ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সম্ভাবনাময় ১৪ পণ্য নির্বাচন

রফতানি বাড়াতে ‘এক জেলা এক পণ্য কর্মসূচী’

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৭ আগস্ট ২০১৫

রফতানি বাড়াতে ‘এক জেলা এক পণ্য কর্মসূচী’

এম শাহজাহান ॥ রফতানি বাড়াতে ‘এক জেলা এক পণ্য’ কর্মসূচীতে জোর দেয়া হচ্ছে। এই কর্মসূচী এগিয়ে নিতে দেশের ৪১ জেলায় রফতানি সম্ভাবনাময় ১৪ পণ্য নির্বাচন করেছে সরকার। একই সঙ্গে মাথার চুল, চালের কুড়া, কুইচ্যা এবং কাঁকড়ার মতো অপ্রচলিত পণ্য রফতানি বাড়ানোর কৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে। দেশের প্রত্যেকটি জেলা থেকে অন্তত একটি পণ্য রফতানি করা হবে। মাত্র ছয়টি পণ্যের রফতানি বাজার পাঁচটি দেশে সীমাবদ্ধ আছে। নিটওয়্যার-ওভেন, হিমায়িত মৎস্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, কৃষিজাত পণ্য, হোমটেক্সটাইল এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যÑ এ ছয়টি খাতের ওপরই বাংলাদেশের রফতানি আয়ের ৯৪ ভাগ নির্ভরশীল। এসব পণ্য রফতানি হচ্ছে আবার যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও স্পেনে। রফতানি বাণিজ্যের এই চিত্রকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। আর তাই এবার রফতানি বাড়াতে পণ্য বহুমুখীকরণ ও এক জেলা এক পণ্য কর্মসূচী প্রোগ্রাম এগিয়ে নেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, ইপিবি দেশজ কাঁচামালনির্ভর আঞ্চলিক পণ্য উন্নয়নের মাধ্যমে পণ্য তালিকায় নতুন পণ্য সংযোজন করেছে। প্রাথমিকভাবে ৪১ জেলায় ১৪ পণ্য উৎপাদনের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। এসব পণ্য রফতানি করা হবে। এই ১৪ পণ্য হচ্ছেÑ আগর উড ও আগর আতর উৎপাদন হবে মৌলভীবাজার, খুলনায় কাঁকড়া, নাটোরে ভেষজ উদ্ভিদ, দিনাজপুর, নওগাঁ ও কুষ্টিয়ায় সরু ও সুগন্ধি চাল, পঞ্চগড়ে অর্গানিক চা, বান্দরবানে রাবার, সুনামগঞ্জ, ফেনী, ফরিদপুর, জামালপুর, রংপুর ও কুড়িগ্রামে হস্তশিল্প, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা ও রাঙ্গামাটি-হস্তচালিত তাঁতশিল্প, দিনাজপুরে পাঁপড়, জয়পুরহাট, চাঁদপুর, বগুড়া, নীলফামারী, মুন্সীগঞ্জ, মেহেরপুর, যশোর, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, ঝিনাইদহ ও নারায়ণগঞ্জে-তাজা শাকসবজি, নেত্রকোনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী ও নড়াইলে মাছ, চট্টগ্রামে চামড়া ও চামড়াজাতপণ্য, খাগড়াছড়িতে আনারস ও চুয়াডাঙ্গায় পান। জানা গেছে, নির্বাচিত পণ্যের মধ্যে পাঁপড়, আগর উড এবং রাবার রফতানি উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। পাঁপড়ের স্বাস্থ্যসম্মত উৎপাদন নিশ্চিত করার জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান কর্মসূচী চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যে পাঁপড়ের ফুডভ্যালু পরীক্ষায় ইতিবাচক এসেছে। শীঘ্রই পাঁপড় রফতানি প্রক্রিয়া শুরু করবে ইপিবি। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সম্প্রতি জেলা প্রশাসক সম্মেলনে বলেন, দেশের রফতানি পণ্যে বৈচিত্র্যের মাধ্যমে আয় বাড়াতে প্রতিটি জেলা থেকে অন্তত একটি করে পণ্য রফতানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রতিটি জেলা থেকে কমপক্ষে একটি করে পণ্য নির্বাচন করে সে পণ্যটি রফতানির ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, এক জেলা, এক পণ্য কর্মসূচীর আওতায় এভাবেই রফতানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ এখন নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ। আগামী তিন বছরে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। তাই রফতানি বাড়াতে নতুন নতুন কৌশল গ্রহণ করছে সরকার। এজন্য পণ্য বহুমুখীকরণের পাশাপাশি নতুন বাজারের সন্ধান করা হচ্ছে। এদিকে মাথার চুল, চালের কুড়া, কুইচ্যা এবং কাঁকড়ার মতো অপ্রচলিত পণ্য রফতানি বাড়ানোর কৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে। ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গায় শতাধিক শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে চুল ব্যবহার করা হচ্ছে। পরবর্তীতে চুল থেকে উৎপাদিত এসব পণ্য বিদেশে রফতানি করা হচ্ছে। চীন এবং কোরিয়ায় সরাসরি চুল রফতানি হচ্ছে। সম্প্রতি চালের কুড়া রফতানির অনুমতি চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে বাংলাদেশেও কুড়া থেকে রাইস ব্রায়ান নামক এক ধরনের ভোজ্যতেল তৈরি করা হচ্ছে। দেশে চাহিদা থাকায় ইতোপূর্বে কুড়া রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। তবে দেশে ধান ও চালের উৎপাদন ভাল থাকায় ফের কুড়া রফতানির বিষয়টি ভেবে দেখা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ইপিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশীষ বসু জনকণ্ঠকে বলেন, নতুনবাজার সম্প্রসারণের পাশাপাশি রফতানি পণ্যের সংখ্যা বাড়াতে কাজ করা হচ্ছে।
×