ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস আবশ্যক

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৪ আগস্ট ২০১৫

প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস আবশ্যক

নাগরিক প্রয়োজন মেটাতে ও ক্রমাগত বেড়ে যাওয়া চাহিদা পূরণের জন্যই দেশে শহরগুলোর বিস্তার ঘটছে। পাশাপাশি নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণও ঘটছে। এর সঙ্গে অবকাঠামোসহ প্রশাসন-সংশ্লিষ্ট স্থাপনাও গড়ে উঠছে। এ ধারাবাহিকতা সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই অব্যাহত রয়েছে। নগর সভ্যতার বিকাশেই এ কর্মকা- অন্তত ইতিহাস তাই সাক্ষ্য দেয়। স্বাধীনতা প্রাপ্তির চার দশক পেরিয়ে গেছে। দেশে স্থানীয় সরকারের কাঠামো একাধিকবার বদলেছে। এ বদল ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকেই ঘটেছে। নাগরিক সেবা দোরগোড়ায় পৌঁছানোর লক্ষ্যেই এসব উদ্যোগ। একেবারে তৃণমূল পর্যায়Ñ ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা, জেলা পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন ইত্যাদি স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা ও কার্যক্রম বিকেন্দ্রীকরণের জন্য এসব সৃষ্টি। পাশাপাশি রয়েছে সংসদীয় এলাকা। বিভাগীয় শহর তো আছেই। পৌরসভা, উপজেলা, সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় শহর সংখ্যা গত এক দশকে বেড়েছে। এ বাড়ানোর উদ্দেশ্য অবশ্যই জনকল্যাণমূলক। তবে কথা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন শহরে নানা রকম স্থাপনা, গুরুত্বপূর্ণ দফতর রয়েছে, যা দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। যেমন চট্টগ্রাম ও খুলনার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। দুটিই বিভাগীয় শহর। দুই শহরেই রয়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র ও নদীবন্দর। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে দেশে নৌপথে প্রধান আমদানি-রফতানি হয়ে থাকে। খুলনার মংলা নদীবন্দরের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্বেও আমদানি-রফতানি হয়। সবাই জানে চট্টগ্রামকে বলা হয় বাণিজ্যিক রাজধানী। দুটি শহরেই সিটি কর্পোরেশন বিরাজ করলেও নাগরিক সেবা পরিপূর্ণ নিশ্চিত নয়। এখনও চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা শহরবাসীর দুর্ভোগের অন্যতম প্রধান কারণ। এ জলাবদ্ধতার কারণে দুর্ঘটনার মাধ্যমে প্রাণহানিও ঘটেছে। খুলনা শহরের রাস্তা-ঘাটও তথৈবচ। মংলা বন্দরের পরিবেশ ও অবকাঠামো সন্তোষজনক নয় বলে প্রায়ই গণমাধ্যমে খবর আসে। সবচেয়ে বড় কথা হলোÑ সমুদ্র ও নদী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কোন কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তবু রাজধানীতে আসতে হয়। এতে অর্থ, কর্মঘণ্টা হয় অপচয়। আসলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বিভাগ বা অধিদফতর ওই এলাকায় থাকলে বরং সবদিক দিয়েই হয় সুবিধা। এমন কথা সিলেট, বান্দরবান, কক্সবাজার জেলার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এ জেলাগুলো পর্যটনের জন্য খ্যাত। দেশী-বিদেশী পর্যটকের মাধ্যমে শুধু আর্থিকভাবে লাভবানই নয়, দেশের ভাবমূর্তির ব্যাপারও এর সঙ্গে জড়িত। সেখানে প্রতিবেশ উন্নতি, নিরাপত্তাসহ পর্যটক আকর্ষক পরিবেশ নিশ্চিত যেমন জরুরী, তেমনি এ সংশ্লিষ্ট সরকারী প্রশাসনিক সর্বোচ্চ দফতরগুলোরও তৎপরতা থাকা আবশ্যক। ঢাকা শহরের বাস্তবতা নিয়ে সাতকাহন লেখা যায়। রাজধানীর নগরজীবনের কথা নিয়ে কিছু বলা বা লেখা অরণ্যে রোদন বৈ আর কিছু নয়। বিশ্বের যতগুলো নিম্নমান, ঝুঁকিপূর্ণ ও বসবাসের অনুপযোগী শহর রয়েছে সেই তালিকায় ঢাকার স্থান ওপরের দিকে। এটা নিশ্চয়ই কোন সুসংবাদ নয়, দেশের জন্য লজ্জারও বটে। দেশে গুরুত্বপূর্ণ শহর, বন্দর, জেলা শহরগুলোয় আবাসন, যাতায়াত, সামাজিক নানা অবকাঠামোসহ সরকারী প্রশাসনিক দফতর এমনভাবে পুনর্বিন্যাস করা প্রয়োজন, যাতে কোন নাগরিক বা সরকারী কর্মকর্তার বিশেষ বা ব্যক্তিগত প্রয়োজন ছাড়া রাজধানীতে অহরহ আসতে না হয়। সেই সঙ্গে ঢাকায় বসবাসের ব্যাপারেও নতুন করে সরকারকে ভাবা দরকার। ঢাকার ওপর বাড়তি চাপের অর্থ শুভ ফল বয়ে আনবে না, তা বলাই বাহুল্য।
×