ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংবাদ সম্মেলনে পাউবো ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দুর্নীতিসহ ৪ দফা দাবি পেশ

কপোতাক্ষ তীরের ৫০ পরিবার মানবিক বিপর্যয়ের শিকার

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৭ আগস্ট ২০১৫

কপোতাক্ষ তীরের ৫০ পরিবার মানবিক বিপর্যয়ের শিকার

মিজানুর রহমান, সাতক্ষীরা থেকে ॥ কপোতাক্ষ তীরের পাঁচ উপজেলার প্রায় ৫০ লাখ মানুষ এখন মানবিক বিপর্যয়ের শিকার। জলাবদ্ধতায় পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি টিআরএমভুক্ত এলাকায় ঘের মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতায় ভাঙছে জনপদ। কপোতাক্ষের উপচেপড়া পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় এ সকল পরিবার মানবিক বিপর্যয়ের শিকার। পাশাপাশি দেখা দিয়েছে অর্থনৈতিক দূরবস্থা। এদিকে কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলনের পক্ষ থেকে রবিবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক লিখিত সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত ২৬২ কোটি টাকার কপোতাক্ষ খনন চলমান প্রকল্পের এই বিপর্যয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ঠিকাদারদের দুর্নীতি আর কিছু ঘের মালিকের ষড়যন্ত্র দায়ী। সংবাদ সম্মেলনে ৪ দফা দাবি জানিয়ে বলা হয়, বিপন্ন মানুষের খাদ্য ও আশ্রয়ের সম্পূর্ণ দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। এছাড়া স্থায়ী সমাধানের জন্য মাথাভাঙ্গা-পদ্মার সঙ্গে সংযোগ দিয়ে কপোতাক্ষ-ভৈরব সংস্কারের প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজটি দ্রুত শুরু করতে হবে, যার পরিপূরক হবে চলমান কপোতাক্ষ সংস্কারের ২৬২ কোটি টাকার প্রকল্প। পাখিমারা বিলের টিআরএমের ত্রুটিসমূহ সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। কপোতাক্ষ সংস্কার প্রকল্পের ব্যর্থতার কারণগুলোর পর্যালোচনা করার পাশাপাশি প্রকল্পে সংঘটিত সকল দুর্নীতির তদন্ত করতে হবে এবং এ ব্যাপারে জড়িত যে কোন স্তরের ব্যক্তিকে বিচারের সম্মুখীন করার দাবি জানানো হয়েছে। কপোতাক্ষ রক্ষার প্রশ্নে দুর্নীতি-অনিয়ম ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলনের আহবায়ক অনীল বিশ্বাস। বক্তব্য রাখেন আন্দোলনের প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ ও সাতক্ষীরার সমন্বয়ক এবং তালা-কলারোয়ার সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০০৩ সাল থেকে জনগণের আন্দোলনের চাপে কপোতাক্ষ নদ সংস্কারে তিন তিনবার অর্থ বরাদ্দ হলেও প্রতিবারই সে অর্থ অপচয় হয়েছে। ২০০১ সালে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নদ সংস্কারের নামে বাঁধ দেয়া হলে বাঁধের ভাটিতে পলি জমে নদী ভরাট হয়। আন্দোলনের মুখে ২০০৪ সালে ড্রেজিংয়ের জন্য ২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। কিন্তু দুর্নীতি ও অর্থ লোপাটের কারণে যথাযথ কাজ হয়নি। ২০০৪ সালে সরসকাটি ব্রিজের নিচ থেকে ভাটিতে ৪৭ কিলোমিটার ড্রেজিং হলেও ব্রিজের উজানে পাঁজাখোলা পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার খনন অসমাপ্ত থাকে। ২০০৫ সালে এই কাজ একটি ঠিকাদারি সংস্থাকে দেয়া হয়। তারা ব্রিজের নিচে আড় বাঁধ দিয়ে ১১ কিলোমিটার খনন করতে গিয়ে বিপর্যয় সৃষ্টি করে। খনন করা ৪৭ কিলোমিটারসহ ভাটিতে অনেক দূর পর্যন্ত পলি ভরাট হয়ে পড়ে। ২০০৭ সালের শেষের দিকে দেখা দেয় মহাবিপর্যয়। বিস্তৃত এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে কপোতাক্ষ সংস্কারের দাবি রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটের নির্বাচনী ওয়াদার অন্তর্ভুক্ত হয় কপোতাক্ষ নদ সংস্কারের দাবি। এদিকে এবার কপোতাক্ষ নদ সচল করতে ২৬২ কোটি টাকার চার বছর মেয়াদী প্রকল্পের ২০১১ সালে অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্পে টিআরএম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে দাঁড়িয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড, ঠিকাদার ও জনপ্রতিনিধিদের অনিয়ম দুর্নীতি ও ঘের মালিকদের ষড়যন্ত্র। কাজ বাধাগ্রস্ত করতে অসৎ ঘের মালিকদের পক্ষ থেকে এক ভ্যানচালককে বাদী করে হাইকোর্টে কয়েক দফা রিট করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে কপোতাক্ষ তীরবর্তী অঞ্চলে পানিবন্দী হাজার হাজার পরিবার এখন মানবিক বিপর্যয়ের শিকার। জলাবদ্ধতায় ছড়িয়ে পড়ছে পানি বাহিত রোগ। ঘর থেকে বের হতে পারছে না পরিবােেরর সদস্যরা। খাবার সঙ্কট। মাঠে ফসল নষ্ট হয়েছে। ভেঙ্গে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা। ঘর হতে বের হতে ব্যবহার করতে হচ্ছে বাঁশের সাঁকো। এক কলস খাবার পানির জন্য হাঁটু আর কোমর পানি ভেঙ্গে ছুটতে হচ্ছে। মানবিক বিপর্যয়ের শিকার কপোতাক্ষ তীরে বসবাসরত প্রায় ৫০ লাখ মানুষ কপোতাক্ষ সংস্কার প্রকল্প সুষ্ঠু ও নকশা অনুযায়ী বাস্তবায়নের জন্য এবং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
×