ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টে নতুন করে আর গ্যাস সংযোগ নয়

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৫ আগস্ট ২০১৫

ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টে নতুন করে আর গ্যাস সংযোগ নয়

রশিদ মামুন ॥ ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টে (শিল্প কারখানায় স্থাপিত বিদ্যুত উৎপাদন জেনারেটর) নতুন করে আর গ্যাস সংযোগ দেবে না সরকার। দীর্ঘ আলোচনা-সমালোচনার পর সরকার চূড়ান্ত এই সিদ্ধান্ত জানাল। গেল সপ্তাহে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের জারি করা এক অফিস আদেশে ক্যাপটিভ বিদ্যুত কেন্দ্রের বিষয়ে বলা হয়েছে ‘ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টের জন্য পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত গ্যাস সংযোগ প্রদান না করার বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।’ অর্থাৎ এখন থেকে নতুন আর কোন শিল্প উদ্যোক্তা ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টে গ্যাস সংযোগ পাবে না। জ্বালানি এবং খনিজসম্পদ বিভাগের সহকারী সচিব শিরীন সুলতানা স্বাক্ষরিত ১০ আগস্টের এক অফিস আদেশে বলা হয়, নতুন গ্যাস সংযোগ এবং লোড বৃদ্ধির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত কমিটির বৈঠকে গত বছর ২৯ ডিসেম্বরের এক বৈঠকে ক্যাপটিভ বিদ্যুত কেন্দ্রে সাধারণভাবে আর কোন সংযোগ না দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে জ্বালানি বিভাগ এই অফিস আদেশটি জারি করে। সরকার বিদ্যুত দিতে না পারায় ক্যাপটিভ বিদ্যুতে গ্যাস সরবরাহ করে। এতে শিল্প মালিকরা নিজস্ব জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুত উৎপাদন করেন। কিন্তু ক্যাপটিভ বিদ্যুত কেন্দ্রে অন্তত ৩০ ভাগ জ্বালানি অপচয়ের অভিযোগ রয়েছে। অর্থাৎ যে পরিমাণ গ্যাস ক্যাপটিভ বিদ্যুত কেন্দ্র ব্যবহার করে তা দিয়ে কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুত কেন্দ্রে অন্তত ৩০ ভাগ বেশি বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব। বর্তমানে দেশে গ্যাসের মজুদ তলানিতে এসে ঠেকেছে। নতুন করে গ্যাসের মজুদও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সরকার জ্বালানি সাশ্রয়ের দিকে নজর দিয়েছে। এতে করে নতুন শিল্প উদ্যোক্তাদের এখন থেকে গ্রিডের বিদ্যুত ব্যবহার করতে হবে। জ্বালানি সচিব আবু বক্কর সিদ্দিক সম্প্রতি জনকণ্ঠকে জানান, ক্যাপটিভ বিদ্যুতে নতুন সংযোগ বন্ধ করে দিতে চায় সরকার। এজন্য বিদ্যুত বিভাগের কাছে বিদ্যুত পরিস্থিতি জানতে চাওয়া হয়েছে। নতুন যেসব শিল্পকারখানা স্থাপন করা হচ্ছে সেখানে তারা বিদ্যুত সংযোগ দিতে পারলেই আমরা ক্যাপটিভে গ্যাস সংযোগ দেয়া বন্ধ করে দেব। অনেকটা বিক্ষিপ্তভাবে গ্যাস বিতরণ কোম্পানি থেকে উদ্যোক্তারা ক্যাপটিভে গ্যাস সরবরাহ নিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন বিদ্যুত খাতের উন্নয়নে সমন্বিত একটি উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। এসব বিষয়কে মাথায় রেখেই ক্যাপটিভ বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়ে সরকার নতুন করে চিন্তা করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যাপটিভের চেয়ে কম্বাইন্ড সাইকেল কেন্দ্রে একই পরিমাণ বিদ্যুত উৎপাদনে অর্ধেক গ্যাসের প্রয়োজন হয়। সাশ্রয়ী না হওয়ায় ক্যাপটিভ বিদ্যুত কেন্দ্রে ব্যবহৃত জ্বালানির অর্ধেকই অপচয় হয়। কিন্তু এতদিন দেশের বিদ্যুতের অবস্থা ভাল না হওয়ায় সরকার কোন ব্যবস্থা নিতে পারছিল না। এখন সেই অবস্থা না থাকায় এসব অপচয় রোধ করার চেষ্টা হচ্ছে। অন্যদিকে দেশে নতুন করে আর কোন গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করছে না সরকার। গ্যাসের স্বল্পতার কারণেই বাধ্য হয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নতুন কয়েকটি বিদ্যুত কেন্দ্রর দরপত্র আহ্বান করা হলেও পেট্রোবাংলা জানিয়েছে এসব বিদ্যুত কেন্দ্রে নতুন করে গ্যাস দেয়া সম্ভব নয়। ইতোমধ্যে বিদ্যুত খাতে ৪৫ শতাংশ গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধি করা হয়েছে। অন্যান্য খাতে গ্যাস না দিয়ে শুধু বিদ্যুত উৎপাদনে গ্যাস দেয়াও সম্ভব নয়। পেট্রোবাংলা বলছে এখন ক্যাপটিভ বিদ্যুত কেন্দ্রে ৪৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে ৩৮০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুত কেন্দ্রে এই পরিমাণ গ্যাস দিয়ে প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব। আর চাহিদার পুরোটা দিয়ে দুই হাজার ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন সম্ভব। সরকার সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে পাওয়ারসেলকে বলে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দিত। এরপর দেশের সকল গ্যাস বিপণন কোম্পানির কাছে তারা ক্যাপটিভ পাওয়ারে বিদ্যুত উৎপাদনের পরিমাণ, প্রতিদিন কতটি ক্যাপটিভ কেন্দ্রে কি পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। পাওয়ার সেল সূত্র বলছে বিদ্যুতের অবস্থা ভাল ছিল না। তখন এই জাতীয় বিদ্যুত কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করা হতো। এখন সেই পরিস্থিতি নেই। সরকার চাইছে এখানের ব্যবহৃত গ্যাস দিয়ে বেশি বিদ্যুত উৎপাদন করতে। শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব বলেই ক্যাপটিভের জ্বালানি অপচয় বন্ধের পক্ষে তারা। বিদ্যুত বিভাগ বলছে যে পরিমাণ গ্যাস দিয়ে ক্যাপটিভে যে পরিমাণ গ্যাস দেয়া হয় তা দিয়ে কম্বাইন্ড সাইকেলে বিদ্যুত উৎপাদন করা হবে। তবে এখন নির্মাণাধীন বিদ্যুত কেন্দ্রে থেকে শিল্পকারখানার জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত নিশ্চিত করা যায় কি না তাও বিবেচনা করা হবে। তবে ভবিষ্যতে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে শিল্পায়নকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
×