছেন। অথচ এমন সম্মান এর আগে অস্ট্রেলিয়ান কোন ক্রিকেটারকেই দিতে দেখা যায়নি। তবে, এখনই অধিনায়ক হয়ে যাচ্ছেন স্মিথ তা নিশ্চিত নয়। নিজেই যেমন বলেছেন, ‘অধিনায়কত্বের বিষয়ে এখনও নিশ্চিত করে কিছু জানি না। তবে যা শুনছি, তা যদি সত্যি হয়, আমাকে অধিনায়কত্ব দেয়া হয়, তাহলে সেটা হবে বিশাল চ্যালেঞ্জ। কারণ পরের সফরে কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটারকে পাব না। এটা তো মোটেও ভাল খবর নয়। আবার অন্যভাবে যদি দেখি, তাহলে বিষয়টা অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের জন্য দারুণ রোমাঞ্চকর। অভিজ্ঞদের অনুপস্থিতিতে নতুন কিছু ক্রিকেটারকে পাওয়া যাবে।’ তবে স্মিথই যে নেতৃত্ব আসবেন, তা সবারই বোঝা হয়ে গেছে। ক্লার্কের অনুপস্থিতে এর আগেও দলের অধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে স্মিথকে। গত বছরের শেষদিকে ভারত সিরিজে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। সেবার ক্লার্কের চোটে নেতৃত্বে অভিষেক হয় তার। অধিনায়কত্বের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে তিন টেস্টের তিনটিতেই শতক হাঁকিয়েছিলেন স্মিথ। যেখানে অধিনায়ক হিসেবে তিন টেস্টে তার রান ছিল ৯২.৫০ গড়ে ৫৫৫। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা আসবে অস্ট্রেলিয়া। সবকিছু ঠিক থাকলে, স্টিভেন স্মিথের নেতৃত্বেই বাংলাদেশ সফরে আসতে পারে অসিরা। ৯ অক্টোবর থেকে চট্টগ্রামে প্রথম টেস্ট ও ১৭ অক্টোবর থেকে মিরপুরে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট শুরু হবে। এ্যাসেজের বাজে অবস্থা দূর করতে হলে বাংলাদেশের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার ভাল করতেই হবে। যদি এ্যাসেজে বাজে ফল না হতো, তাহলে ক্লার্ক নিশ্চয়ই বাংলাদেশ সফরে আসতেন। তবে এর আগে মাইকেল ক্লার্কের অবসর সবাইকে অবাকই করেছে। এ ক্রিকেটারকে বিশ্ব ক্রিকেট মিস করবে বলে যেমন বাংলাদেশ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানই বলেছেন। জানিয়েছেন, ‘ক্লার্ক একজন গ্রেট ক্রিকেটার। তিনি সেরা অধিনায়ক ও অসাধারণ একজন মানুষ। ক্রিকেট বিশ্ব তাকে প্রচুর মিস করবে। গত কয়েক মাসে আরও কয়েকজন ক্রিকেটার অবসরে গেছেন। আমরা তাদেরও মিস করি। অস্ট্রেলিয়ার সেরা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ক্লার্ক অন্যতম।’ ক্লার্ক অসিদের ৪৬ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আর ক্রিকেটে তিনি দীর্ঘ ১১ বছর সফলতার সঙ্গে কাটিয়েছেন। স্মিথকে নিয়ে সাকিব বলেছেন, ‘স্মিথ দারুণ একজন ক্রিকেটার। তিনি অধিনায়ক হিসেবেও প্রশংসনীয়। তবে আমরা এটি নিয়ে চিন্তা করছি না। আমাদের ফোকাসটা থাকবে নিজেদের পারফর্মেন্সের ওপর। ম্যাচে নিজেদের সেরা খেলাটাই উপরহার দেয়াটা আমাদের লক্ষ্য।’ বিদায় বেলায় ক্লার্ক বলেছিলেন, ‘আমি অসি দলের নেতৃত্ব দিতে পেরে গর্বিত। তবে আমি গত কয়েক মাসে নিজের পারফর্মেন্সে খুশি না। সুতরাং আমি অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং আমি চাই আমার জায়গায় ভাল একজন ক্রিকেটার আসুক।’ ক্রিকেটার আসতে সময় লাগবে। তবে অধিনায়ক আছেনই। তিনি আর কেউ নন, স্টিভেন স্মিথ। নিজেই বুঝছেন তাকে নেতৃত্ব দেয়া হবে। আর বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ দিয়েই স্থায়ী নেতৃত্বে বসতে যাচ্ছেন। এখনও সিরিজ শুরু হওয়ার প্রায় ২ মাস বাকি আছে। তবে এখন থেকেই তা নিয়ে ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন স্মিথ। তার কথায় এটাও বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশ সফরটি নিয়ে ভয়ে আছে অস্ট্রেলিয়া।
×