ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিল্পাঙ্গনে প্রশান্ত কর্মকারের চিত্রকর্ম প্রদর্শনী অনুস্মৃতি

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১২ আগস্ট ২০১৫

শিল্পাঙ্গনে প্রশান্ত কর্মকারের চিত্রকর্ম প্রদর্শনী অনুস্মৃতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সৃজনের অন্বেষায় দেশের নানা প্রান্ত চষে বেড়ান চিত্রকর প্রশান্ত কর্মকার বুদ্ধ। আর সেই ঘুরে বেড়ানোর স্মৃতিগুলো উঠে আসে তাঁর ক্যানভাসে। রং আর রেখায় চিত্রিত করেন চলতি পথে মনে দাগ কেটে যাওয়া বিষয়গুলো। সেই সঙ্গে সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বব্যবস্থার নানা মানবিক অসঙ্গতি এসে জুড়ে যায় চিত্রপটে। এমনকি রাষ্ট্রের অবহেলায় ইতিহাস-ঐতিহ্যের ক্ষয়িষ্ণুতার বিরুদ্ধেও প্রতিবাদী হয়ে ওঠে তাঁর রং-তুলি। সব মিলে তাঁর ছবিগুলো যেন কড়া নেড়ে যায় শিল্পানুরাগীর ভাবনার ভুবনে। তেমনই কিছু চিত্রকর্ম নিয়ে ধানম-ির গ্যালারি শিল্পাঙ্গনে চলছে এই শিল্পীর প্রদর্শনী। শিরোনাম অনুস্মৃতি। প্রদর্শনালয়টির দেয়ালজুড়ে ঝুলছে বৈচিত্র্যময় বিষয়ের চিত্রকর্ম। প্রথমেই চোখ পড়ে যায় খেয়া পারাপার শিরোনামের ছবিতে। শরতের নীলাকাশে ভাসছে মেঘের ভেলা। জমিনজুড়ে টইটুম্বুর ছেয়ে আছে জলে ভরা বহতা নদী। সেই নদীতে স্রোত কেটে এগিয়ে চলেছে ছোট্ট খেয়া নৌকা। যাত্রীতে পরিপূর্ণ জলজ যানটি ধাবিত হচ্ছে গন্তব্যের পথে। কয়েকটি ছবিতে দেখা মেলে ইতিহাসের সাক্ষী সোনারগাঁয়ের পানাম নগরীর অবহেলিত জরাজীর্ণ ভবনের ক্ষয়ে যাওয়া দরজা। যতেœর অভাবে মরচে পড়া সেই দরজাগুলোয় আবার ঝুলছে তালা। ছবিগুলো যেন বলে যায় ইতিহাসকে চাপা দিয়ে রেখো না, সবার জন্য খুলে দাও দ্বার। বাদামি রঙের প্রলেপে চিত্রিত হয়েছে প্রতীক্ষা শীর্ষক ছবিটির জমিন। বড় পরিসরের স্পেসের ভেতরে দৃশ্যমান সবুজ ও লাল রঙের ১১টি চেয়ার। অশান্ত বিশ্বে নেতৃত্ব দেয়ার মতো নেতার অভাবে শূন্যতা ভর করেছে চেয়ারগুলোয়। চিত্রভাষ্যে উপস্থাপিত হয়েছে সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া শিশু হত্যা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ। জলাশয়ে ভাসতে থাকা তিনটি পদ্মফুলকে শিল্পী তুলনা করেছেন নিষ্পাপ শিশুদের অবয়ব হিসেবে। প্রযুক্তির প্রতি অতিমাত্রায় আসক্তিতে নতুন প্রজন্ম এখন আর চোখ রাখে না বইয়ের পাতায়Ñ এমন ভাবনার উল্টো পিঠে প্রশান্তর ক্যানভাসে উঠে এসেছে বইভর্তি বুকশেলফ। এভাবেই শিল্পী রং-তুলির আশ্রয়ে ছবির ভাষায় বলে গেছেন মনোজগতের ভাবনাতাড়িত না বলা নানা কথা। মিশ্র মাধ্যমে চিত্রিত ৫০টি চিত্রকর্ম দিয়ে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনী। ৭ আগস্ট থেকে শুরু বারো দিনের এ প্রদর্শনী শেষ ১৮ আগস্ট। প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। ‘চিত্র গাঁথায় শোকগাথা’ ॥ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুষ্প্রাপ্য বেশকিছু ছবি একটি বিশেষ প্রদর্শনী হতে যাচ্ছে। কাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শুরু হচ্ছে তিন দিনের এই প্রদর্শনী। ‘চিত্র গাঁথায় শোকগাথা’ শিরোনামের প্রদর্শনীটি চলবে ১৩ থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত। নতুন প্রজন্মকে উৎসর্গ করা প্রদর্শনীটির আয়োজক ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় প্রদর্শনী উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে এ প্রদর্শনীতে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ছবিগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে সিআরআই, বিভিন্ন স্টুডিও, আর্কাইভ ও তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের কাছ থেকে। এর পাশাপাশি প্রদর্শনীতে থাকবে দেশবরেণ্য চিত্রশিল্পীদের আঁকা ছবি। মঙ্গলবার বিকেলে মহাখালীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। সংবাদ সম্মেলনে আনিসুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেও ছবিগুলো দেখেছেন এবং প্রদর্শনীর জন্য মনোনীত করতে সাহায্য করেছেন। ইতোমধ্যে দুইশ ছবির প্রিন্ট করা হয়েছে। এই ছবিগুলোর মধ্য থেকে প্রদর্শনীতে স্থান পাবে দেড়শ ছবি। আনিসুল হক সর্বস্তরের মানুষকে এই প্রদর্শনী দেখতে আসার আহ্বান জানান এবং প্রদর্শনী দেখতে আসার সুবিধার্থে ১৫ আগস্ট সংসদ ভবন এলাকায় রিক্সা চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার অনুরোধ করেন। উদ্বোধনী দিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে সর্বসাধারণের জন্য এটি উন্মুুক্ত করে দেয়া হবে। ১৪ ও ১৫ আগস্ট প্রদর্শনী দেখা যাবে যথাক্রমে বেলা ৩টা থেকে ১০টা এবং সকাল ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। প্রদর্শনীর পর এই ছবিগুলো রাখা হবে জাতীয় জাদুঘরে। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের বরাত দিয়ে আনিসুল হক আরও জানান, ছবিগুলো নিয়ে ঢাকার বাইরেও প্রদর্শনীর পরিকল্পনা রয়েছে। তারেক মাসুদ-মিশুক মুনীর স্মরণানুষ্ঠান কাল ॥ বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অনন্য এক নাম তারেক মাসুদ। চলচ্চিত্রের ফেরিওয়ালা হিসেবে খ্যাত এই নির্মাতা বাংলা ছবির ভুবনে আবির্ভূত হয়েছিলেন উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে। মাটির ময়না ছবি নির্মাণের মাধ্যমে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে জয় করে নিয়েছিলেন কান চলচ্চিত্র উৎসবের সমালোচক পুরস্কার। আর তাঁর যৌগ্য সহচর ছিলেন চলচ্চিত্রগ্রাহক মিশুক মুনীর। কাগজের ফুল নামের একটি ছবির স্পট নির্বাচিত করে মানিকগঞ্জ থেকে ঘরে ফেরার অনাকাক্সিক্ষত এক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান কীর্তিমান এই দুই ব্যক্তিসহ তিন চলচ্চিত্রকর্মী। কাল বৃহস্পতিবার তারেক ও মিশুকের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও স্মরণসভায় সাজানো এ অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশ (এফএফএসবি) ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিকেল সাড়ে ৪টায় তারেক মাসুদ নির্মিত চলচ্চিত্র ‘রানওয়ে’ এবং সন্ধ্যা ৬টায় স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নরসুন্দর’ প্রদর্শিত হবে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীরসহ নিহত চলচ্চিত্রকর্মীদের স্মরণে মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বলন করা হবে। সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় অনুষ্ঠিত হবে স্মরণসভা। স্মরণসভা শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় দেখানো হবে পথিকৃৎ চিত্রশিল্পী এস এম সুলতাকে নিয়ে তারেক মাসুদ নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘আদম সুরত’।
×