যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানগুলো তুরস্কের একটি ঘাঁটি থেকে উড়ে গিয়ে সিরিয়ার ইসলামিক স্টেটের (আইএস) লক্ষ্যবস্তুগুলোর ওপর প্রথমবারের মতো হামলা চালিয়ে চরমপন্থী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ নতুন পর্যায় শুরু করেছে। ইতোপূর্বে মার্কিন ড্রোনগুলো সিরিয়ার আইএসের একটি নিশানার ওপর একক মারাত্মক বিমান হামলা চালিয়েছিল। তবে এই প্রথমবার পাইলটচালিত মার্কিন জঙ্গী বিমানগুলো তুরস্কের কৌশলগত অবস্থানে থাকা ইনসিরলিক ঘাঁটি থেকে উড়ে গিয়ে হামলা চালাল। খবর গার্ডিয়ানের।
তুরস্ক বর্তমানে সিরিয়ায় আইএস জিহাদপন্থী এবং দেশের ভেতরে একের পর এক হামলার পর উত্তর ইরাক ও দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ দ্বিমুখী হামলা চালাচ্ছে।
তবে এখন পর্যন্ত তুরস্কের বিমান হামলা সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্নতাবাদী কুর্দি বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে কেন্দ্রীভূত থাকায় তা পশ্চিমা ভাষ্যকারদের হতাশ করেছে। তারা আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তুরস্কের অধিকতর অংশগ্রহণ দেখতে চান। দক্ষিণ তুরস্কের আদানা শহরের উপকণ্ঠে ইনসিরলিক ঘাঁটির ব্যবহার উত্তর সিরিয়ায় উড়ে যেতে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দূরবর্তী ঘাঁটির তুলনায় মার্কিন জঙ্গী বিমানগুলোর দূরত্ব অনেকটা কমিয়ে দেবে। পেন্টাগনের কমান্ডার এলিসা স্মিথ বলেন, ‘আজ থেকে তুরস্কের ইনসিরলিক বিমান ঘাঁটি থেকে যুক্তরাষ্ট্র আইএসবিরোধী বিমান হামলার মিশন শুরু করেছে।’ তুরস্কের দোগান বার্তা সংস্থা বলেছে, বুধবার সন্ধ্যায় তিনটি মার্কিন জঙ্গী বিমানকে ইনসিরলিক থেকে উড়তে দেখা গেছে। কয়েক মাস ধরে কঠিন আলোচনা শেষে তুরস্ক সিরিয়ার আইএস নিশানগুলোতে বিমান হামলা চালানোর জন্য জোটের বিমানের জন্য ওই ঘাঁটি খুলে দিতে সম্মত হয়।
এখন প্রত্যাশ্য করা যাচ্ছে যে, তুর্কি বাহিনীÑ যারা এ পর্যন্ত আইএসের বিরুদ্ধে খুবই সীমিত হামলা পরিচালনা করেছে নতুন করে বোমা হামলায় তারা যোগ দেবে। আঙ্কারায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন তুর্কি কর্মকর্তা পেন্টাগনের ঘোষণার ঠিক আগে বলেন, ‘তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্র সমন্বিত অভিযান পরিচালনা করবে।’ আমাদের দিক থেকে এখন সামরিক বিরতি দেয়া হয়েছে। কারণ আমেরিকানরা সমন্বয়ের উদ্দেশ্যে আমাদের অপেক্ষা করতে বলেছে।’ তুর্কী কর্মকর্তারা আভাস দিয়েছেন যে, সিরিয়ার অভ্যান্তরে আইএস জিহাদীমুক্ত একটি নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হবে একটি প্রধান অগ্রাধিকার, যেখানে তুরস্কে আশ্রয় নেয়া ১৮ লাখ সিরীয় শরণার্থীর জন্য আবাসের ব্যবস্থা করা যাবে। তবে ওয়াশিংটন এখনও এই পরিকল্পনায় খোলাখুলি কোন উৎসাহ দেখায়নি।
প্রেসিডেন্ট এরদোগান অঙ্গীকার করেছেন যে, কুর্দী জঙ্গীদের বিরুদ্ধে নিরাপদ অভিযানে তুরস্ক কোন ছাড় দেবে না। কারণ দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশ নতুন করে মারাত্মক সহিংসতায় আক্রান্ত হয়েছে। এদিকে মার্কিন সেনাবাহিনীর জেনারেল রে ওদিয়ার্নো বুধবার বলেন, আইএস জঙ্গীদের বিরুদ্ধে লড়াই অচলাবস্থায় পৌঁছছে এবং যদি সামরিক বাহিনী সামনের মাসগুলোতে কোন অগ্রগতি দেখতে না পায় তবে তাদের ইরাকী সৈন্যদের সঙ্গে ভূমিতে সহায়ক সেনা নিয়োজিত করার কথা ভাবতে হবে।