ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নেতৃত্বে মেধাশূন্যতা এবং ছাত্র সংসদ না থাকা;###;সাংস্কৃতিক চর্চা অনুপস্থিত;###;নেতৃত্বে মেধাশূন্যতা এবং ছাত্র সংসদ না থাকা;###;সাংস্কৃতিক চর্চা অনুপস্থিত;###;ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে নেতৃত্বের মেধাশূন্যতা কাটাতে এবং ছাত্র সংসদ নির্বাচন চালু করতে হবে

এ সময়ে ছাত্র রাজনীতি

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৭ আগস্ট ২০১৫

এ সময়ে ছাত্র রাজনীতি

মুহাম্মদ ইব্রাহীম সুজন ॥ দেশের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামকে সফল করতে এ দেশের ছাত্র নেতৃবৃন্দ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ছাত্র রাজনীতির অতীতের সেই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস বর্তমানে প্রায় অনুপস্থিত বললেই চলে। অধিকাংশ ছাত্রসংগঠন গঠনতন্ত্রের কোন তোয়াক্কা করছে না। তাদের নির্দিষ্ট কোন কর্মসূচীও নেই। কোন কোন সংগঠন শুধু ‘সংবাদ বিজ্ঞপ্তি’নির্ভর অস্তিতেই টিকে আছে, রাজপথে দেখা নেই। দলীয় লোকবলশূন্যতার কারণে অধিকাংশ সংগঠনেরই সাংগঠনিক অবস্থা বেশ নাজুক। অছাত্র ও বিবাহিতদের আধিপত্য, শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কর্মসূচীর অভাবসহ দেশের অধিকাংশ ছাত্র সংগঠনগুলোই নানা সমস্যায় জর্জরিত। সংগঠনের আদর্শ ও লক্ষ্য থেকে দূরে সরে এসে ছাত্র রাজনীতি এখন ব্যবহৃত হচ্ছে ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার ‘যন্ত্র’ হিসেবে। দুয়েকটি ছাত্র সংগঠন বাদে অধিকাংশই টিকে আছে নামমাত্র। এমন অবস্থায় দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র সংসদ চালু করলে ছাত্র রাজনীতিকে অতীতের ন্যায় পুনর্জীবিত করা সম্ভব, এমনটি মনে করছেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সাবেক নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্টজনেরা। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের অভাবেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, ছাত্র রাজনীতির বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত দুঃখজনক। ছাত্র সংসদ সচল না থাকার কারণে যে দল ক্ষমতায় থাকে তাদের ছাত্র সংগঠনই প্রভাব বিস্তার করে। অন্যরা তেমন পেরে ওঠেন না। ছাত্র নেতৃত্বে মেধাশূন্যতার কারণও বর্তমান এই অবস্থার জন্য দায়ি। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ছাত্র সংসদগুলো অকার্যকর থাকার কারণে সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং সামগ্রিকভাবে নেতৃত্ব গড়ে উঠছে না। বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা ছাত্র সংসদ ছাড়া ভাবতেই পারি না। আমাদের সময়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচন কখনও বন্ধ হয়ে থাকেনি। তখন ছাত্র সংসদ নির্বাচন উৎসবের মতো ছিল। সারা বছর নানা কর্মকা-ে আমরা ব্যস্ত থাকতাম। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা, বিতর্ক, এক হলের সঙ্গে অন্য হলের প্রতিযোগিতা ইত্যাদি বিষয়ের মাধ্যমে নিজেদের সমৃদ্ধ করে তুলতাম। ছাত্র নেতৃত্ব গড়ার এই কারখানাকে দীর্ঘ প্রায় ২৪ বছর ধরে অচল করে রাখা হয়েছে। দেশে নামে-বেনামে অসংখ্য ছাত্র সংগঠন থাকলেও প্রভাব বিস্তারকারী পূর্ণাঙ্গ ছাত্র সংগঠন রয়েছে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ), বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বাংলাদেশ ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী ইত্যাদি সংগঠন। এসব সংগঠনের মধ্যে শুধু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগই বিপুল নেতাকর্মী ও নিজস্ব কর্মসূচী নিয়ে নিয়মিত মাঠে রয়েছে। তবে সংগঠনটির পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোন কর্মসূচী দেখা যায় না। এক সময় ঐতিহ্যবাহী জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলও এখন নিষ্ক্রীয় ও নামসর্বস্ব সংগঠনে পরিণত হয়েছে। ইসলামী ছাত্রশিবির কোনভাবেই জামায়াতের রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি। ছাত্রদল ও শিবির সম্প্রতি সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামে সহিংসতায় জড়িয়ে প্রশাসনের চাপে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। শিবিরের কর্মকা- অনেকটাই আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেছে। প্রগতিশীল চার-পাঁচটি ছাত্র সংগঠন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন, বর্ষবরণে নারীর প্রতি যৌন হয়রানিসহ দেশের বিভিন্ন যৌন হয়রানির ঘটনার বিচার, শিক্ষার প্রাইভেটাইজেশন, ইউজিসির কৌশলপত্র, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যাটসহ শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কয়েকটি দাবিতে পৃথক পৃথকভাবে আন্দোলন চালিয়ে গেলেও এসব দাবিতে তাদের একত্রিত হয়ে আন্দোলন করতে দেখা যায় না। নিজেদের মধ্যে বিভক্তি, মতবিভেদ, আদর্শগত দূরত্ব নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা। ছাত্র মৈত্রী থেকে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র ফ্রন্ট (মার্কসবাদী) থেকে ছাত্র ফ্রন্ট (খালেকুজ্জামানপন্থী), ছাত্র ফেডারেশনও কয়েকভাগে বিভক্ত। এ রকম বিভক্তিতে মূল সংগঠনগুলো আরও দুর্বল হয়ে পড়েছে। বাকিগুলোও চলছে নামমাত্র। নেতাকর্মী নেই, নেতাকর্মীদের ছাত্রত্ব নেই, শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট আন্দোলন নেই। গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা না করে সংগঠনগুলো অছাত্র, বিবাহিত, চাকরিজীবী ও মামলার আসামিদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। জাতীয় পার্টির অঙ্গ সংগঠন ছাত্র সমাজের কোন কর্মকা- চোখে পড়ে না একেবারেই। আরও কিছু ছাত্র সংগঠনের নাম পাওয়া যায় যা গুটিকয়েক ব্যক্তিবিশেষের দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। বিশেষ বিশেষ দিন ও উপলক্ষে তাদের কর্মসূচী চোখে পড়ে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ ছাত্র সংহতি এবং ছাত্র ঐক্য ফোরাম। বড় কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এসব সংগঠন ও এদের কার্যক্রম নিয়ে কথা হয় জনকণ্ঠের। এসব সংগঠন এবং সংগঠনের কার্যক্রম সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য জানেন না তারা। ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী কমিটির সহসভাপতি জয়দেব নন্দি জনকণ্ঠকে বলেন, ছাত্রলীগ এবং আরও কয়েকটি বাম ছাত্রসংগঠন ছাড়া বাকি সংগঠনগুলোর কার্যক্রম চোখে পড়ে না। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের শুরুর দিকে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে একত্রিত হওয়া ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি ছিল। এ সময় আরও ১০-১৫টি ছাত্রসংগঠনের ব্যানার দেখা গিয়েছিল। ছাত্রলীগ চলে আসার পর সেসব ব্যানার ও সংগঠনগুলোও হারিয়ে যায়। ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজনীয়তার কথা ব্যাখ্যা করে তিনি ছাত্র সংগঠনগুলোকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান। ১৯৮৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) কর্তৃক গঠিত ‘পরিবেশ পরিষদ’ তৎকালীন সময়ে সব সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে দুটি ছাত্র সংগঠনের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে একটি সমঝোতায় আসেন। এর ভিত্তিতে যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গী সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির’ এবং স্বৈরাচারী সংগঠন হিসেবে জাতীয় পার্টির ছাত্রসংগঠন ‘ছাত্রসমাজ’, এই দুটি ছাত্র সংগঠনের রাজনীতি প্রকাশ্যে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে সংগঠন দুটি আর কোনদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। তবে গোপনে গোপনে ইসলামী ছাত্রশিবির তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ‘সংবাদ বিজ্ঞপ্তি’নির্ভর অছাত্রদের সংগঠন ছাত্রদল ॥ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের গঠনতন্ত্রের ৬:১-এর (খ) ধারায় বলা আছে, ছাত্ররাই শুধু সংগঠনটির সদস্য হতে পারবেন। গঠনতন্ত্রে যা-ই থাকুক, বাস্তবে ছাত্রদলের নেতৃত্বে ছাত্ররা নেই। এর বদলে সংগঠনটি চালাচ্ছেন অছাত্র ও বয়স্করা। গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা না করে ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর মধ্যরাতে সংগঠনটির ২০১ সদস্যের ‘আংশিক’ কমিটি গঠন করা হয় অথচ সংগঠনটির গঠনতন্ত্রের ১৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে কেন্দ্রীয় কমিটি হবে ১৫১ সদস্যের। এই কমিটিতে সভাপতি করা হয় রাজিব হাসানকে এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয় আকরামুল হাসানকে। কমিটি গঠনের পর প্রায় দশ মাস অতিবাহিত হতে চললেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করেনি ছাত্র সংগঠনটি। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে এখন পর্যন্ত কমিটি দেয়া হয়নি। ফলে দেশের সর্বোচ্চ এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে কার্যত ছাত্রসংগঠনটির কোন কার্যক্রমই নেই। এর আগে ২০১২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলকে সভাপতি এবং হাবিবুর রশীদ হাবিবকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই কমিটির পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সুপার ফাইভ কমিটি দেয়া হলেও সেটিকেও পূর্ণাঙ্গ করা হয়নি। ঢাবির বিভিন্ন হল কমিটি হয় না প্রায় দেড় যুগ ধরে। ইয়াবা ও মাদকসহ গ্রেফতার হওয়া একাধিক মামলার আসামি ছাত্র সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব হাসান বর্তমানে কারাবন্দী আছেন। তার অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে সহসভাপতি মামুনুর রশীদ মামুন। দলীয় ও নিজস্ব কর্মসূচীর বাইরে শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোন কর্মসূচী নিয়ে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দকে রাজপথে নামতে দেখা যায় না। এমনকি ছাত্র সংসদ সচলের দাবিতেও কোন ধরনের তৎপরতা দেখা যায়নি। অধিকাংশ কর্মসূচীই পালন করা হয় ‘দ্রুততম’ সময়ের মধ্যে। ঝটিকা মিছিল শেষ হতে না হতেই ব্যানার মাটিতে ফেলে কর্মসূচীস্থল ত্যাগ করে যান সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। তবে সাংবাদিকদের কাছে প্রেস রিলিজ বা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয় নিয়মিত। ‘ভুলে ভরা’ সেসব সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিত বিভিন্ন কর্মসূচীর ছবিসহ কর্মসূচীর বিবরণ লিখে পাঠানো হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রসংগঠনটির নেতৃবৃন্দের প্রায় একই অবস্থা বিরাজমান। গত ২৫-২৬ জুলাই রাজধানীর সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত ছাত্রলীগের ২৮তম কেন্দ্রীয় সম্মেলনে দাওয়াত পেয়েও তাতে যোগ দেয়নি সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। ছাত্র সংগ্নটিতে এ রকম স্থবির অবস্থার জন্য বর্তমান সরকারকে দায়ী করে সংগঠনের দফতর সম্পাদক মোঃ আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা কোনকিছুই করতে পারি না। রাস্তায় নামলে পুলিশ আমাদের গুলি করে। অকারণে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভিন্ন মামলায় আমাদের আসামি করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে দেয়া হয় না। তবে আমরা বসে থাকছি না, এই স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রসংগঠনগুলোর সহাবস্থানের দাবি জানান। নতুন নেতৃত্ব পেয়ে ‘আত্মতুষ্টিতে’ ছাত্রলীগ ॥ গঠনতন্ত্রে উল্লিখিত দুই বছর সময় পার করে আরও দুই বছর অর্থাৎ মোট চার বছর পর এ বছরের ২৫-২৬ জুলাই লোক দেখানো ভোটে কথিত ‘সিন্ডিকেট’ নির্ধারিত প্রার্থীরাই ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্বে আসে। নতুন নেতৃত্ব গ্রহণ করে সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। রাত-দিন তাদের সময় কাটছে বিভিন্ন সংগঠন, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সংবর্ধনা গ্রহণ করে। কেন্দ্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণে নতুন নেতৃত্ব পেয়ে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা এখন আত্মতুষ্টিতে ব্যস্ত। নব নির্বাচিত নেতৃত্বদের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নেতাকর্মীরা দেখা করছেন, কুশল বিনিময়ও চলছে। এর সঙ্গে চলছে ‘ফটোসেশন’। জাতীয় শোকের মাস আগস্টে ইতোমধ্যে বেশকিছু আলোচনা সভা ও সেমিনারে অংশ নিয়েছেন তারা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করে থাকে ছাত্রসংগঠনটি। গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন অন্তর্কোন্দল ও সংঘর্ষে সংগঠনটির বেশ ভাবমূর্তিও ক্ষুণœ হয়েছে। তবে সংগঠনটির বিপুলসংখ্যক কর্মী ও সমর্থক রয়েছেন যা অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃবৃন্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের মাস্টার্স পর্যায়ের নিয়মিত ছাত্র। ছাত্র রাজনীতির সূতিকাগার খ্যাত মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রসংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ প্রতিদিনই উপস্থিত হন। ছাত্রসংগঠন হলেও শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রশাসনবিরোধী কোন আন্দোলনে সরাসরি অংশ নেয়নি সংগঠনটি। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ চালুর প্রসঙ্গে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ কথা বললে বিরোধিতা না করলেও সক্রিয় আন্দোলনে নামতে নারাজ তারা। নির্দিষ্ট কিছু ইস্যু নিয়ে ব্যস্ত ছাত্র ইউনিয়ন ॥ বৈষম্যহীন, বিজ্ঞানভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল ধারার শিক্ষানীতির জন্য আন্দোলনকারী ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ১৯৫২ সালের ২৬ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হয়। এদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় সংগঠনটির নিজস্ব গেরিলা বাহিনী ছিল। এটি দেশের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ছাত্র ও যুব সংগঠনের সদস্য হিসেবে বিশ্বজুড়েও কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। অন্যান্য কার্যক্রমের মধ্যে এটি প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারিতে ‘জয়ধ্বনি’ নামক সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পত্রিকা প্রকাশ করে থাকে। সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি হাসান তারেক ও সাধারণ সম্পাদক লাকি আক্তার। তাদের দুজনই নামমাত্র ছাত্রত্ব টিকিয়ে রেখেছেন। নির্দিষ্ট কিছু ইস্যু নিয়ে আন্দোলন সংগ্রামে ব্যস্ত সময় পার করছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন, বর্ষবরণে নারীর ওপর যৌন হয়রানিসহ দেশের বিভিন্ন যৌন হয়রানির ঘটনার বিচার, শিক্ষার প্রাইভেটাইজেশন, ইউজিসির কৌশলপত্রসহ শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট আন্দোলন করেছে সংগঠনটি। দুর্বল কমসূচীর কারণে তাদের দাবি অনুযায়ী কোন আন্দোলনই তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। আগামী ১৩-১৫ সেপ্টেম্বর সংগঠনটির ৩৭তম কেন্দ্রীয় সম্মেলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে অনুষ্ঠিত হবে। এ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। ছাত্র ফ্রন্ট, জাসদ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে বয়স্ক, অছাত্ররা ॥ ১৯৮৪ সালের ২১ জানুয়ারি তৎকালীন স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র গণআন্দোলনের সময় সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট আত্মপ্রকাশ করে। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠালগ্নে ঘোষণা দেয় ‘শোষণ মুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজ গড়ার লক্ষ্যে সার্বজনীন, বৈষম্যহীন, সেক্যুলার, বিজ্ঞানভিত্তিক একই পদ্ধতির গণতান্ত্রিক শিক্ষার দাবিতে বাংলাদেশে আন্দোলন পরিচালনা করবে। ছাত্রসংগঠনটির সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৩ সালে। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের সময় সংগঠনটি দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একাংশের সভাপতি থাকেন সাইফুজ্জামান সাকন এবং অপর অংশের সভাপতি হন জনার্দন দত্ত নান্টু। কেন্দ্রীয় ও ঢাবি শাখার নেতৃবৃন্দের কারও ছাত্রত্ব নেই। এভাবেই চলছে সংগঠনটি। জাসদ ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি মুহাম্মদ শামসুল ইসলাম সুমনের ছাত্রত্ব নেই, বিয়ে করে ঘর-সংসার করছেন। ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল মুহাম্মদ শামসুল ইসলাম সুমনকে সভাপতি ও শাহজাহান আলী সাজুকে সাধারণ সম্পাদক করে মোট ৪৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠিত হয়। এর আগের কমিটিতে সুমন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সংগঠনের সার্বিক কার্যক্রম ও অবস্থা সম্পর্কে মুহাম্মদ শামসুল ইসলাম সুমন জনকণ্ঠকে বলেন, অতীতের মতো বর্তমানেও ছাত্রলীগ জাসদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী ছাত্র জোট, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদসহ বিভিন্নভাবে আমরা অন্য ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করে থাকি। এছাড়া ছাত্র সংসদ নির্বাচন, শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে সক্রিয় অংশগ্রহণসহ আমাদের কিছু নিজস্ব কর্মসূচীও রয়েছে। বাকিসংগঠনগুলোর মূল সমস্যা লোকবলশূন্যতা ॥ ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন এবং ছাত্রদলের বাইরে অন্য ছাত্রসংগঠনগুলো শিক্ষার্থীদের কাছে তেমন জনপ্রিয় নয়। তাই এসব ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীর সংখ্যাও তেমন বেশি নয়। ১৯৮০ সালের ৬ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় জাতীয় ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় ছাত্র দলের দুই অংশ এবং ছাত্র ইউনিয়নের ঐতিহাসিক ঐক্যের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী। এটির বর্তমান সভাপতি আবুল কালাম আজাদ এবং সাধারণ সম্পাদক অর্ণব দেবনাথ। এদের কারও ছাত্রত্ব নেই। সম্প্রতি ছাত্র সংগঠনটির তৎপরতাও তেমন চোখে পড়ে না। ছাত্র মৈত্রী গঠনের দিনেই গঠিত হয় বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী। সংগঠনটির সাম্প্রতিক তৎপরতা একেবারেই চোখে পড়ে না। পূর্ণাঙ্গ কমিটিও নেই। কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক ফয়সাল ফারুক অভিক। তিনিও নিয়মিত ছাত্র নন। লোকবল নেই বললেই চলে। ১৯৮৫ সালের ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন গঠিত হয়। বর্তমানে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সৈকত মল্লিক ও সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম সোহেল। এদের কারও ছাত্রত্ব নেই। সংগঠনটি দেশের শ্রমিক শ্রেণীর অধিকার রক্ষায় কার্যক্রম পরিচালনার কথা বললেও সম্প্রতি এ সংশ্লিষ্ট কোন কর্মসূচী নিয়ে এদের মাঠে দেখা যায়নি। ছাত্র সংগঠনগুলোর কার্যক্রম সম্পর্কে ছাত্র মৈত্রীর সাবেক সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু জনকণ্ঠকে বলেন, ছাত্র রাজনীতিতে ঐক্যর জায়গা নষ্ট হয়ে গেছে। ছাত্র সংগঠনগুলো সাধারণ ছাত্রদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট আন্দোলনগুলোতে নিজেদের ওইভাবে সম্পৃক্ত করতে পারেনি। ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট আন্দোলন করতে হবে।
×