ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

উচ্চ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা ॥ কেউ বেতন ভাতা পাচ্ছেন না

মাস্টাররোলে ৩৯ কর্মচারীর মানবেতর জীবন

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ১৩ আগস্ট ২০১৫

মাস্টাররোলে ৩৯ কর্মচারীর মানবেতর জীবন

নিজস্ব সংবাদদাতা জামালপুর, ১২ আগস্ট ॥ উচ্চ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে জামালপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরে (এলজিইডি) দীর্ঘদিন ধরে মাস্টাররোলে কর্মরত ৩৯ কর্মচারীর চাকরি অত্মীকরণ করা হয়নি। কর্মচারীদের বকেয়া বেতনও পরিশোধ করা হয়নি। কর্মচারীর মধ্যে ২০ থেকে ২৫ বছর যাবত মাস্টাররোলে কাজ করছেন এমন কর্মচারীও রয়েছেন। গত এক বছর যাবত তারা কোন বেতন-ভাতা না পেয়ে চরম কষ্টের মধ্য দিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। জানা গেছে, জামালপুরসহ সারাদেশে এলজিইডির মাস্টাররোলে কর্মরত আছেন এমন কর্মচারীর সংখ্যা মোট ৮৯০ জন। যাদের চাকরি এখনও আত্মীকরণ হয়নি। চাকরি আত্মীকরণ ও বকেয়া বেতন-ভাতাদি না পাওয়ায় এসব র্কমচারীর মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ। তারা এ দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বৃহত্তর আন্দোলন-কর্মসূচির দিকে যাচ্ছেন। জানা যায়, জামালপুরে এলজিইডিতে মাস্টাররোলে কর্মরত কর্মচারীর মধ্যে গাড়ি চালক, রোলার চালক, অফিস সহকারী, হিসাব সহকারী, কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহায়ক ও নইটগার্ড পদে কাজ করছেন। এদের মধ্যে দীর্ঘ ২০ থেকে ২৫ বছর যাবত কাজ করছেন এমন কর্মচারীও রয়েছেন। প্রতি কর্মদিবসে ২২২ টাকা হিসেবে বেতন দেয়া হলেও তাও আবার বিগত এক বছর ধরে রয়েছে বকেয়া। গত ঈদ-উল-ফিতরে উৎসবেও তাদের কোন উৎসব ভাতা-বেতন প্রদান করা হয়নি। জামালপুর এলজিইডির রোলার চালক হযরত আলী জানান, এ ব্যাপারে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করা হলে হাইকোর্ট ২০১১ সালের ১৬ নবেম্বর কর্মচারীদের পক্ষে নিয়োগ প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করেন। বিষয়টি নিয়ে পরে সুপ্রীমকোর্টে আপীল করা হলে সুপ্রীমকোর্ট ২০১৩ সালের ৭ এপ্রিল রায় প্রদান করেন। ওই রায়ে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ বহাল রাখা হয়। এর প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব প্রধান প্রকৌশলীকে আদালতের নির্দেশনা ও শর্তসমূহ পূরণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের আওতায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কর্মরত দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর বিভিন্ন পদের ৮৯০ কর্মচারীকে রাজস্ব খাতে শূন্য পদে আত্মীকরণের/নিয়মিতকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত আদালত ও সহকারী সচিবের ওই নির্দেশ কার্যকর হয়নি। ১৯৯১ সালে জামালপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে রোলার চালক পদে যোগ দেন গোলাম মোস্তফা। তিনি জানান, একমাত্র ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে। অর্থ সঙ্কটে লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম হয়েছে। তিনি বলেন, চাকরি অত্মীকরণ হবে হবে আশায় ২৪ বছর কেটে গেল। এখন জীবনের শেষপ্রান্তে এসেও চাকরি নিয়মিত হচ্ছে না। বেতন ভাতাও পাচ্ছে না। তিনি বলেন, তার সহকর্মীদের দু’ একজন দাদন ব্যবসায়ীর ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। জামালপুর এলজিইডিতে ১৯৯৩ সালে পিকআপ চালক পদে যোগ দেন এস এম রহুল আমীন। তিনি জানান, চাকরি নিয়মিতকরণ না হওয়ায় ছেলে ও মেয়ে নিয়ে চরম কষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ ব্যাপারে জামালপুর এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মির্জা তাহেরুল ইসলাম জানান, রাজস্ব খাতে শূন্য পদ সৃষ্টি হলে সেখানে মাস্টাররোল কর্মচারীদের আত্মীকরণ/নিয়মিতকরণ করার। কিন্তু বর্তমানে শূন্য পদ না থাকায় ওই কর্মচারীদের আত্মীকরণ করার বিষয়টি জটিলতার মধ্যে রয়েছে।
×