ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জিএসপি সুবিধা

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৫ আগস্ট ২০১৫

জিএসপি সুবিধা

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিশ্বের ১২২টি দেশের পণ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাজার-সুবিধা (জিএসপি) নবায়ন করা হলেও সেই তালিকায় বাংলাদেশ নেই। সার্ক জোটের দেশÑ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তান এ তালিকায় থাকলেও বাংলাদেশকে ফেরানো হয়নি। অথচ জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে দুই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র যে ১৬টি শর্ত দিয়েছিল, তার প্রায় সবই বাংলাদেশ পূরণ করেছে। তাহলে কেন এটা হলো? এ প্রশ্নই ঘুরেফিরে উচ্চারিত হচ্ছে। অবশ্য জিএসপি রাজনৈতিক কারণে স্থগিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকাট। অপরপক্ষে বাণিজ্যমন্ত্রীর অভিমত বার্নিকাটের ঠিক উল্টো। তিনি এর পেছনে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে বলেই মনে করেন। দেশের খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ ও সিপিডির চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেছেন, হাতি, ঘোড়া, গাধা সবাইকে জিএসপি দেয়া হলো বাংলাদেশ ছাড়া। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডাব্লিউ মজেনা দেশে-বিদেশে নির্বাচন প্রশ্নে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরোধিতা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রীরাও মজেনা ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করেন। এসব কারণেই হয়ত যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি পুনর্বহাল করছে না। উল্লেখ্য, জিএসপির আওতায় বাংলাদেশ পাঁচ হাজার ধরনের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধায় রফতানি করতে পারত। ২০১২ সালে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এই সুবিধার আওতায় তিন কোটি ৪৭ লাখ ডলারের তামাক, ক্রীড়া সরঞ্জাম, চিনামাটির তৈজসপত্র ও প্লাস্টিক সামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি করেন, যাতে তাঁরা শুল্ক ছাড় পান ২০ লাখ ডলারের মতো। অবশ্য বাংলাদেশের প্রধান রফতানি পণ্য ‘তৈরি পোশাক’ ওই সুবিধা পেত না। ২০১৩ সালের এপ্রিলে রানা প্লাজা ধসের পর ওই বছরের ২৭ জুন জিএসপি স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির বাজারে বাংলাদেশের মোট রফতানি আয় ৫৫০ কোটির ৯০ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক রফতানি থেকে। ফলে জিএসপি স্থগিত হলেও বাংলাদেশের রফতানি আয়ে তেমন কোন প্রভাব পড়েনি। তবে দীর্ঘ মেয়াদে এর প্রভাব মন্দ হতে পারে বলে আশঙ্কা গবেষক ও ব্যবসায়ীদের। আমরা মনে করি, শ্রম-পরিবেশ ও শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশ সরকার বিগত দুই বছরে লক্ষ্যযোগ্য উন্নয়ন ঘটানোর ফলে জিএসপি সুবিধা ফিরে না পাওয়ার যুক্তিসঙ্গত কোন কারণ নেই। ভুলে গেলে চলবে না যে, প্রায় শত বছর আগে ১৯১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রায়াঙ্গেল শার্ট তৈরির কারখানায় আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছিল ১৪৬ শ্রমিক, আহতের সংখ্যাও ছিল অনেক। তাই রানা প্লাজা বা তাজরীন ফ্যাশনসের দুর্ঘটনার কারণ দেখিয়ে দুই বছর আগে জিএসপি সুবিধা স্থগিতের বিষয়টিও সে সময় অনেকের কাছেই গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। তাছাড়া চলতি বছর বিভিন্ন সময়ে বিদেশী ক্রেতারা পোশাক কারখানা পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বুধবার গাজীপুরে তিনটি তৈরি পোশাক কারখানা পরিদর্শন করে অভিভূত হন বিদেশী ১০ কূটনীতিক। সুতরাং জিএসপি সুবিধা ফেরত না পাওয়ার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কোন্ নীতি কাজ করছেÑ সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা কেন? জিএসপি সুবিধা অবশ্যই বাংলাদেশের পাওয়া উচিত।
×