ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কক্সবাজার রাডার স্টেশন চরম ঝুঁকিতে ॥ ফের পাহাড় ধসের শঙ্কা

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১২ আগস্ট ২০১৫

কক্সবাজার রাডার স্টেশন চরম ঝুঁকিতে ॥ ফের পাহাড় ধসের শঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ জাপানের অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তায় ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কক্সবাজার শহরের অত্যাধুনিক ডপলার রাডার স্টেশন চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এটি পাহাড়ের চূড়ায় হওয়ায় পাহাড় ধসের যে কোন মুহূর্তে প্রাণহানিসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে বলে সচেতন মহল মনে করছে। গত ২৭ জুলাই রাতে রাডার স্টেশনটির পশ্চিম পাশের একাংশ পাহাড়ের পাদদেশের বসতবাড়িতে ধসে পড়লে নারী-শিশুসহ ৫ জন নিহত হয়। ধসে পড়া মাটি ও স্থাপনার অংশবিশেষ এখনও চাপা পড়ে আছে বেশ কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্ত বসতির ওপর। ফের পাহাড় ধসে পড়ার ঝুঁকি এড়াতে রাডার স্টেশন কর্তৃপক্ষ নামমাত্র পলিথিন দিয়ে ধসে যাওয়া অংশ ঢেকে রেখেছে। এতে করে একদিকে ঝুঁকিতে রয়েছে রাডার স্টেশনের মূল স্থাপনা, অপরদিকে ফের পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঝুঁকিতে রয়েছে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত বিপুল সংখ্যক বাসিন্দা। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাডার স্টেশন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা ও নিম্নমানের গাইডওয়াল নির্মাণের কারণেই পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। ঘটনার এক মাস আগে ফাটল ধরলেও আগেভাগে কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বরং ফাটল ধরা জায়গায় নালা করে দিয়ে পানি চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। এতে করে পাহাড় ধসে পড়ে প্রাণহানি ঘটেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলায় ফের ধসের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কক্সবাজার রাডার স্টেশন সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজারে অত্যাধুনিক ডপলার রাডার স্টেশন স্থাপন করা হয়। জাপানের অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তায় নির্মিত এই রাডার স্টেশন থেকে বাংলাদেশের আবহাওয়ার অবস্থান, পূর্বাভাস দেয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আবহাওয়া বার্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু পাহাড় ধসের শঙ্কায় রাডার স্টেশনের পশ্চিম পাশের পাহাড়ের ঢালুতে নির্মাণ করা হয় তিন স্তরের গাইডওয়াল। গাইডওয়াল দিয়ে রাডার স্টেশন রক্ষার চেষ্টা এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাডার স্টেশন কর্তৃপক্ষ পাহাড় ধসের ঝুঁকি থেকে রাডারটি রক্ষা করতে পশ্চিম পার্শ্বের পাহাড়ের ঢালুতে পাইলিং দিয়ে তিন স্তরের গাইডওয়াল নির্মাণ করে। গত ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে নির্মাণের জন্য কাজটি গণপূর্ত বিভাগকে হস্তান্তর করে রাডার কর্তৃপক্ষ। পরে গণপূর্ত বিভাগ গাইডওয়াল নির্মাণ কাজের দরপত্র আহ্বান করে। এতে কক্সবাজার গণপূর্ত অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে নির্মিত কাজটি পায় চট্টগ্রামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনুচ এ্যান্ড ব্রাদার্স। পরে ইউনুচ এ্যান্ড ব্রাদার্স নামের ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে কাজটি কিনে নেন কক্সবাজার জালাল আহমদ নামের একজন ঠিকাদার। পরে জালাল আহমদ রাডার স্টেশনের ওই তিনস্তরের গাইডওয়ালগুলো মাইক্রোপাইলিং ও গর্ত করে নামমাত্র নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে তড়িঘড়ি করে কাজ সমাপ্ত করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এখানে নিয়মনীতির উর্ধে গিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন সাব-কন্ট্রাক্টর ও এক শ্রেণীর দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা। এমনকি পিলারগুলো যত গভীরে যাওয়া দরকার-ততটুকু না গিয়ে নামমাত্র গর্ত করে পিলার দিয়ে এর ওপর মাটি চাপা দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ভিন্ন স্থান থেকে উল্টো মাটি এনে তাতে চাপা দেয়া হয়। এতে করে একদিকে অতিরিক্ত মাটি দেয়ায় গাইডওয়াল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। অপরিকল্পিত পাইলিংয়ের কারণে বর্তমানে পাহাড়ে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় পাহাড়ের ঢালু অংশটি দুর্বল হয়ে যায়। যার কারণে রাডারের পাহাড়টির অংশ বিশেষ ধসে পড়ে বলে মনে করেন স্থানীয় লোকজন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাডার স্টেশন কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অবহেলার কারণেই পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। পাইলিং করার সময় পুরো পাহাড়ে ফাটল ধরেছিল। আর ওই ফাটলে ভারি বর্ষণে পানি ঢুকে পাহাড়টি ধসে পড়ে। গণপূর্ত বিভাগের একজন কর্মচারী জানান, জালাল আহমদ একটি সিন্ডিকেট করে গণপূর্তের বেশিরভাগ কাজ হাতিয়ে নেন। পরে এসব কাজ নিম্নœমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করায় প্রায় সময়ই তার কাজ নিয়ে অভিযোগ উঠে। আর রাডার স্টেশনের কাজটিতেও একইভাবে কারচুপি করেছেন তিনি। কক্সবাজার গণপূর্ত কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে রাডার স্টেশনের পাহাড়গুলো রক্ষার জন্য নির্মিত গাইডওয়াল নির্মাণ কাজ তদারকির দায়িত্ব পান উপ-সহকারী প্রকৌশলী নেয়ামত এলাহী। তিনি জানান, তিনস্তরের গাইডওয়াল রাডার স্টেশনের পাহাড়টি রক্ষা করার জন্য নির্মাণ করা হয়। ওই গাইডওয়াল নির্মাণের জন্য রাডার কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে নক্সা দেয়া হয়। সেই অনুসারে তিনস্তরের গাইডওয়াল মাইক্রোপাইলিং করে নির্মাণ করা হয়েছে। এতে কোন ধরনের ত্রুটি হয়নি বলে দাবি তার। তবে অভিযোগ উঠেছে গাইডওয়াল নির্মাণ বাস্তবায়নকারী ঠিকাদার মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী নেয়ামত এলাহীকে ম্যানেজ করে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ শেষ করেছে।
×