ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মাহমুদুল বাসার

অদ্ভুত আঁধার এক

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ১৩ আগস্ট ২০১৫

অদ্ভুত আঁধার এক

শিশু রাজন হত্যার আর্তনাদ সারা বিশ্বের বিবেকের দুয়ারে কান্নার রোল তুলেছে। এটা নাকি সভ্য যুগ! এই যুগে এমন এমন পাষ-েরও জন্ম হয়েছে যে একজন অসহায় শিশুকে অকারণে হত্যা করে তা আবার ফেসবুকে প্রচার করেছে। তার ভিডিও ছেড়েছে মার্কেটে। মানুষের মনে প্রশ্ন জেগেছে, ‘অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ’? শুধু রাজন নয়, বাংলাদেশে আরও অনেক শিশু অমানবিক নির্যাতনে প্রাণ হারিয়েছে। সমগ্র বিশ্বের শিশুরা আজ মারাত্মক অসহায়। ভারতের রাজধানী দিল্লীতে এক ব্যক্তি বিগত সাত বছরে অন্তত ১৫ শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যা করার পর গ্রেফতার হয়েছে। মাত্র কয়েকদিন আগে ৬ বছরের একটি শিশুও তার শিকার হয়েছে। ২৪ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির নাম রবিন্দর কুমার। রবিন্দর কুমার মানসিকভাবে অসুস্থ। তার ভেতরের বিকৃত বাসনা তাকে শিশু ধর্ষণ ও শিশু হত্যার প্রবণতা জাগিয়ে দিত বলে পত্রিকায় মন্তব্য করা হয়েছে। অর্থাৎ একজন মানসিক ভারসাম্যহীন দুর্বৃত্তের হামলা নিয়মমাফিক শিশুর ওপরই এসে পড়ছে। জঙ্গীরাও এক ধরনের মানসিক রোগী। তাই তারা বিকৃত মানসিকতা থেকে অকারণ উল্লাস বোধ করার জন্য নির্বিচারে শিশু হত্যা করে যাচ্ছে। পত্রিকায় এসেছে, ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম মসুল থেকে ১১১ জন শিশুকে অপহরণ করেছে আইএস জঙ্গীরা। মসুলের বিভিন্ন জেলা থেকে ওই সব শিশুকে অপহরণ করা হয়েছে। এই সব শিশুর বয়স ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। শিশুদের অপহরণের প্রতিবাদ করায় ৭৮ জন লোককে অপহরণ করেছে আইএস জঙ্গীরা। নাইজিরিয়ায় বোকো হারাম নামক উগ্র, জঙ্গী সংগঠন নির্বিচারে শিশু হত্যা করে যাচ্ছে। আটক করে রেখেছে কয়েক হাজার নারী ও শিশু তাদের ক্যাম্পে। যে সব নারী বোকো হারামের ক্যাম্প থেকে পালিয়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিচ্ছে, তারা সাংবাদিকদের কাছে শিশু হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে। পাকিস্তানেও চলছে একই বর্বরতা। তালেবানরা যখন মালালা ইউসুফ জাইকে হত্যা করার জন্য তার গাড়ি আক্রমণ করেছিল, তখন তো মালালা এক রকম শিশুই ছিল। পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্তানে যে ড্রোন হামলা চালানো হচ্ছে জঙ্গী দমনের জন্য, সেখানে অনেক, অগণিত শিশু প্রাণ হারাচ্ছে। সিরিয়া ও মিসরে যে গৃহযুদ্ধ চলছে সেখানে প্রাণ হারাচ্ছে নিষ্পাপ শিশুরা। বাংলাদেশে শিশু হত্যা বন্ধ নেই। কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় দুই মাসের ব্যবধানে আবারও দুই শিশুকে গলা কেটে হত্যা করেছে এক পিতা। গত ১৫ মে চকরিয়ার বদর খালিতে স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্যের জের ধরে ঘুমন্ত ৩ কন্যা শিশুকে গলা কেটে হত্যা করেছে আবদুল গণি নামের এক পাষ- পিতা। পিতা-মাতার কাছে যদি শিশুরা নিরাপত্তা না পায় তাহলে কোথায় তাদের নিরাপত্তা? একটা নাটকে দেখেছি এক নবদম্পতির একটি সন্তান হয়েছে। পিতা বলছে, শিশুটি কত অসহায়! একমাত্র আমরাই ওর ভরসা, ওর নিরাপত্তা! এই ছোট্ট কথাটুকুর তাৎপর্য সীমাহীন। যুদ্ধোন্মাদনার কারণে, আধিপত্যবাদের লড়াইয়ে, জঙ্গীদের ধর্মোন্মাদনার রক্তাক্ত আক্রমণে বিশ্বের শিশুরা আজ অসহায়। মানবতার চর্চা, গণতন্ত্রের চর্চা যেখানে পাত্তা পাচ্ছে না, সেখানেই শিশু নিরাপত্তা হারিয়ে ফেলছে। ইসরাইলের জায়নবাদীরা কি সংস্কৃতিচর্চা করে? সাম্রাজ্যবাদী প্রভুরা কি সংস্কৃতিচর্চা করে? সমাজে শিশু হত্যার ব্যাপারটি মোটেও বিচ্ছিন্ন ব্যাপার নয়। টাকার লোভ, ক্ষমতার লোভ, জমির লোভ, আগ্রাসী মনোভাব, ক্ষমতায় টিকে থাকার লোভ সমাজের নৈতিক পাটাতন বিচূর্ণ করে ফেলেছে। তাই শিশুর নিরাপত্তা নেই। সামাজিক অবক্ষয়ের কারণেও আমাদের দেশের শিশুরা হত্যার শিকার হচ্ছে। পত্রিকা থেকে জানা গেছে ২১ জুলাই একদল বখাটে যুবক নেশার টাকা না পেয়ে সাভারের একটি কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। ময়মনসিংহের ত্রিশালে বন পাথালিয়া গ্রামের দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী আট বছরের শিশু কন্যা ধর্ষণ ঘটনায় পুলিশ ১৯ দিনেও গ্রেফতার করতে পারেনি ধর্ষক চান মিয়াকে। বাংলাদেশের রাজন হত্যার পর খুলনায় রাকিব হত্যা মানুষের চোখের জল কেড়ে নিচ্ছে। কত নৃশংস, কত জঘন্য মানসিকতা হলে একটি শিশুর পায়ুপথে হাওয়া মেশিনের পাইপ ঢুকিয়ে হাওয়া দিয়ে হত্যা করতে পারে? আর যারা নীরব দর্শক হিসেবে দেখেছে বা উপভোগ করেছে তারাই বা কোন স্তরের মানসিকতা বহন করেন, আমার বোধে আসে না। ঢাকা থেকে
×