ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংলাপের ‘বদনাম’ ॥ নারীর স্বদেশী হয়ে ওঠার গল্প

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ১৮ আগস্ট ২০১৫

সংলাপের ‘বদনাম’ ॥ নারীর স্বদেশী হয়ে ওঠার গল্প

গৌতম পাণ্ডে ॥ নারীর স্বাধীনতা ও স্বদেশী হয়ে ওঠার নিখুঁত দলিল রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প ‘বদনাম’। সাংসারিক গ-ির বাইরে বাঙালী নারীদের এক বিশাল জগত আছে, যেখানে স্থান পায় দেশপ্রেম। ধরাবাধা গ-ি পেরিয়ে নারীরাও কখনও কখনও হয়ে ওঠে প্রতিবাদী। গল্পটিতে এ সব কিছুই যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। নাটকের গল্পে দেখা যায় দায়িত্ববান পুলিশ ইন্সপেক্টর বিজয় বাবু। কাজেকর্মে, দায়িত্ব পালনে খুবই নিষ্ঠাবান একজন পুলিশ কর্মকর্তা। সৌদামিনী তারই স্ত্রী। সংসারী, সতীসাদ্ধী এক রমণী। সন্তানহীনা মায়ের কষ্ট বুকে লুকিয়ে হাসি মুখেই সংসারের সকল ধর্ম-কর্ম চালিয়ে নেয় ক্লান্তিহীন। স্বামী, সংসারের প্রতি তার দায়িত্ব, কর্তব্য, ভালবাসার এতটুকু কমতি নেই। সেই সঙ্গে দেশ প্রেমকেও আলাদা করতে পারেনি সে। সৌদামিনীকে বিজয়বাবু সদু বলেই ডাকে। ধ্যান-ধারণা, চিন্তায় সদু আর দশটা মেয়ের চেয়ে একেবারে ভিন্ন অসাধারণ এক মেয়ে। আমাদের এই খাপছাড়া সমাজে জন্মেও দেশের প্রতি দায়িত্বকে অবজ্ঞা করতে পারেনি। আর তাই তো সে ঠিকই চিনেছিল অনিল নামের এক দেশপ্রেমিককে। ডাকাত ভেবে তাঁর স্বামী যাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে বন-জঙ্গলে, গোপনে সেই বিপ্লবী অনিলকেই সহযোগিতা করে সে। এখানেই অন্ধ সমাজে নারীর স্বাধীনচেতা ও দেশপ্রেমিক হয়ে ওঠার অক্লান্ত চেষ্টা। অনিলকে সে দেশের একজন সুসন্তান হিসেবেই জানে, এ জন্যই স্বামীর অগোচরে তাঁকে সহযোগিতা করে। কিন্তু সমাজের অন্ধ কুসংষ্কার এই সহযোগিতাকে বাঁকা চোখে দেখতে দ্বিধা করে না। নাটকে রবীন্দ্রনাথের অন্য নাটকের মতই মানবিক দ্বন্দ্বাবলী পরিস্ফুটত হয়েছে। এই সংসারে মানুষের বিভিন্ন যে সীমাবদ্ধতা আছে, যা মানুষ বার বার অতিক্রম করতে চায়। কর্তব্যের কাছে অনেক সময় যে সাংসারিক প্রেম বন্ধন তুচ্ছ হয়ে যায়, সুদূর মানসিক দ্বন্দ্বের ভিতর দিয়ে সে কথাই প্রকাশ করেছেন নাট্যকার। রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং বলেছেন, এ গল্পে সুদূর মধ্য দিয়ে তিনি নারীদের পক্ষের অনেক কথাই প্রকাশ করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৪তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে তাঁরই ছোটগল্প থেকে নেয়া ‘বদনাম’ নাটকটি মঞ্চস্থ করে সংলাপ গ্রুপ থিয়েটার। এর নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন মোস্তফা হীরা। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে রবিবার সন্ধ্যায় দলটির ২৩তম প্রযোজনায় নাটকটির ২৪তম প্রদর্শনী হয়। কবিতা, গল্প, নাটক, উপন্যাস, সঙ্গীত, নৃত্য এক কথায় বহুমাত্রিক প্রতিভার আঁধার বিশ্ব কবির সার্ধশত জন্মবর্ষে সংলাপ প্রথম এই নাটকটি উৎসর্গ করে। রবীন্দ্রনাথের নাটকে অভিনয় করা একমাত্র অভিজ্ঞ অভিনেতা-অভিনেত্রী ছাড়া সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে কিছু অভিনেতা ছাড়া প্রায় সবাই নাটকটিতে তাদের চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। তবে সার্বিক বিবেচনায় সংলাপের উপস্থাপনা ভালই বলা চলে। মিলনায়তনে দর্শক উপস্থিতি তেমন না থাকলেও যে কয়জন ছিল, সবাই নিমগ্ন হয়ে নাটকটি উপভোগ করেছেন। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন-ওয়ালিদ আহমাদ রানা, আজমেরী সুলতানা লাকী, সেলিনা আক্তার প্রিয়া, হাবিবুর রহমান, মাইনুল ইসলাম, মঈনুদ্দীন হাসান খোকন, মাসুদ আলম বাবু, শাকিল আহমেদ, রাজিব লোচন ম-ল, শহীদুল ইসলাম খোকন, আবু তালেব মাসুম, প্রেমা, আক্তার হোসেন হীরা। প্রযোজনা সহযোগী সামসুদ্দীন ভূইয়া, প্রযোজনা ব্যবস্থাপক শাকিল আহমেদ, সহপ্রযোজনা ব্যবস্থাপক আবু তালেব মাসুম, আলোক ও মঞ্চ পরিকল্পনা জুনায়েদ ইউসুফ, পোশাক পরিকল্পনা হাবিব ও প্রিয়া, আলোক প্রক্ষেপক শাকিল, রূপসজ্জা সুভাশীষ দত্ত তন্ময়, আবহ সঙ্গীত সেলিনা আক্তার প্রিয়া ও প্রযোজনা অধিকর্তা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান সুমন।
×