ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চার্জশীটে চার জনের নাম উল্লেখ;###;সবাই আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য

ব্লগার বাবু হত্যার চার্জশীট চলতি সপ্তাহেই

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১২ আগস্ট ২০১৫

ব্লগার বাবু হত্যার চার্জশীট চলতি সপ্তাহেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ব্লগার রাজীব ও বুয়েট ছাত্র দ্বীপের পর এবার ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চার্জশীট দিতে যাচ্ছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পাশাপাশি নিলাদ্রী চট্টোপাধ্যায় নিলয় হত্যাকাণ্ডের জোরালো তদন্ত চলছে। যদিও নিলয় হত্যার ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি। তদন্তকারী সংস্থা ডিবি পুলিশ আশা করছে, দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চার্জশীটে চারজনের নাম উল্লেখ থাকছে। আর অজ্ঞাত হিসেবেই উল্লেখ করা হচ্ছে আরও কয়েকজন। চার্জশীটে নাম উল্লেখ থাকা চারজনের মধ্যে একজন পলাতক রয়েছে। হত্যাকারীরা নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য বলে চার্জশীটে উল্লেখ করা হচ্ছে। যদিও চার্জশীটে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনটির আধ্যাত্মিক নেতা মুফতি জসীমুদ্দিন রাহমানীর নাম উল্লেখ করা হচ্ছে না। চলতি বছরের ৩০ মার্চ রাজধানীর রমনা মডেল থানাধীন হাতিরঝিল বেগুনবাড়িতে দিনের বেলায় ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার পর পালানোর সময় জনতা আরিফুল ইসলাম ও জিকরুল্লাহ নামের সদ্য কিশোর থেকে যৌবনে পা দেয়া দুই মাদ্রাসার ছাত্রকে চাপাতিসহ হাতেনাতে ধরে ফেলে। গণধোলাই শেষে তাদের পুলিশে সোর্পদ করা হয়। তাদের একজন চট্টগ্রাম হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্র। অপরজন ঢাকার যাত্রাবাড়ীর একটি মাদ্রাসার ছাত্র। মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃতরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। জবানবন্দীতে তারা ঈমানী দায়িত্ব পালন করতেই বাবুকে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে। হত্যার জন্য তারা অনুতপ্ত নয়। তারা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃতদের তথ্যমতে যাত্রাবাড়ী থেকে গ্রেফতার করা হয় সাইফুল ইসলাম নামের আরেক জনকে। সাইফুল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। জবানবন্দীতে ঈমানী দায়িত্ব পালন করতেই বাবুকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানায়। হত্যাকা-ের জন্য মানসিকভাবে কোন অনুতাপ অনুভব করে না। হত্যাকা-ের সঙ্গে আরও একজন জড়িত। মোট চারজনে হত্যাকা-ের ঘটনাটি ঘটায়। হত্যাকা-ে সরাসরি জড়িত ওই আসামি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেলেও তাকে মঙ্গলবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গ্রেফতার হয়নি। ডিবি পুলিশ বলছে, স্বল্প সময়ের মধ্যেই ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যাকা-ের চার্জশীট দাখিল করা হচ্ছে। তদন্ত প্রায় শেষ। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই আদালতে চার্জশীট দাখিলের প্রস্তুতিও রয়েছে। চার্জশীটে হত্যাকা-ে জড়িত চারজনের নাম উল্লেখ করা হচ্ছে। এছাড়া অজ্ঞাত হিসেবে চার্জশীটে কয়েকজনের নামও উল্লেখ থাকছে। হত্যাকারীরা নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য বলে চার্জশীটে বলা হচ্ছে। জঙ্গী সংগঠনটির আধ্যাত্মিক নেতা মুফতি জসীমুদ্দিন রাহমানী হত্যাকা-ের সময় কারাগারে থাকায় তাকে এ মামলায় আসামি করা হচ্ছে না। ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, স্বল্প সময়ের মধ্যেই ব্লগার বাবু হত্যাকা-ের চার্জশীট দাখিল করা হচ্ছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই বাবু হত্যাকা-ের চার্জশীট দাখিলের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি। এর আগে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার সবোর্চ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠা শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক ও ব্লগার প্রকৌশলী রাজীব হায়দার শোভনকে (৩৭) ওই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি হত্যা করা হয়। রাজীব হত্যায় ওই বছরের ১ মার্চ গ্রেফতার হয় রাজধানীর বনানীস্থ বেসরকারী নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল এ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন বিভাগের ছাত্র ফয়সাল বিন নাঈম ওরফে দ্বীপ (২২), এহসান রেজা ওরফে রম্মন (২৩), মাকসুদুল হাসান ওরফে অনিক (২৩), নাঈম শিকদার ওরফে ইরাদ (১৯), নাফিজ ইমতিয়াজ (২২) ও সাদমান ইয়াছির মাহমুদ (২০)। প্রথম দফায় গ্রেফতারকৃত ৫ জন আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানায়, ঈমানী দায়িত্ব পালন করতেই রাজীবকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার জন্য তারা অনুতপ্ত নয়। রাজীব হত্যার অন্যতম আসামি রেদোয়ানুল আজাদ রানা (৩০) পলাতক রয়েছে। রাজীব হত্যা মামলায় ৭ ছাত্র ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের আধ্যাত্মিক নেতা মুফতি জসীমুদ্দিন রাহমানীকে আসামি করে আদালতে চার্জশীট দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। চার্জশীটে বলা হয়, জসীমুদ্দিন রাহমানির বই পড়ে এবং সরাসরি তার বয়ান ও খুতবায় অংশ নিয়ে ‘নাস্তি¡ক ব্লগারদের হত্যা করতে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত হয় আসামিরা। রাহমানি ব্লগার রাজিব হত্যার উৎসাহদাতা। এছাড়া ২০১৩ সালের গত ৯ এপ্রিল দিনদুপুরে বুয়েটের ছাত্রলীগ নেতা ও যন্ত্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের আবাসিক ছাত্র ব্লগার আরিফ রায়হান দ্বীপকে নিজ কক্ষ ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে হত্যাকারী বুয়েট ছাত্র মেজবাহ উদ্দিন গ্রেফতার হয়ে আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানায়, ঈমানী দায়িত্ব পালন করতেই দ্বীপকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার জন্য তিনি অনুতপ্ত নন। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের আধ্যাত্মিক নেতা মুফতি জসীমুদ্দিন রাহমানীর বয়ানে অনুপ্রাণিত হয়ে দ্বীপকে হত্যা করা হয় বলেও দায়েরকৃত চার্জশীটে উল্লেখ করা হয়। এদিকে গত ৭ আগস্ট শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে রাজধানীর খিলগাঁও থানাধীন পূর্ব গোড়ানের ৮ নম্বর সড়কের ১৬৭ নম্বরের পাঁচতলা বাড়ির পঞ্চমতলার পূর্বদিকের নিজ বাসায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় নিলয়কে। বাড়ি ভাড়া নেয়ার কথা বলে ঘরে ঢুকে চার জন নিলয়কে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা বলছে, ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহিত আলামতের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। খুনীদের ফেলে যাওয়া রক্তমাখা টি-শার্টসহ অন্যান্য আলামতের ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে খুনীদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়া চলমান আছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তদন্তে সার্বিক সহায়তা করছে। নিলয় হত্যাকা-ের সঙ্গে অভিজিত হত্যাকা-ের মিল খোঁজে পেয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (এফবিআই)। এজন্য নিলয় হত্যাকা-ের তদন্তে সহায়তা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে এফবিআই। ধারণা করা হচ্ছে, নিলয় হত্যাকা-ের জট খোলা সম্ভব হলে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক লেখক ব্লগার প্রকৌশলী অভিজিত রায় হত্যাকা-েরও জট খুলে যেতে পারে। এমনকি অভিজিত রায় হত্যাকা-ের জট খুললে নিলয় হত্যাকা-ের রহস্য উন্মোচিত হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। দুই হত্যাকা-ের সঙ্গে যথেষ্ট মিল রয়েছে। অভিজিত হত্যাকা-ে জড়িত ৭ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন জনের ছবি পাওয়া গেছে। তাদের একজনকেও গ্রেফতার করা সম্ভব হলে দুইটি মামলারই এমনকি আরও ব্লগার হত্যার রহস্যের জট খুলে যাওয়াও বিচিত্র নয়।
×