ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

গ্যালারি কসমসে বঙ্গবন্ধু আশ্রিত চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ‘ব্রেভ হার্ট’

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৫ আগস্ট ২০১৫

গ্যালারি কসমসে বঙ্গবন্ধু আশ্রিত চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ‘ব্রেভ হার্ট’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রদর্শনালয়ের দেয়ালজুড়ে ঝুলছে জাতির জনকের বহুমাত্রিক অভিব্যক্তিময় চিত্রকর্ম। শিল্পীর রং-তুলির আঁচড়ে চিত্রিত হয়েছেন স্বাধীনতার মহান স্থপতি। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালীকে এঁকেছেন দেশের খ্যাতিমান এবং নবীন-প্রবীণ শিল্পীরা। রঙে ভেজা তুলির টানে উদ্ভাসিত হয়েছে বাঙালীর মুক্তির দিশারী এই অবিসংবাদিত নেতার সাহসী ব্যক্তিত্ব ও চরিত্র। প্রতিটি চিত্রকর্মই যেন হয়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের নানামুখী প্রকাশভঙ্গির অনবদ্য বয়ান। আর বঙ্গবন্ধুকে আশ্রিত এমন সব চিত্রকর্ম নিয়ে গুলশান এ্যাভিনিউয়ের গ্যালারি কসমসে শুরু হলো বিশেষ প্রদর্শনী। বঙ্গবন্ধুর ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত যৌথ প্রদর্শনীর শিরোনাম ব্রেভ হার্ট। শুক্রবার শ্রাবণ সন্ধ্যায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন ডেপুটি স্পীকার ফজলে রাব্বি মিয়া। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ সরণ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কসমসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনায়েতুল্লাহ খান। বরাবরের মতোই গতিময় চিত্রভাষ্যে বঙ্গবন্ধুকে চিত্রিত করেছেন বরেণ্য শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ। জনকের হাসিমাখা মুখাবয়বের ছবিটির শিরোনাম ‘দি লিজেন্ড’। ‘ড্রইং ৩’ শিরোনামে মুজিবকে ক্যানভাসে মেলে ধরেছেন খ্যাতিমান শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী। বীরেন সোমের আঁকা ছবির শিরোনাম ‘জাতির জনক’। ভাস্কর রাসার শিল্পকর্মটির শিরোনাম ‘স্বাধীনতার ডাক’। ‘মেডোনা উইথ বঙ্গবন্ধু’ নামে চিত্রপট রাঙিয়েছেন রোকেয়া সুলতানা। স্বদেশের প্রতিরূপ হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে কনক চাঁপা চাকমা চিত্রিত করেছেন ‘মাই কান্ট্রি’ শিরোনামে। এভাবেই ৭৫ জন শিল্পী আপন মননের সঙ্গে রং আর রেখার মিশেলে নানা অভিব্যক্তিতে প্রকাশ করেছেন শেখ মুজিবকে। প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া অন্য শিল্পীরা হলেনÑ হামিদুজ্জামান খান, কালিদাস কর্মকার, তাজুল ইসলাম, আবদুল মান্নান, অলোকেশ ঘোষ, ফরিদা জামান, জামাল আহমেদ, শিশির ভট্টাচার্য, নাইমা হক, রশিদ আমিন, নাসির আলী মামুন, কুহু প্লামনদন, নাসিম আহমেদ নাদভী, নাসরিন বেগম, রেজাউন নবী, আইভি জামান, সৈয়দ হাসান মাহমুদ, নাজিয়া আন্দালিব প্রিমা, আহমেদ সামসুদ্দোহা, সাইদুল হক জুইস, শেখ আফজাল, শামীম সুব্রানা, ফারিহা জেবা, আতিয়া ইসলাম এ্যানি, দিলীপ কুমার কর্মকার, মনিরুজ্জামান মনির, গুলশান হোসেন, কনকচাঁপা চাকমা, নাসিমা খানম কুইনি, সমীরণ চৌধুরী, আমিরুল মোমানিন চৌধুরী, প্রশান্ত কর্মকার, রফি হক, মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন, প্রদ্যুত কুমার দাস, মুস্তাফা জামান, আলপ্তগীন তুষার, সুফিয়া বেগম, নাজিব তারেক, বিপাশা হায়াত, কিংশুক দাশ চৌধুরী, আনিসুজ্জামান আনিস, সাহজাহান আহমেদ বিকাশ, সরবরী রায় চৌধুরী, ধীমান কুমার বিশ্বাস, সুলেখা চৌধুরী, এ.এইচ তমাল ঢালী, অনুকূল চন্দ্র মজুমদার, রনি আহমেদ, মাকসুদা ইকবাল নিপা, আজমীর হোসেন, রুহুল করিম রুমী, সোহেল প্রানন, আবদুস সাত্তার তৌফিক, আবদুল গাফ্ফার বাবু, বিশ^জিৎ গোস্বামী, কামালুদ্দিন, দেবদাস মালাকার, সোহাগ পারভেজ, রুহুল আমিন তারেক, মোহাম্মদ আজমল উদ্দিন, নাজির হোসেন, আবদুল্লাহ আল বশির, রতনেস্বর সূত্রধর, আনিসুজ্জামান মামুন, কামরুজ্জোহা, মনজুর রশীদ, শাহনুর মামুন, সৌরভ চৌধুরী, আবীর সোম ও ফরহাদ হোসেন। ৭৫ জন শিল্পীর আঁকা ৮০টি চিত্রকর্ম দিয়ে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনী। ১৮ দিনব্যাপী প্রদর্শনী শেষ হবে ৩১ আগস্ট। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। ‘শিল্পের আলোয় বঙ্গবন্ধু’ ॥ এস্রাজের মিষ্টি সুর ভেসেছে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার গ্যালারি। বঙ্গবন্ধুর একটি প্রতিকৃতির সামনে বসে নিবিড় মনোযোগ সুর তুলেছেন যন্ত্রশিল্পী। আর সেই সুরের ভেতর দিয়েই দর্শনার্থীরা অবলোকন করছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে চিত্রিত বৈচিত্র্যময় সব চিত্রকর্ম। বঙ্গবন্ধুর ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার বিকেলে চিত্রশালার ১ ও ৪ নং গ্যালারিতে ‘শিল্পের আলোয় বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক প্রদর্শনীর সূচনা হয়। ১ নম্বর গ্যালারির প্রদর্শনীটি সাজানো হয়েছে চিত্রকর্ম, ভাস্কর্য স্থাপনাশিল্পের সমন্বয়ে। প্রবেশ পথেই চোখে পড়ে ব্রোঞ্জ মাধ্যমে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য। আর পুরো গ্যালারিটি যেন পরিণত হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত শিল্প সাম্রাজ্যে। বিষণœ স্মৃতি শিরোনামের আতিয়া ইসলাম এ্যানির চিত্রকর্মটি যেন বলে যায় রঙের ছোঁয়ায় বেদনার কথা। জনশূন্য একটি চেয়ারে রাখা হ্যাঙ্গারে বঙ্গবন্ধুর সেই মুজিব কোট। আর নিচে পড়ে আছে তাঁর চিরচেনা চশমা। জমিনজুড়ে বয়ে যাওয়া রক্তের স্রোত এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে চশমাটিকে। পিতা-পুত্র শিরোনামের ছবিতে জাতির পিতার কোলে তার প্রিয় সন্তান শেখ রাসেল। ‘বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক কোলাজ ছবিতে নানা ভঙ্গিতে ধরা দিয়েছেন জাতির জনক। সাগর দের আঁকা লাইট টু ডার্ক নামের ছবিতে ধীরে ধীরে আলোর ভেতর থেকে অন্ধকারে আচ্ছাদিত হয়েছেন শেখ মুজিব। একটি স্থাপনাশিল্পে পৃথক পৃথক কাঁচের বাক্সের ওপর জুড়ে দেয়া হয়েছে পনেরোই আগস্ট শহীদ হওয়া বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ছবি। কাঁচের ভেতর দিয়ে সেখানে প্রতিফলিত হচ্ছে বেদনার স্মারক নীল রং । ৪ নম্বর গ্যালারিতে স্থান পেয়েছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে তোলা আলোকচিত্র। বিকেলে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। এই প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে মোট ১৫৩টি চিত্রকর্ম। এর মধ্যে ১০৩টি নতুন চিত্রকর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শিল্পকলার সংগৃহীত ৫০টি ছবি। রয়েছে ১০টি ভাস্কর্য ও ৬০টি আলোকচিত্র। পদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী বিশিষ্ট শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন সমরজিৎ রায় চৌধুরী, রেজাউল করিম, নাসিম আহমেদ নাদভী, নাসরিন বেগম, সৈয়দ হাসান মাহমুদ, অলকেশ ঘোষ, গুলশান হোসেন, শেখ আফজাল, শাহজাহান আহমেদ বিকাশ প্রমুখ। এ প্রদর্শনী চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। খোলা থাকবে প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। অন্যদিকে সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে বঙ্গবন্ধুর ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। অসীম কুমার সরকারের এস্রাজের সুরেলা শব্দধ্বনির মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের সেøাগান ছিল ‘টুঙ্গিপাড়া গ্রাম থেকে আমাদের গ্রামগুলো তোমার সাহস নেবে, নেবে ফের বিপ্লবের মহান প্রেরণা’। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। আলোচনাপর্ব শেষে ছিল বর্ণিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। পরিবেশিত হয় সমবেত সঙ্গীত, একক সঙ্গীত, জারিগান, আবৃত্তি, নৃত্য ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উপস্থাপনা। শ্রাবণসন্ধ্যায় গণগ্রন্থাগারে রবিরাগের বর্ষামঙ্গল ॥ শুক্রবার সন্ধ্যায় শ্রাবণধারার পরশে সুরে-ছন্দে অনুষ্ঠিত হলো ‘বর্ষামঙ্গল’। সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে রূপের ঋতু বর্ষা বন্দনায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে রবীন্দ্রসঙ্গীত সংগঠন রবিরাগ। অনুষ্ঠানের শুরু থেকে সমাপ্তি পর্যন্ত ছিল একক ও সমবেত কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ২৮টি বর্ষার গান ও চারটি গীত-বাদ্যের সঙ্গে নৃত্য। অনুষ্ঠানে বর্ষামঙ্গলের পাশাপাশি রবীন্দ্রপ্রয়াণবার্ষিকীকেও স্মরণ করে সংগঠনটি।
×