ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

সুব্রতা রায়

এবারের বিষয় ॥ শিশুর প্রতি নৃশংসতা কেন!

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ১৩ আগস্ট ২০১৫

এবারের বিষয় ॥ শিশুর প্রতি নৃশংসতা কেন!

পৃথিবী পরিচালনা করছে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ, যে মানুষ আবার পরিচালিত হয় তার মস্তিকের নির্দেশনায় দেহ ও মন দিয়ে। জন্মলগ্ন থেকে গরিব-ধনী নির্বিশেষে সামর্থ্য অনুযায়ী দেহের পরির্চযা করি; কিন্তু মনের? এটি সবসময় একটি গুরুত্বহীন, অপ্রয়োজনীয় ও কখনও হাস্যকর বিষয় বলে বিবেচিত হয়। নির্যাতন ও ক্ষমতা একটিকে ছাড়া অন্যটি নয়। দুর্বলদের ওপর সবলদের অত্যাচার চিরন্তন, যা সব সময় প্রমাণ করা যায় না কিন্তু অনুভব করা যায়। সবার জীবনে একই ঘটনা ঘটবে এমনটা নয় কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিত্রটি নির্যাতনের। মনে করে দেখুন তো আপনার সঙ্গে শিশুবেলায় কোন বিরক্তিকর ঘটনা ঘটেছে কিনা ? যা কখনই বলতে পারেননি অন্যকে? এবং আজও নয়। আমরা জানি সমাজে কেউ নিষ্ঠুর হয়ে জন্মায় না। জন্মের পর সে যে পরিবেশে বেড়ে ওঠে সেই পরিবেশের চালচিত্র ধারণ করে। এক্ষেত্রে পরিবার হচ্ছে বিকাশের জন্য একটি অন্যতমÑ প্রথমত বিদ্যালয়, দ্বিতীয়ত প্রতিষ্ঠান (প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, কোচিং সেন্টার, বিভিন্ন শিশু সংগঠন ও সাংস্কৃতিক সংগঠন), তৃতীয়ত সামাজিক/রাজনৈতিক পরিবেশ। কিন্তু এই জায়গাগুলো কতটুকু ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে? এগুলোর পরিবেশ কি শিশুবান্ধব? শিশু নির্যাতনের সর্বজনীন রূপÑ শারীরিক, মানসিক, যৌন নির্যাতন ও অবহেলার কথা বিবেচনা করলে দেখা যায়, বুঝে হোক আর না বুঝেই হোক প্রতিমুহূর্তে শিশুদের নির্যাতন করছি খোদ বাবা-মা-ই। আমরা বড়রা বিশ^াস করি যে, কঠিন শাসন ছাড়া কেউ বড় হতে পারে না। কারণ, আমরা এটাই জানি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অভিভাবক নির্ধারণ করেÑ সন্তান ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, শিক্ষক ইত্যাদি হবে; কিন্তু আমরা কি কখনও ভাবি ‘সে ভাল মানুষ হবে’ এবং তার ভাললাগার বিষয়টি সে বেছে নেবে? শিশুদের নিয়ে নিজ অবস্থা ও অবস্থান অনুযায়ী ভীষণ অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নিমজ্জিত অধিকাংশ মানুষ এবং রেজাল্ট হিসেবে দেখছি একদিকে উচ্চশিক্ষিত এবং অপরদিকে অশিক্ষিত বা আধাশিক্ষিত মূল্যবোধহীন মানুষ। যদিও নিভৃতে মূল্যবোধ ধারণকারী কিছু মানুষ আজও স্বপ্ন দেখছে সুন্দর-সুস্থ বাংলাদেশের। বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ ঘোষিত ৫৪টি ধারা সংবলিত শিশু অধিকার সনদে অনুস্বাক্ষর করেছে এবং এর প্রেক্ষিতে শিশুঅধিকারের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে গৃহীত হয়েছে কিছু কর্মসূচী। সেইসঙ্গে প্রয়োজন প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে শিশুসুরক্ষার বিষয়টি যুক্ত করা, একটি স্পষ্ট গাইডলাইন এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা ও ভরসার জায়গা চিহ্নিতকরণ। গণমাধ্যমে শিশু সুরক্ষা বিষয়ক ম্যাসেজ, নাটক সিনেমাসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ এবং শিশু সুরক্ষার বিষয়টিকে বিশ^াসের সঙ্গে গ্রহণপূর্বক যথাযথভাবে তদারকি করা আজ সময়েরই দাবী। খলিলগঞ্জ, কুড়িগ্রাম থেকে
×