ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সেমিনারে সিডিপি চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান ;###;আর দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, এটি খুবই খারাপ কাজ হয়েছে

শর্ত পূরণ করেও কেন জিএসপি নয়, বলতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৩ আগস্ট ২০১৫

শর্ত পূরণ করেও কেন জিএসপি নয়, বলতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ‘গরু-ছাগল’ এদেরকেও জিএসপি সুবিধা দেয়া হয়েছে। অথচ জিএসপিপ্রাপ্ত অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে থাকার পরও প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, শর্তপূরণের পরও ঠিক কী কারণে বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা দেয়া হয়নি তা যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে দেখাতে হবে। অন্যদিকে বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা না দেয়া খুবই খারাপ কাজ বলে অভিহিত করেছেন সিপিডির সম্মানিত ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তবে সম্পূর্ণটা রাজনৈতিক বানানো উচিত নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ এমন কোন খারাপ অবস্থায় রয়েছে যে, তাদের প্রতি এই অবিচার করা হয়েছে। তবে এতে হতাশ হয়ে এটিকে (জিএসপি) ছেড়ে দেয়ার কোন কারণ নেই বলেও দাবি করেন তিনি। ‘বাংলাদেশের পোশাক খাত : কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে প্রাপ্ত মূল্য কী পর্যাপ্ত’ শীর্ষক এক সংলাপে তারা এসব কথা বলেন। বুধবার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক-ইন সেন্টারে সিপিডি ও এফইএসের যৌথ আয়োজনে সেমিনারটির আয়োজন করা হয়। সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সঞ্চালনায় সংলাপে আরও বক্তব্য রাখেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মিকাইল শিপার, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান সিনহা, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফর উল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ। সংলাপে ‘বাংলাদেশের পোশাক খাত : কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে প্রাপ্ত মূল্য কী পর্যাপ্ত’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। গবেষণা প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, দেশের ৩০-৪০ শতাংশ বড় ও মাঝারি কারখানার কাজের পরিবেশ, নিরাপত্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা বেশ ভাল। যে ফ্যাক্টরিগুলো কমপ্লায়েন্স হিসেবে পরিচিত। তবে ছোট ও সাব কন্ট্রাক্টে কাজ করার যে সব ফ্যাক্টরি রয়েছে তাদের মধ্যে এগুলোর অনেক গ্যাপ রয়েছে। তবে কমপ্লায়েন্সের মধ্যে থেকে কাজ করে যে সব উদ্যোক্তা তারাও বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় পোশাকের দাম পায় সবচেয়ে কম। তবে এখানে বাংলাদেশের উৎপাদন ও অ-উৎপাদনশীল পণ্যে যে পরিমাণ খরচ হয় তা প্রতিযোগী দেশ চায়না, ভিয়েতনাম, মেক্সিকো, হন্ডুরাজ, হাইতিসহ বিভিন্ন দেশের তুলনায় সবচেয়ে কম। আর বাংলাদেশের যে পরিমাণ পোশাক কারখানা রানা প্লাজার পরবর্তী সময়ে কমপ্লায়েন্সের পেছনে যতটা খরচ করেছে তার তুলনায় পোশাকের দাম বাড়েনি, বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে দাম কমানোর চাপ এসেছে বলে জানানো হয়। তবে এই কারণে শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা যাতে না কমে অর্থাৎ কর্মপরিবেশে কমপ্লায়েন্স যাতে থাকে সে বিষয় থেকে সরে আসার কোন সুযোগ নেই বলে জানালেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, কমপ্লায়েন্স নিয়ে দরকষাকষির কোন সুযোগ নেই। তবে দেখতে হবে শ্রমিকের সুবিধা যাতে না কমে। উদ্যোক্তারা চাইলে ক্রেতাদের সঙ্গে দরকষাকষি করতে পারে। শ্রমসচিব মিকাইল শিপার বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাক খাতের বড় কন্ট্রিবিউশন রয়েছে যা কিনা অস্বীকার করার উপায় নেই। এ খাতটি দেশের জিডিপিতে প্রায় ৩০ শতাংশ অবদান রাখে। সুতরাং সরকার এ খাতকে আরও উন্নত করতে বদ্ধপরিকর। শিপার বলেন, আমরা কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে অনেক কাজ করেছি। শ্রমিকদের প্রডাক্টিভিটি বাড়াতে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন কাজ করছি, যা বিভিন্ন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানও করছে। আমরা শ্রম আইনে শ্রমিকদের নিরাপদ করার চেষ্টা করেছি। এসব করার একটাই কারণ এ খাতটিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। সরকার এ খাতের পাশে ছিল, আগামীতেও সবসময় থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। রেহমান সোবহান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধাপ্রাপ্ত ১২৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের থাকা উচিত ছিল। বাংলাদেশ নিজের সক্ষমতা ও দায়িত্ব পালন করে যাবে অথচ সুবিধা পাবে না। এভাবে কোন অর্জনই ভাল হয় না। তিনি বলেন, ‘গরু-ছাগল’ এদেরও জিএসপি সুবিধা দেয়া হয়েছে। অথচ বাংলাদেশেরটি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। শর্তপূরণের পরও ঠিক কী কারণে বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা দেয়া হয়নি তা যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে দেখাতে হবে। জিএসপির বিষয়ে সিপিডির সম্মানিত ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা না দেয়া খুবই খারাপ কাজ হয়েছে। তবে সম্পূর্ণটা রাজনৈতিক বানানো উচিত নয়। অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ এমন কোন খারাপ অবস্থায় রয়েছে যে, তাদের প্রতি এই অবিচার করা হয়েছে। তবে এতে হতাশ হয়ে এটিকে (জিএসপি) ছেড়ে দেয়ার কোন কারণ নেই। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আন্তর্জাতিক বিশ্বে যেসব নিয়ম-নীতি আছে তার মধ্যে জিএসপি বাংলাদেশের ন্যায্য পাওনার একটি। ন্যায্য পাওনার বিষয়কে রাগ অভিমান করে ছেড়ে দেয়া ঠিক না। দেবপ্রিয় বলেন, উদ্যোক্তাদের ফ্যাক্টরিতে কমপ্লায়েন্স তৈরিতে কাজ করবে এর জন্য সরকারের একটা সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন জরুরী। সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে সুদের হার কমিয়ে। জায়গা, গ্যাস-বিদ্যুত দিয়ে তাদের সহযোগিতা করা। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে তাদের বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক আলোচনার সুযোগ তৈরি করে দেয়া। কারণ কেউ যখন বিনিয়োগ করে তা তো আর এক-দুবছরের জন্য করা হয় না। অবশ্যই মধ্যমেয়াদি একটা পরিকল্পনা নিয়েই তো যাওয়া যায় না। এটাও দেখতে হবে। তবে মধ্যমেয়াদি বিনিয়োগ করে উদ্যোক্তাদের যে চাহিদা থাকবে সেটার বিষয়ে কোন নিশ্চয়তা নেই উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, বাজার ব্যবস্থা যদি হয় দীর্ঘমেয়াদি আর বিনিয়োগ করতে বলা হলো দীর্ঘমেয়াদি তবে তো একটা বিস্তর ফারাক তৈরি হয়ে যাবে। যদিও কমপ্লায়েন্স হলেই যে উদ্যোক্তারা লাভ করতে পারবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। আর কমপ্লায়েন্স তৈরিতে ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের যদি বিভিন্ন অবকাঠামোগত সুবিধা না দেয়া হয় তবে তারা এ ধাক্কা সামলে ঠিকে থাকতে পারবে কি না সেটা একটা চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেন তিনি। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত, শ্রমিক নেতাসহ আর অনেকে।
×