ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ আপীল বিভাগে মীর কাশেম আলীর বিষয়ে আদেশ হয়নি

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৭ আগস্ট ২০১৫

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ আপীল বিভাগে মীর কাশেম আলীর বিষয়ে আদেশ হয়নি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জামায়াতের নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর কাশেম আলীর আপীল বিষয়ে কোন আদেশ হয়নি। মামলাটি রবিবারের কার্যতালিকায় আপীলের আদেশের জন্য ধার্য ছিল। আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ না বসায় কোন আদেশ হয়নি বলে জানা গেছে। বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন এ্যাটর্নি জেনারেল। আগামীতে আবারও তালিকায় এলে মামলার শুনানি হবে। এ বিষয়ে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, রবিবারের কার্যতালিকায় মীর কাশেমের মামলাটি আপীল বিভাগের কার্যতালিকায় ছিল। আদেশের জন্য আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ না বসায় এ মামলার শুনানি হয়নি। তিনি বলেন, আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ মামলার ব্যাপারে পরবর্তীতে আদেশ দেবেন। রবিবার বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার নেতৃত্বে দুই সদস্যের বেঞ্চ এজলাসে বসেন। অন্য বিচারপতি ছিলেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ঢাকার বাইরে থাকায় রবিবার আপীল বিভাগে শুধু একটি মামলার শুনানি করা হয়। তালিকার ২ নম্বর থেকে সর্বশেষ পর্যন্ত তালিকায় আসার পর শুনানি হবে। ২৮ মে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপীল বিভাগের বেঞ্চ মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত মীর কাশেম আলীর আপীলের মামলার শুনানি হয়। পরে আদালত আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষকে আপীলের সার-সংক্ষেপ দাখিলের জন্য আরও চার সপ্তাহের সময় দেন। এর আগে আরও চারটি মামলা চূড়ান্ত আপীল নিষ্পত্তি হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী। মীর কাশেম আলীর মামলাটি হবে ষষ্ঠ মামলা। ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদ- থেকে খালাস চেয়ে মীর কাশেম আলীর পক্ষে ২০১৪ সালের ৩০ নবেম্বর সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করা হয়। আপীলে মীর কাশেম আলীর পক্ষে এ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন তুহিন। পরে আইনজীবী শিশির মোহাম্মদ মনির জানান, ‘মীর কাশেম আলীর পক্ষে ১৮১টি গ্রাউন্ডে মৃত্যুদ- থেকে খালাস চেয়ে এ আপীল করা হয়েছে। দেড় শ’ পৃষ্ঠার মূল আপীলসহ ৫ ভলিয়মে ১ হাজার ৭৫০ পৃষ্ঠায় বিভিন্ন ডকুমেন্ট পেশ করা হয়েছে। একই বছরের ২ নবেম্বর তাকে মৃত্যুদ- দিয়ে রায় ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রায়ে বলা হয়, প্রসিকিউশন আনীত ১৪ অভিযোগের মধ্যে ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৪ নম্বর অভিযোগে মীর কাশেম আলী দোষী প্রমাণিত হয়েছেন। তবে ১, ৫, ৮ ও ১৩ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে এসব অভিযোগ থেকে খালাস (অব্যাহতি) দেয়া হয়। প্রমাণিত অভিযোগগুলোর মধ্যে ২ নম্বর অভিযোগে তাকে ২০ বছরের কারাদ- দেয়া। ৩, ৪, ৬, ৭, ৯ ও ১০ নম্বর অভিযোগে তাকে ৭ বছর করে মোট ৪২ বছর কারাদ- দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ১৪ নম্বর অভিযোগ ১০ বছরের কারাদ- দেয়া হয়েছে। এই ৮ অভিযোগে তাকে সর্বমোট ৭২ বছর কারাদ- দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ আসামি মীর কাশেম আলীকে অভিযোগ ১১ ও ১২ তে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- প্রদান করেছেন। চার্জ ১১ সর্বসম্মতিতে এবং চার্জ ১২ বাই মেজরিটিতে মৃত্যুদ- প্রদান করেছেন। চার্জ-১১ : শহীদ জসিমসহ মোট ৬ জনকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও হত্যা করে লাশ গুম। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী দখলদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষকে ধরে নিয়ে বিভিন্ন নির্যাতন কেন্দ্রে আটক রেখে নির্যাতন ও অনেককে হত্যা করে। উক্ত ঘটনার ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের রমজানের ঈদের দিনের পর যে কোন সময় মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে চট্টগ্রাম শহরের অজ্ঞাত স্থান থেকে আটক ও অপহরণ করে পাকিস্তানী দখলদার সেনাবাহিনীর দোসর আলবদর বাহিনীর সদস্যরা আসামি মীর কাশেম আলীর নির্দেশে ও ইঙ্গিতে তার নিয়ন্ত্রণাধীন চট্টগ্রাম মহানগরী এলাকার আন্দরকিল্লার ডালিম হোটেল নির্যাতন কেন্দ্রে নিয়ে যায়। নির্যাতন কেন্দ্রে আটক রেখে তাকে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। ১৯৭১ সালের ২৮ নবেম্বর আসামি মীর কাশেম আলীর নেতৃত্বে ও নির্দেশে আল বদর বাহিনীর সদস্যরা ডালিম হোটেলের ছাদে জসিমকে নির্যাতন করে হত্যা করে। তাদের নির্যাতনে নিহত অজ্ঞাতনামা আরও ৫ (পাঁচ) জনের লাশের সঙ্গে জসিমের লাশ ঐ দিন সন্ধ্যাবেলা আসামির নির্দেশে ও ইঙ্গিতে তার নেতৃত্বাধীন আল বদর বাহিনীর সদস্যরা কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দিয়ে লাশ গুম করে। চার্জ-১২ : জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীসহ তিনজনকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন ও পরবর্তীতে রঞ্জিত দাস প্রকাশ লাতু ও টুন্টু সেন প্রকাশ রাজুকে হত্যার পর লাশ গুম করা হয়। ১৯৭১ সালের নবেম্বর মাসের যে কোন দিন যে কোন সময় চট্টগ্রাম শহরে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় হাজারী গলির ১৩৯নং বাসা থেকে ভিকটিম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (বর্তমানে মৃত), একই গলির ১১৪ নং বাসা থেকে রঞ্জিত দাস ওরফে লাতু ও টুন্টু সেন ওরফে রাজুকে আসামি মীর কাশেম আলীর নেতৃত্বাধীন আল বদর বাহিনীর লোকজন তারই নির্দেশে ও ইঙ্গিতে আটক ও অপহরণ করে তার নিয়ন্ত্রণাধীন চট্টগ্রাম মহানগরী এলাকার আন্দরকিল্লার আল বদর বাহিনীর নির্যাতন কেন্দ্র ডালিম হোটেলে নিয়ে যায় এবং সেখানে তারই নির্দেশে তার নেতৃত্বাধীন বদর বাহিনীর সদস্যরা তাদের নির্যাতন করে। নির্যাতন চালানোর একপর্যায়ে ডালিম হোটেলে আটকের পরের দিন বিকেলে আসামির নির্দেশে ও ইঙ্গিতে ভিকটিম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে তারই নেতৃত্বাধীন আল বদর বাহিনীর সদস্যরা ছেড়ে দিলেও অপর দু’জন লাতু ও রাজুকে ছেড়ে দেয়নি। পরবর্তীতে তাদের আসামি ও তার কর্তৃত্বাধীন আল বদর বাহিনীর সদস্যরা হত্যা করে লাশ গুম করে। ভিকটিমদের আটক করাকালে আসামি তার নেতৃত্বাধীন আল বদর বাহিনীসহ তাদের দোসর রাজাকার, আলশামস ও দখলদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে নিয়ে হাজারী লেন এলাকায় স্বর্ণের দোকানপাটসহ বিভিন্ন দোকানপাটে এবং এলাকায় স্থিত প্রায় ২৫০/৩০০টি পরিবারের প্রত্যেকের বাড়িঘরে লুটপাট চালায় ও অধিকাংশ ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। আসামি তার দলবল নিয়ে এলাকায় ব্যাপক নির্যাতন চালিয়ে অধিকাংশ পরিবারকে বাড়িঘর ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিতে এবং শতাধিক পরিবারের সদস্যকে ভিটেমাটি ছেড়ে দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যেতে বাধ্য করে। মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় ট্রাইব্যুনালের আদেশে ২০১২ সালের ১৭ জুন মীর কাশেম আলীকে গ্রেফতার করা হয়। সে থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
×