ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রহস্য উদ্ঘাটন ॥ ২ জন গ্রেফতার

বাড্ডায় গামাসহ তিন হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় ৮ জন

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৮ আগস্ট ২০১৫

বাড্ডায় গামাসহ তিন হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় ৮ জন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গত ১৩ আগস্ট রাতে রাজধানীর মধ্যবাড্ডায় এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে সরকার দলীয় তিন নেতা হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। হত্যকা-ের মূল পরিকল্পনাকারীদের একজন ও সরাসরি হত্যা মিশনে অংশ নেয়া একজনসহ মোট ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হত্যাকা-ে ৮ জন অংশ নেয়। তবে গুলি চালায় তিন জন। হত্যাকা-ে ব্যবহৃত অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের মালিকরাও শনাক্ত হয়েছে। গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসার সূত্রধরে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে হত্যাকা-ের ঘটনাটি ঘটে বলে নিশ্চিত হয়েছে ডিবি। ঘটনার দিন রাত পৌনে ১০টার দিকে মধ্যবাড্ডার আদর্শনগরের আল সামি হাসপাতাল সংলগ্ন ঢাকা ওয়াসার ৮ নম্বর মটস্ জোনের ভেতরে বসে স্থানীয় সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা আড্ডা দিচ্ছিলেন। এ সময় সন্ত্রাসীরা সেখানে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। ঘটনাস্থলেই স্থানীয় যুবলীগ কর্মী ও উত্তর বাড্ডার এইচএএফ হাসপাতালের ব্যবস্থাপক ফিরোজ আহমেদ মানিক ( ৪৫) ও ঢাকার ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শামসুদ্দিন মোল্ল্যা ওরফে শামছু মোল্ল্যার (৫৩) মৃত্যু হয়। আহত হন যুবলীগ নেতা আব্দুস সালাম (৪৩) ও আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা উত্তরের সহকারী সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান গামা (৪৫)। গত ১৪ আগস্ট রাজধানীর গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। আব্দুস সালাম ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার পর থেকেই আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হত্যাকা-ের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাটির তদন্তভার গত ১৬ আগস্ট থানা পুলিশ থেকে ডিবিতে দেয়া হয়। মামলা তদন্তের দায়িত্ব পেয়েই ডিবির উত্তর বিভাগের উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম পিপিএম, বিপিএম-এর সার্বিক নির্দেশনায় অতিরিক্ত উপকমিশনার মাহফুজুল ইসলাম পিপিএম-এর তত্ত্বাবধানে ডিবির দুইটি দল অভিযানে নামে। ডিবির একটি দল রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকা থেকে ফারুক মিলনকে (৪০) গ্রেফতার করে। ফারুক বাড্ডার স্থানীয় বাসিন্দা। তিনি বাড্ডা থানা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক। ফারুকের তথ্যমতে বাড্ডা থানা ছাত্রলীগ নেতা নূর মোহাম্মদ ওরফে নূরে আলমকে (২৬) গ্রেফতার করা হয়। নূর মোহাম্মদের বাড়ি মাদারীপুর জেলার শিবচর থানায়। বাড্ডা এলাকায় সে ভাড়ায় বসবাস করত। ১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত গুলশান থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছে নূর মোহাম্মদ ওরফে নূরে আলম। সোমবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া বিভাগে গ্রেফতারকৃতদের সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করেন ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে ডিবির উত্তর, পূর্ব, দক্ষিণ, পশ্চিম, ডিএমপির গুলশান ও মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার যথাক্রমে শেখ নাজমুল আলম, মাহবুবুর রহমান, মাশরুকুর রহমান খালেদ, সাজ্জাদুর রহমান, মোস্তাক আহমেদ ও মুনতাসিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। মনিরুল ইসলাম জানান, মূলত গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করেই হত্যাকা-ের ঘটনাটি ঘটে। এখন পর্যন্ত তদন্তে হত্যাকা-ের নেপথ্যে কোন রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কোন্দল, আধিপত্য বিস্তারের তথ্য মেলেনি। গ্রেফতারকৃতদের দেয়া প্রাথমিক তথ্য মোতাবেক, স্থানীয় সন্ত্রাসী বাউল সুমন দীর্ঘদিন ধরেই এলাকার ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল। সম্প্রতি কারাগারে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়। এরপর থেকেই গামা ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করছিল। এ নিয়েই মূলত দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। সেই দ্বন্দ্বের জেরে হত্যাকা-ের ঘটনাটি ঘটে। হত্যাকা-ের সপ্তাহখানেক আগে গামাকে হত্যার পরিকল্পনা হয়। গ্রেফতারকৃত ফারুক হত্যাকা-ের অন্যতম পরিকল্পনাকারীদের একজন। হত্যাকা-ে ৮ জন অংশ নেয়। এরমধ্যে তিন জনের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। তারাই এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এদের মধ্যে গ্রেফতারকৃত নূর মোহাম্মদ হত্যাকা-ে সরাসরি অংশ নিয়েছিল। মূলত গামাকে হত্যা করতেই খুনীরা পাম্পে যায়। কিন্তু এলোপাতাড়ি গুলি চালানোর কারণে অপর ২ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন একজন। গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কারণ, পরিকল্পনা, হত্যাকা-ে অংশগ্রহণকারী ও হত্যাকা-ে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছে। হত্যাকা-ে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রগুলো অবৈধ। ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রের মালিক, হত্যাকারী ও পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িতদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যও পাওয়া গেছে। তাদের শনাক্তও করা হয়েছে। হত্যাকারীরা পরিকল্পিত হত্যাকা- ছাড়াও ভাড়াটিয়া হিসেবে খুন করে থাকে। হত্যাকারীসহ পুরো হত্যাকা-ের পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই অন্য আসামিদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। হত্যাকা-ের নেপথ্যে আরও কোন কারণ আছে কিনা তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
×