ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গল টেস্ট, ঘূর্ণিজাদুতে (৭/৪৮) শেষ দৃশ্যের ‘নায়ক’ রঙ্গনা হেরাথ, ম্যাচসেরা চান্দিমাল (৫৯ ও ১৬২*), পরাজয়ের জন্য দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিং ব্যর্থতাকেই দায়ী করলেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি

শ্রীলঙ্কার নাটকীয় জয়

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ১৬ আগস্ট ২০১৫

শ্রীলঙ্কার নাটকীয় জয়

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এজন্যই ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা, যার রন্ধ্রে রন্ধ্রে লুকিয়ে রোমাঞ্চ। টি২০’র আধিপাত্যে আভিজাত্যের টেস্ট তার জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে, বিশ্বজুড়ে চলছে এমনই রব। দর্শক উপস্থিতির সঙ্গে বিজ্ঞাপন-বাণিজ্য-গ্ল্যামার অনেক কিছু জড়িত, কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। মাঠের খেলায় টেস্ট যেন আরও আকর্ষণীয়! যেখানে সাদা পোশাকের লড়াইয়ে ড্র’র পরিবর্তে অহরহ ফল দেখছে ক্রিকেট। দেখল আরও একবার, থাকল রোমাঞ্চের সকল পসরা। একপর্যায়ে দ্বিতীয় দিনে জয়ের ঘ্রাণ পাওয়া ভারত হারল অবিশ্বাস্যভাবে, নাটকীয় জয়ে শেষ হাসি লঙ্কানদের! প্রথম টেস্টে ৬৩ রানের দারুণ জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের দল। কুমার সাঙ্গাকারাকে কাঁধে তুলে উল্লাসে মাতলেন সতীর্থরা। গলে এটিই যে লঙ্কান মহাতারকার শেষ ম্যাচ, এরচেয়ে ভাল উপহার আর কিই বা হতে পারত। প্রথম ইনিংসে ১৮৩ রানে গুটিয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংসে করে ৩৬৭ রান। অপরাজিত ১৬২ রানের অন্যবদ এক ইনিংস খেলে লঙ্কানদের ম্যাচে ধরে রাখেন চান্দিমাল, শেষ পর্যন্ত যা হয়ে ওঠে জয়ের নিয়ামক। শিখর ধাওয়ান ও বিরাট কোহলির জোড়া সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে ৩৭৫ রান করা ভারতের সামনে দ্বিতীয় ইনিংসে জয়ের জন্য ১৭৬ রানের লক্ষ্য নির্ধারিত হয়। শুক্রবার তৃতীয় দিনের শেষবেলায় ২৩ রান তুলতেই লোকেশ রাহুলের উইকেট হারায় সফরকারীরা। কোহলি, ধাওয়ান, রোহিত শর্মা, অজিঙ্কা রাহানের মতো ব্যাটসম্যান, হাতে ৯ উইকেট ও পুরো দিনÑ কে ভেবেছিল, ১১২ রানে গুটিয়ে গিয়ে এভাবে অসহায় আত্মসমর্পণ করবে ক্রিকেটের মোড়লরা! খোদ লঙ্কানরাও কি তা ভেবেছিল? সব ভাবনা এলোমেলো করে দিলেন একজন, মুত্তিয়া মুরলিধরনের অবসরের পর যিনি একাই টানছেন লঙ্কান বোলিং ডিপার্টমেন্ট। জ্বলে উঠলেন সেই রঙ্গনা হেরাথ। স্বাগতিক এই বোলারের ঘূর্ণিবিষে নীল হলেন কোহলিরা। কেউ দাঁড়াতে পারেননি, কেউ না। ১ উইকেটে ২৩ রান নিয়ে শুরু করা সফরকারী শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন দিনের ‘নায়ক’ হেরাথই। তুলে নেন আগের দিন ‘নাইটওয়াচম্যান’ হিসেবে নামা ইশান্তকে (১০)। গলের চিরায়ত নিয়মে চতুর্থ ইনিংসে স্পিনারদের মোকাবেলা যে কতটা কঠিন, তা হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন হেরাথ-থারিন্ডু কুশল। স্বভাববিরুদ্ধ স্টাইলে ২৮ রান পেতে ৮৩টি বল মোকাবেলা করতে হয় ধাওয়ানকে! ১১ রানের ব্যবধানে রোহিত (৪) ও কোহলি (৩) সাজঘরে ফিরলে কোণঠাসা হয়ে পড়ে সফরকারীরা। ২৮তম ওভারে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে ধাওয়ান যখন কুশলের শিকারে পরিণত হন, ৬০ রানে ৫ উইকেট নেই ভারতের! এরপর আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি তারা। অবিশ্বাস্য দুই স্পেলে ঋদ্ধিমান সাহা (২), হরভজন সিং (১), রবিচন্দ্রন আশ্বিন (৩) ও অজিঙ্কা রাহানেকে (৩৬) ফিরিয়ে অতিথিদের গর্তে ঢুকিয়ে দেন হেরাথ। ১৫ রান করা অমিত মিশ্রর প্রাণ বধ করেন থারিন্ডু। ফল : ৪৯.৫ ওভারে ভারতকে ১১২ রানে গুটিয়ে দিয়ে অবিশ্বাস্য জয়। নিজের কৃতিত্বে সতীর্থদের ভাগিদার করেছেন হেরাথ। আর একটিমাত্র ম্যাচ, বৃহস্পতিবার কলম্বোয় শুরু হওয়া সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে চিরতরে বিদায় জানাবেন সাঙ্গাকারা। অধিনায়ক ম্যাথুস বলেন, ‘প্রথম ইনিংসে ব্যর্থতার পর এভাবে ঘুড়ে দাঁড়ানো সহজ নয়। দ্বিতীয় ইনিংসে চান্দিমাল অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করেছে। বল হাতে হেরাথ ছিল সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন। এবার সাঙ্গাকে বিদায়ী উপহার দিতে সিরিজটা জিততে চাই।’ অন্যদিকে, হারের পর হতাশ কোহলি বলেন, ‘৬০ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর আর কিই বা করার থাকে! ম্যাথুসদের কৃতিত্ব দিতে হবে।’
×