ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তারেক মাসুদ মিশুক মুনীর স্মরণ

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৫ আগস্ট ২০১৫

তারেক মাসুদ মিশুক মুনীর স্মরণ

গৌতম পাণ্ডে ॥ শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে ঢোকার পথের এক পাশে প্রয়াত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের বৃহদাকার ছবি। তার নিচে চিত্রগ্রাহক মিশুক মুনীরসহ তিন চলচ্চিত্রকর্মীর ছবি। ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে প্রয়াত এই চার চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বকে। মিলনায়তনে ঢুকেই দেখা যায় দর্শকের সরব উপস্থিতি। সবাই আগ্রহ নিয়ে বসে আছে বরেণ্য চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ নির্মিত ‘রানওয়ে’ , ‘নরসুন্দর’ ও ‘ আদম সুরত’ চলচ্চিত্র দেখার জন্য। সবার প্রিয় চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেলে আয়োজন করা হয় তারই নির্মিত তিনটি চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী। ‘তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর স্মরণে’ শীর্ষক এ আয়োজন করেছে যৌথভাবে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। শুরুতে দেখানো হয় চলচ্চিত্র ‘রানওয়ে’। গল্পের শুরুতেই শোনা যায় অন্তর্ভেদী এক সুতীব্র চিৎকার। বেড়ার একচালা ঘর কেঁপে উঠে। মাথার ওপর দিয়ে চলে যায় বিমান। প্রচ- শব্দে মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে জেগে ওঠে রুহুলের বুড়ো দাদু। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে সংলগ্ন একচালা ঘরে রুহুল ও তার পরিবারের বাস। মা রহিমা ক্ষুদ্রঋণের টাকায় কেনা গাভীর দুধ বিক্রি করে সংসার চালায়। বেকার রুহুল কিছুটা হতাশ অথচ আদর্শবাদী চাকরি খোঁজার বৃথা চেষ্টা করে। মাঝে মধ্যে সে মামাকে সাইবার ক্যাফেতে সাহায্য করে এবং ইন্টারনেট শেখার চেষ্টা করে। সেখানে দৃঢ় অথচ শান্ত মেজাজের কম্পিউটারে দক্ষ আরিফের সঙ্গে তার ক্রমশ বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। আরিফ রুহুলকে টেনে নিয়ে যায় জঙ্গীবাদের পথে। সিনেমা হলে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় আরিফের স্কোয়াড। আরিফ আত্মঘাতী হামলায় আহত হয়ে মেডিকেলে ঢুকে। জঙ্গীবাদ, পোশাকশ্রমিক, বিদেশে ভাগ্যাহত বাংলাদেশী, ক্ষুদ্রঋণের ফাঁস, নিটোল প্রেম, নিম্নবর্গের গণসংস্কৃতি এগুলো মিলেই ‘রানওয়ে’। চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, নাজমুল হুদা বাচ্চু, মোসলেম উদ্দিন, নাসরিন আক্তার ও রিকিতা নন্দিনী। অতিথি শিল্পী হিসেবে অভিনয় করেছেন তিশা। ক্যাথরিন মাসুদের সঙ্গে যৌথভাবে লেখা চিত্রনাট্যের গল্প ও সংলাপ লিখেছেন তারেক মাসুদ। চলচ্চিটির চিত্রায়নে ছিলেন মিশুক মুনীর। এরপর দেখনো হয় তারেক মাসুদের চলচ্চিত্র ‘নরসুন্দর’। ’৭১ সালের ঘটনার প্রতীকী চিত্রায়ন এই স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি। টানটান উত্তেজনাময় কাহিনী, সিনেমাটোগ্রাফী, ক্যামেরার কাজ আর সাউন্ড সব মিলিয়ে মনে হয় এর দাড়িওয়ালা নায়কের সঙ্গেই পুরোটা সময় জুড়ে আছেন। এছাড়া চলচ্চিত্রে মুজাহীদ ও গোলাম আজমের রেডিও বার্তা শোনানোর মাধ্যমে বুঝিয়ে দেয়া হয় ’৭১ এর দেশদ্রোহী কারা ছিল। চলচ্চিত্র দুটি প্রদর্শনের পর মিলনায়তনে দর্শকদের অনুরোধ করা হয় নিহত চলচ্চিত্র কর্মীদের স্মরণে প্রদীপ প্রজ্বলনে অংশ নেয়ার জন্য। প্রদীপ প্রজ্বলনের পর শুরু হয় স্মরণসভা। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে সভায় আলোচনা করেন চলচ্চিত্রকার মোরশেদুল ইসলাম, জাঈদ আজিজ, চলচ্চিত্র গবেষক ড.সাজেদুল আউয়াল, মিশুক মুনীরের সহোদর আসিফ মুনীর প্রমুখ। সব শেষে প্রদর্শিত হয় তারেক মাসুদ নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘আদম সুরত’।
×