ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কোন্ কোন্ অঞ্চল দখলে নেবে, তা তুলে ধরে মানচিত্র প্রকাশ

পাঁচ বছরেই বিশ্ব দখল করতে চায় আইএস

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১২ আগস্ট ২০১৫

পাঁচ বছরেই বিশ্ব দখল  করতে চায় আইএস

নাজনীন আখতার ॥ উগ্র মৌলবাদী জঙ্গী সংগঠন দি ইসলামিক স্টেট অব ইরাক এ্যান্ড সিরিয়া (আইএসআইএস) বা আইএস আগামী ৫ বছরের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার পাশাপাশি বিশ্বের বেশিরভাগ অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারের পরিকল্পনা করেছে। বিশ্বব্যাপী ইসলামী শাসন ব্যবস্থা বা খেলাফত শাসন জারির পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০২০ সালের মধ্যে কিভাবে মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া এবং ইউরোপের বেশিরভাগ অঞ্চল দখল করে নেবে তা একটি মানচিত্রের মাধ্যমে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছে সংগঠনটি। ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার নামে হাজার হাজার ভিন্ন ধর্ম ও মুক্তমনাদের নৃশংসভাবে হত্যা করে ইতোমধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করেছে এই ধর্মান্ধ উগ্র সংগঠনটি। প্রভাবশালী গণমাধ্যম মিররে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইএসের পরিকল্পনা মানচিত্র অনুসারে আগামী ৫ বছরে অর্থাৎ ২০২০ সালের মধ্যে ইউরোপীয় দেশ পশ্চিমের স্পেন থেকে শুরু করে পূর্বের চীন পর্যন্ত যে কোনভাবে আধিপত্য বিস্তার করা হবে। মানচিত্র অনুসারে স্পেন, পর্তুগাল ও ফ্রান্সকে আরবী নাম আন্দালুস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অষ্টম থেকে পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত ওই তিন দেশের অঞ্চল বিশেষ আন্দালুস নামে মুরদের শাসন ব্যবস্থায় পরিচালিত হতো। ভারতীয় উপমহাদেশ মানচিত্রে চিহ্নিত হয়েছে খোরাসান নামে। বিবিসির প্রতিবেদক এ্যান্ড্রু হসকেন তার নতুন বই ‘ভয়ের সাম্রাজ্য: ইসলামী রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে’ শীর্ষক বইয়ে আইএসআইএসের লক্ষ্য ও মানচিত্র অন্তর্ভুক্ত করে বলেছেন, সংগঠনটি ইসলামী শাসন কায়েমের নামে পুরো বিশ্ব দখলে নিতে চায়। তারা বিশ্বকে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চায়। সাতটি ধাপে আইএসআইএস তাদের কর্মসূচী নির্ধারণ করেছে। যা প্রায় ২০ বছর আগে ১৯৯৬ সালে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার মনোভাবের ভিত্তিতে করা হয়েছে। আইএসআইএসের প্রতিষ্ঠাতা আবু মুসাব আল-জারকাওয়ির স্বপ্ন বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০২০ সালের মধ্যে জয় ছিনিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে তৈরি হয়েছে সাত ধাপের পরিকল্পনা বা কর্মসূচী। ২০০০ এবং ২০০৩ সালের মধ্যে ইরাকসহ কয়েকটি মুসলিম দেশ এবং ২০১০ ও ২০১৩ সালের মধ্যে কয়েকজন মুসলিম শাসকের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ ঘোষণার বিষয়টিও ওই কর্মসূচী বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রেক্ষাপট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আইএসআইএসের ৫০ হাজার সদস্য রয়েছে। সংগঠনটির নগদ অর্থ ও সম্পদ রয়েছে প্রায় ২ বিলিয়ন পাউন্ডের। ইরাক ও সিরিয়ার তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রের ওপর রয়েছে তাদের নিয়ন্ত্রণ। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মতবিরোধ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও আইএসআইএসের কাছে দুটোই চরম শত্রু রাষ্ট্র। এমন ৬০টি দেশকে তারা বিরোধী বা চরম শত্রু রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে। হসকেন তার বইয়ে আরও বলেছেন, আইএসআইএসের ৮০ শতাংশ নেতাকে আটক বা হত্যার মধ্য দিয়ে একটি খ-ের মাত্র সমাপ্তি টানা হয়েছে। তাদের পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করা যায়নি। তারা ফিরে এসেছে ক্যান্সারের মতো। উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরাক দখলে নেয়ার পর আইএস জন্ম লাভ করে। আল কায়েদা ও আইএস ইরাক ও সিরিয়ায় চারটি ধাপে আধিপত্য বিস্তার করে। প্রথম ধাপ হিসেবে উল্লেখ করা হয় ২০০৪ থেকে ২০০৬ সালকে। ওই সময়ে ইরাকে আল কায়েদার শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। সেটির নেতৃত্বে ছিলেন আবু মুসাব আল-জারকাওয়ি। আল-কায়েদা ইন মেসোপটামিয়া নামের ওই দলটি ইরাকে আমেরিকা ও তাদের যৌথ বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করে। ২০০৬ সালের জুন মাসে জারকাওয়িকে আমেরিকা হত্যা করার পর প্রথম ধাপের সমাপ্তি ঘটে। দ্বিতীয় ধাপটি চলে ২০০৬ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত। ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক (আইএসআই) নামে সংগঠনটি কয়েকটি জিহাদী সংগঠনের নেটওয়ার্ক হিসেবে আমেরিকা ও যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। তবে ওই সংগঠনটি আমেরিকার নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর কৌশলের কাছে দুর্বল হয়ে পড়ে। তৃতীয় ধাপটি চলে ২০১২ সাল থেকে ২০১৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত। ওই সময় আইএসআইকে শক্তিশালী করা হয় এবং প্রতিষ্ঠিত হয় আইএসআইএস। যৌথবাহিনী সেখান থেকে সরিয়ে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে আইএসআই শক্তিশালী হয়ে পড়ে। সিরিয়া যুদ্ধের সময় আইএসআই সিরিয়ায় আল-নুসরা ফ্রন্ট নামে একটি শাখা প্রতিষ্ঠা করে। আইএসআই এবং এর সিরিয়া শাখার মধ্যে সিদ্ধান্ত তৈরিতে মতভেদ দেখা দেয়ায় আইএসআই এবং আল কায়েদার সম্পর্কে ফাটল তৈরি হয়। আর সেই সময়েই জন্ম নেয় ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক এ্যান্ড গ্রেটার সিরিয়া (আইএসআইএস)। আইএসের চতুর্থ ও সর্বশেষ ধাপটি শুরু হয় ২০১৪ সালের জুন মাস থেকে। আইএসআইএস ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগর মসুল তাদের দখলে নিয়ে যায়। একই সময়ে আইএসআইএস সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। সেখানে আল-রাক্কাহকে রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করে একটি সরকার কাঠামো তৈরি করে। সংগঠনের ক্রমবর্ধআন সাফল্যে আইএসআইএস ইসলামিক স্টেট (আইএস) বা ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করে। যার নেতৃত্ব দেন আইএসআইএস নেতা আবু বকর আল-বাগদাদী। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বব্যাপী তা প্রচার শুরু করে।
×