ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমার থেকে আমদানি শুরু;###;‘রাখি’ পেঁয়াজের সরবরাহও বেড়েছে

বাজারে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৫ আগস্ট ২০১৫

বাজারে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে

এম শাহজাহান ॥ পেঁয়াজের সঙ্কট কেটে যাচ্ছে। আমদানি শুরু হয়েছে মিয়ানমার থেকে। আমদানি করা এসব পেঁয়াজের কেজিপ্রতি দাম পড়েছে ২৩ টাকা। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরে এই পেঁয়াজ ভোক্তারা ২৮-৩০ টাকায় কিনতে পারবেন। এছাড়া শীঘ্রই চালু হবে ভারতের বাজার। আমদানির বিকল্প বাজারও খুঁজে রাখা হয়েছে। গুদামে সংরক্ষিত ‘রাখি’ পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে বাজারে। আর এসব উদ্যোগের ফলে পেঁয়াজের দাম ইতোমধ্যে কিছুটা কমেছে। আগামী কোরবানির ঈদেও দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবে বলে মনে করছে দ্রব্যমূল্য বিষয়ক সরকারের পূর্বাভাস সেল। তাই পেঁয়াজ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের আপাতত উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। সূত্রমতে, কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। প্রায় নয় মাস বন্ধ থাকার পর প্রথম চালানে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মাহী এ্যান্ড ব্রাদার্স, চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ, সৌরভ এন্টারপ্রাইজ ও জাফর এন্টারপ্রাইজের নামে ছয়টি জাহাজে মোট ৪৮৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ টেকনাফে এসে পৌঁছেছে। এর আগে গত সপ্তাহে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অমিতাভ চক্রবর্তী ও টিসিবি চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম ইকবাল টেকনাফ স্থলবন্দর সফর করেন। ওই সময় তাঁরা ব্যবসায়ীদের মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানির পরামর্শ দেন। সেই থেকে শুরু হয়েছে পেঁয়াজ আমদানি। শুধু তাই নয়, বৃহস্পতিবার বিকেলে আর কে এন্টারপ্রাইজ ও মাহী এ্যান্ড ব্রাদার্সের নামে আরও তিনটি জাহাজে ১৫০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ স্থলবন্দরের জেটিতে এসে নোঙর করেছে। সূত্রমতে, মিয়ানমার এ বছর পেঁয়াজের উৎপাদন ভাল হয়েছে। উৎপাদন ভাল হওয়ার কারণে রফতানি মূল্যও বাড়ানো হয়নি। ফলে ন্যায্য ও সঠিক দামে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে পারছেন ব্যবসায়ীরা। আমদানিকারকরা বলছেন, কেজিপ্রতি দাম পড়েছে ২৩ টাকা। শ্রমিক, বন্দর ও জাহাজ ভাড়া বাবদ খরচ হচ্ছে আড়াই টাকা। তাই এক-দেড় টাকা লাভ করে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতি কেজি ২৭ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। খুচরা পর্যায়ে এসব পেঁয়াজের দাম ২৮-৩০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে, ভারতে বছরে চারবার পেঁয়াজ উৎপাদন করা হয়। ভারি বৃষ্টিপাত ও বর্ষার কারণে দেশটির প্রথম মৌসুমের পেঁয়াজ ঘরে তোলা যায়নি। তবে দ্বিতীয় মৌসুমের পেঁয়াজ উৎপাদন শুরু করেছে দেশটি। এ কারণে শীঘ্রই ভারত রফতানি মূল্য কমানোর ঘোষণা দিতে পারে। এতে করে ভারতের বাজার ফের চালু হবে বলে মনে করা হচ্ছে। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, সরকারের উদ্যোগের ফলে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে। উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত না হলে ভারতের বাজারও চালু হবে। এছাড়া বিকল্প বাজার হিসেবে আরও কয়েকটি দেশকে চিহ্নিত করা হয়েছে। নিজস্ব মজুদ ভাল অবস্থায় আছে। তাই আপাতত পেঁয়াজ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। ইতোমধ্যে বাজারে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে আগামী কোরবানির ঈদে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। জানা গেছে, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম এখন ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। গত সপ্তাহে এই পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে মিয়ানমারের পেঁয়াজ সারাদেশে সরবরাহ শুরু হলে দাম কমে আসবে। তখন প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হবে ৩০-৪০ টাকার মধ্যে। তবে কোরবানির ঈদে অতিরিক্ত আরও আড়াই লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা সৃষ্টি হবে। চাহিদার এই সুযোগ নিয়ে থাকেন ব্যবসায়ীরা। দাম বেড়ে যায় পেঁয়াজের। তবে মিয়ানামর থেকে পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে। এছাড়া ভারত থেকে আমদানির জন্য এলসিকৃত পেঁয়াজ আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে পেঁয়াজের চাহিদা ও সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এক লাখ ৯২ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ১৯ লাখ ৩০ হাজার টন। গত অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণও বেড়েছে। গত অর্থবছরে আমদানি হয়েছে পাঁচ লাখ ২৪ হাজার টন। যদিও ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণে দেশের বাজারেও বেড়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। অতিবৃষ্টির কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ভারত সরকার ইতোমধ্যে পেঁয়াজের রফতানি মূল্য দ্বিগুণ করেছে।
×