ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফেসবুকেও প্রতিবাদ

প্রবীর সিকদার গ্রেফতার ॥ সাংবাদিক সমাজ বিক্ষুব্ধ

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ১৮ আগস্ট ২০১৫

প্রবীর সিকদার গ্রেফতার ॥ সাংবাদিক সমাজ বিক্ষুব্ধ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে সাংবাদিক সমাজসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। সাংবাদিক সমাজ ছাড়াও সভা সমাবেশ করেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে শাহবাগে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চ এবং শাহবাগ আন্দোলনের কর্মীরা। ‘বিক্ষুব্ধ সাংবাদিক সমাজ’-এর ব্যানারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম বেঁধে দিয়ে প্রবীণ এ সাংবাদিকের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়েছে। এছাড়াও মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মুখে কয়েকটি সাংবাদিক সংগঠনের সভা-সমাবেশ করার কথা রয়েছে। অন্যদিকে রবিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে তার অনলাইন পত্রিকার কার্যালয় থেকে আটকের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া মাত্রই নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। শঙ্কা প্রকাশ করে তারা দ্রুত সময়ে এ সাংবাদিকের মুক্তি দাবি করেছে, একই সঙ্গে আহ্বান জানাচ্ছেন একাধিক সভা-সমাবেশের। আর এখন সর্বত্রই আলোচনার বিষয় ‘কারা রক্ষা পাচ্ছে? মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি না রাজাকার? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানানো হচ্ছে ধিক্কার, একই সঙ্গে বেশ কয়েকটি ইভেন্ট খুলে সমাবেশের আহ্বান জানানো হয়েছে। বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিয়েছেন জনকণ্ঠের সংবাদকর্মীরাও। সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মুখে জড়ো হওয়া সাংবাদিকরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, প্রবীর সিকদারকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়া না হলে মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সমাবেশ করে কঠোর কর্মসূচী দেয়া হবে। রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মুখে ‘বিক্ষুব্ধ সাংবাদিক সমাজ’ ব্যানারে মানববন্ধন ও সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশ আয়োজিত এ সমাবেশে যোগ দেন অপর অংশও। সমাবেশ শেষে প্রবীর সিকদারের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে একটি মিছিলও বের করেন তারা। প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের স্ত্রী অনিতা সিকদার এবং দুই ছেলে সুপ্রিয় সিকদার ও পুলক সিকদার। এছাড়া সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের নেতা কামাল পাশা চৌধুরী, ছাত্রমৈত্রীর সাবেক নেতা বাপ্পাদিত্য বসু, শাহবাগ আন্দোলনের অন্যতম কর্মী মাহমুদুল হক মুন্সি বাঁধন, সাগর লোহানী প্রমুখ। এসময় কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দরাও উপস্থিত ছিলেন। ডিইউজের একাংশের সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদের নেতৃত্বে সমাবেশ শুরুর পর পরই অপর অংশের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধানের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা যোগ দেন। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক অঞ্জন রায়, আশীষ কুমার দে, অমিয় ঘটক পুলক প্রমুখ। এ সময় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, প্রবীর সিকদার কোন অন্যায় করেননি। তিনি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বা কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অন্যায় করেননি। তিনি একজন মুক্তিযুদ্ধবিরোধীর ব্যক্তির কথা বলেছেন। প্রবীর সিকদার একা নন, আমরা তার সঙ্গে আছি। প্রবীর সিকদারের মুক্তির দাবিতে সাংবাদিক সমাজের পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, আগামীকালের (মঙ্গলবার) মধ্যে তাঁকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। তা না হলে মঙ্গলবার ১২টায় আমরা প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করে কঠোর কর্মসূচীর ঘোষণা করব। তাঁকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বানও জানান তিনি। গণজাগরণ নেতা মঞ্চের কামাল পাশা চৌধুরী বলেন, রাজাকারকে রাজাকার বললে যদি অপরাধ হয়, তাহলে আমরা কোন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করছি? সাংবাদিক সমাজের সঙ্গে সংহতি জানাতে আমরা এ প্রতিবাদে অংশ নিয়েছি। প্রবীর সিকদারকে সসম্মানে দ্রুত মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানাই। ছাত্রমৈত্রীর সাবেক সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু বলেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা কি অপরাধ? তবে কেন প্রবীর সিকদারের সঙ্গে এমন আচরণ করা হচ্ছে? সাংবাদিক অঞ্জন রায় বলেন, প্রবীর সিকদারকে মুক্তি না দিলে কঠোর আন্দোলন করা হবে। কেন এই গ্রেফতার ॥ ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসের সূত্র ধরে রোববার সন্ধ্যায় প্রবীর সিকদারকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ। এর কয়েক ঘণ্টা পর ফরিদপুরে তথ্য প্রযুক্তি আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। ফেসবুকে লেখালেখির মাধ্যমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সুনাম ক্ষুণেœর অভিযোগ তুলে রবিবার রাত ১১টার দিকে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করা হয়। এর আগে ফেসবুকে গত কিছু দিন ধরে লেখালেখির পর হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়ে থানায় জিডি করতে গিয়েছিলেন প্রবীণ এই সাংবাদিক। পুলিশ তা গ্রহণ করেননি বলে ফেসবুকে অভিযোগ করেছিলে তিনি। ‘আমার জীবন শঙ্কা তথা মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী থাকবেন’ শিরোনামে একটি স্ট্যাটাসে জনকণ্ঠে কর্মরত থাকা অবস্থায় ‘সেই রাজাকার’ শিরোনামে ধারাবাহিক প্রতিবদেন প্রকাশকারী এ সংবাদিক লিখেছিলেন, ‘আমি খুব স্পষ্ট করেই বলছি, নিচের ব্যক্তিবর্গ আমার জীবন শঙ্কা তথা মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবেন : ১. এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি, ২. রাজাকার নুলা মুসা ওরফে ড. মুসা বিন শমসের, ৩. ফাঁসির দ-াদেশপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী বাচ্চু রাজাকার ওরফে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এবং এই তিন জনের অনুসারী-সহযোগীরা।’ আর এ স্ট্যাটাসের কারণেই তাঁকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ফেসবুকে নিন্দার ঝড় ॥ যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে সর্বদাই সোচ্চার থাকা এ সাংবাদিক মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পরিবারের ১৪ সদস্যকে হারিয়েছেন। এমনকি মহান সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত থেকে হারিয়েছেন একটি পাও। বর্তমানে তাকে স্ক্র্যাচে করে চলতে হয়। প্রবীর সিকদারের আটকের খবর ফেসবুকে প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বয়ে যেতে থাকে নিন্দার ঝড়। সমালোচিত হচ্ছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাও। অনেকেইে বলছেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামালার অর্থ হচ্ছে সাংবাদিকদের বাক রুদ্ধ করে দেয়ার অপচেষ্টা! কেউ কেউ বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকার তা করতে পারে না এবং কোন ক্রমেই নয়। সরকারকে উল্টো পথে না হাঁটার পরামর্শও দিয়েছেন অনেকে।
×