ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফুটবলের সুদিন

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৭ আগস্ট ২০১৫

ফুটবলের সুদিন

দক্ষিণ এশিয়ার অনুর্ধ-১৬ ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্ব লড়াইয়ে আর একধাপ এগোতে পারলেই ফাইনাল নিশ্চিত বাংলাদেশের। গ্রুপপর্বে টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতকে হারিয়ে ফেভারিটের তকমা গায়ে লাগিয়েছে স্বাগতিকরা। দল হিসেবে বাংলাদেশ উন্নতি করছে। তার ওপর শক্তিশালী ভারতের সঙ্গে ২-১ গোলের জয়ে মনোবলের ‘পারদ’ সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। মাঠ নিজেদের, দর্শকও নিজেদের এমনি অবস্থায় রবিবার সিলেটে সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। গত বছরও স্থান নির্ধারণী ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারিয়ে তৃতীয় হয়েছিল বাংলাদেশ। শক্তিমত্তা ও মনোবলের দিক দিয়ে এবারও ফেভারিট বাংলাদেশ। তাই অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৬ ফুটবল টিম। উত্তেজনা দেশের ফুটবলপ্রেমীদের মনেও। সার্বিক বিচারে এই টুর্নামেন্টে বাংলার দামাল ছেলেরা যে ক্ষিপ্রতা ও ফুটবল শৈলীর পরিচয় দিয়েছে, তাতে আশাবাদী হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। পারফর্মেন্স বলছে সেমিফাইনালের গ-ি পেরিয়ে ফাইনাল হয়ে শিরোপা ছুঁতে এখন সময়ের অপেক্ষা। ফুটবল বাংলাদেশে একটি জনপ্রিয় খেলা। শহর গ্রাম সবখানেই এর সমান কদর। এক সময় গ্রামবাংলার এমন কোন পল্লী অঞ্চল খুঁজে পাওয়া যেত না যেখানে বছরে অন্তত একবার ফুটবলকেন্দ্রিক কোন প্রতিযোগিতার আয়োজন হতো না। এপাড়া ওপাড়া, এক গ্রামের সঙ্গে ভিন্ন গ্রাম, গ্রামের একটি স্কুলের সঙ্গে পাশের গ্রামের কোন স্কুলের ছেলেদের জমজমাট ফুটবল খেলা হতো। সে এক হৈ হৈ রৈ রৈ ব্যাপার। খেলা সে তো খেলা নয় যেন রীতিমতো যুদ্ধ। এই যুদ্ধের কী বিপুল আনন্দ আর বিনোদন তা অবর্ণনীয়। কাছা বেঁধে পানি-কাদাতে হুটোপুটি, লুটোপুটি করে প্রতিপক্ষের গোলপোস্ট এলাকায় ঢুকে পড়ার কী তীব্র প্রতিযোগিতা। ছিল বড় বড় খেলার মাঠ। ফুটবলের সেই সুদিন আর নেই। এখন কী শহর, কী গ্রাম সর্বত্রই খেলার মাঠের সংখ্যা কমে এসেছে। শহরের মাঠ দখলদারদের কবলে। বেশিরভাগ স্কুলেরই খেলার মাঠ নেই। অনেক পাড়া মহল্লার মাঠও আবাসনে পরিণত হয়েছে। খেলাধুলার বিনোদন এখন টিভির পর্দা, কম্পিউটার বা ল্যাপটপে এসে ঠেকেছে। যেভাবে মাঠগুলো বিলুপ্ত হচ্ছে, দখল হচ্ছে, তা দখলদারদের কবল থেকে মুক্ত করা না গেলে খেলাধুলাকে হয়ত একসময় এসব মাধ্যমেই খুঁজতে হবে। বহু ফুটবলপ্রেমী আশা করে মাঠগুলো উদ্ধার করা গেলে ফুটবল ফিরতে পারে স্বমহিমায়। একসময় জাদুকর সামাদের নাম ফুটবলপ্রেমীদের রোমাঞ্চিত করত। দেশ ভাগের আগে কলকাতার মোহামেডান ও মোহনবাগানের খেলা এখনও কিংবদন্তি হয়ে আছে। দেশ স্বাধীনের পর ফুটবলই ছিল খেলাপাগল বাঙালীর মূল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। আবাহনী-মোহামেডানের খেলায় দর্শক মাঠ উপচিয়ে পড়ত। মাঠের বাইরে রেডিওতে ধারাবিবরণী শুনত, কোন কোন স্থানে টিভিতে সরাসরি সম্প্রচারিত খেলা মানুষ আগ্রহভরে দেখত। মাঝখানে ক্রিকেটের দাপটে ফুটবল মনোযোগ হারায় অনেকটাই। সময়ের ব্যবধানে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের। বাংলাদেশ এখন বিশ্বমানের ক্রিকেটে। কিন্তু সেই সুযোগে বাঙালীর প্রিয় ফুটবল তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করে এগোতে পারেনি। বিভিন্ন সময় বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপসহ বিশ্বমানের টুর্নামেন্ট আয়োজনসহ ঘরোয়া ফুটবলের মাধ্যমে এগোনোর চেষ্টা করা হলেও এই সাফল্য কাক্সিক্ষত বলা যাবে না। আশার কথা, বাংলাদেশের ফুটবল আবার ঘুরে দাঁড়াবার স্বপ্ন দেখছে। বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৬ ফুটবল দল এই স্বপ্নই পূরণ করার পথে। ফুটবলের সুদিন ফিরিয়ে আনতে চায় বাফুফেও। সেজন্য নানা পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হচ্ছে। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে ফুটবল নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়াবে এই প্রত্যাশা সবার।
×