ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৪ আগস্ট ২০১৫

বায়ান্ন বাজার তিপান্ন গলি

যতদিন আমি এই পৃথিবীতে প্রত্যহ ভোরে/ মেলবো দু’চোখ, দেখবো নিয়ত রৌদ্র-ছায়ার খেলা,/ যতদিন পাবো বাতাসের চুমো দেখবো তরুণ/ হরিণের লাফ, ততদিন আমি লালন করবো শোক...। এই শোক বঙ্গবন্ধুর জন্য। প্রিয় পিতাকে অবেলায় হারানোর ব্যথা বাঙালী ভুলতে পারেনি। ভোলা কি যায়? সেই কবে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নেমে এসেছিল কালো রাত্রী। বাংলাদেশকে তছনছ করে দেয়ার মানসে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল স্বাধীনতার মহানায়ককে। অথচ আজ, এত বছর পর মুজিব সূর্যের আলোর মতো জ্বল জ্বল করছে। মানচিত্রের পুরোটাজুড়ে তিনি। নিঃশেষ হওয়ার পরিবর্তে আরও বড় হচ্ছেন। বিশাল হচ্ছেন। ছড়িয়ে পড়ছেন বাংলার আলো ছায়া সবুজে। আগস্ট মাসে সেটি আরও বেশি দৃশ্যমান হয়। এখন সারাদেশের মতো রাজধানী ঢাকাও শোকের নগরী। বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহরজুড়ে চলছে নানা আয়োজন আনুষ্ঠানিকতা। সামাজিক সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হচ্ছে শোক দিবসের কর্মসূচী। ঢাকার প্রায় প্রতিটি এলাকায়, অলিতে গলিতে কালো রাত্রী স্মরণে ব্যানার। বড় বড় রাস্তার ধারে বিলবোর্ড। সবকটিতে জাতির জনকের মুখ। কালো পতাকা ওড়ছে। মাইকে বাজছে মহান নেতার কালজয়ী কণ্ঠ। মুজিব মানে বাংলাদেশ। তাই দেশের গান হচ্ছে। শুনতে শুনতে দেখতে দেখতে নিজের অজান্তেই মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। ধানম-ি ৩২ নম্বরের পরিবেশ আরও বেশি শোকের। শান্ত জলের লেকটিকে মনে হয় শোক সাগর। সবুজ বৃক্ষরা, বৃক্ষ শাখায় যত পাখি, বঙ্গবন্ধুর জন্য শোক করছে। ১৫ আগস্ট সকাল থেকে এখানেই শ্রোত নামবে মানুষের। রাষ্ট্র প্রধান, সরকার প্রধান থেকে শুরু করে সর্বস্তরের জনগণ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে আসবেন। সঙ্গত কারণেই বড় ধরনের প্রস্তুতির দরকার হয়। মোটামুটি আগস্টের প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়েছিল কাজ। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। বুধ ও বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পোস্টার ব্যানারে গোটা এলাকা ছেয়ে গেছে। যেদিকে চোখ যায়, বঙ্গবন্ধুর গুলিতে ঝাঁঝরা বুক! একই দিন নিহত শিশু রাসেলসহ স্বজনদের ছবি। শুক্রাবাদ সংলগ্ন জায়গাটি তিরপাল দিয়ে ঘিরে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এখানে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস ফুটিয়ে তোলার প্রয়াস। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের ঠিক সামনের রাস্তাটিতে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের সামনে জাতির জনকের প্রতিকৃতি। সামরিক কায়দায় স্যালুট জানানো হচ্ছে। ১৫ আগস্ট রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে এই প্রস্তুতি পর্ব। জাদুঘরের অভ্যন্তরেও চলছে প্রস্তুতি। এ অংশে শোকের মাসে প্রিয় পিতার মুখ এঁকেছেন শিল্পীরা। বুধবার আয়োজিত আর্ট ক্যাম্পে যোগ দেন অর্ধশতাধিক শিল্পী। খ্যাতিমান শিল্পী ও প্রতিশ্রুতিশীল তরুণদের আঁকা ক্যানভাসে মূর্ত হয়েছে নিকষকালো রাত্রী। মানিক মিয়া এভেনিউয়ের আয়োজনটিও উল্লেখ করার মতো। এখানে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে দুর্লভ আলোকচিত্রের বিশেষ প্রদর্শনী। আয়োজকÑ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর প্রদর্শনী দেখতে রীতিমতো ঢল নামে মানুষের। তিন দিনব্যাপী প্রদর্শনী শনিবার পর্যন্ত চলবে। সব ধরনের আয়োজন থেকে স্মরণ করা হচ্ছে জাতির জনককে। তাঁর স্মৃতির প্রতি জানানো হচ্ছে গভীর শ্রদ্ধা।
×