ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীতে সেপটিক ট্যাংকে গৃহবধূর লাশ, সড়ক দুর্ঘটনায় ব্যাংক কর্মকর্তাসহ নিহত

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ১৮ আগস্ট ২০১৫

রাজধানীতে সেপটিক ট্যাংকে গৃহবধূর লাশ, সড়ক দুর্ঘটনায় ব্যাংক কর্মকর্তাসহ নিহত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর উত্তরখানে এক গৃহবধূকে নির্মম নির্যাতনে হত্যার পর তার লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দিয়েছে পাষ- স্বামী। ঘটনার পর থেকে নিহতের স্বামী হানিফ শেখ (৪৫) গা ঢাকা দিয়েছে। এদিকে হাজারীবাগে মোবাইল চুরির অভিযোগে এক কিশোরকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। অন্যদিকে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় এক ব্যাংক কর্মকর্তাসহ দু’জন নিহত হয়েছে। পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। অপরদিকে ডেমরায় গ্যাস রাইজার বিস্ফোরণে দুই স্কুলপড়ুয়া শিশু দগ্ধ হয়েছে। এছাড়া পুরান ঢাকার ওয়ারীতে অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়ে এক জেলপুলিশ সর্বস্ব খুইয়েছেন। সোমবার পুলিশ ও মেডিক্যাল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, উত্তরখানে মধ্যপাড়া ভূইয়াবাড়ি এলাকার একটি বাড়িতে ইশমত আরা বেগম (৩৫) নামে এক গৃহবধূকে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেছে তার স্বামী হানিফ শেখ। পরে তার লাশ বাড়ির পাশের পানির ট্যাংকিতে ফেলে দেয়া হয়। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে রবিবার গভীর রাতে পুলিশ বাড়ির পাশের সেফটিক ট্যাংকির ভেতর থেকে ওই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে। পরে পুলিশ তার লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য সোমবার সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়। উত্তরখান থানার উপ-পরিদর্শক হাদিস হাওলাদার জানান, নিহত গৃহবধূ ইশমত আরার শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছেÑ তাকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে নিহতের স্বামী হানিফ শেখ পলাতক রয়েছে। নিহত ইশমত আরা, স্বামী ও কন্যাকে নিয়ে উত্তরখান মধ্যপাড়া ভূইয়াবাড়ির মনিরুজ্জামানের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। নিহতের বড় ভাই বাদশা মিয়া জানান, ইসমতের মেয়ে আকলিমা আক্তারের (১৫) নামে ব্যাংকে ২০ হাজার টাকা জমা রাখেন। সেই টাকার জন্য তার স্বামী হানিফ প্রায়ই তাকে মারধর করত। শনিবার রাতে এ নিয়ে তাদের মধ্যে আরেক দফা ঝগড়া বিবাদ হয়। ওই টাকার জন্যই তার স্বামী তাকে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে। পরে ইশমত আরার লাশ পাশের বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে ফেলে পালিয়ে যায় হানিফ শেখ। তিনি জানান, হানিফ মিয়া পেশায় কাঠমিস্ত্রি। তাদের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মোকসেদপুরে। নিহতের মেয়ে আকলিমা আক্তার জানায়, ১৫ আগস্ট রাতে তার বাবা ও মায়ের মধ্যে ঝগড়া হয়। সকালে উঠে দেখি ঘরে বাবা-মা কেউ নেই। পরে বাবার মোবাইলে কল দিলে তিনি আসি আসি করে আর আসেনি। দুপুরে বাবার মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে দেন। সেই থেকে বাবা এখনও বাড়িতে আসেনি। আকলিমা জানায়, খোঁজাখুঁজির পর রবিবার রাত ৯টার দিকে ওই সেফটিক ট্যাঙ্কের ভেতরে তার মায়ের লাশ দেখতে পাওয়া যায়। পরে পুলিশ এসে মার লাশ উদ্ধার করে। এদিকে রাজধানীর হাজারীবাগে মোবাইল চুরির অভিযোগে রাজা মিয়া (১৭) নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা। নিহতের বাবার নাম বাবুল হোসেন। তিনি হাজারীবাগের গনকটুলী লেনের ৪৬ নম্বর বাড়িতে থাকতেন। নিহতের ফুফু রতœা বেগম জানান, সকালে তাদের পাশের বাসার হাজারীবাগ থানা ছাত্রলীগ নেতা আরজুর মোবাইল হারিয়ে যায়। রাজা তার মোবাইল চুরি করেছে। পরে আরজু তাকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর আরজু তার বাসায় নিয়ে ভাইয়ের ছেলে রাজাকে মারধর করে। একপর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতা আরজু রাজাকে অজ্ঞান অবস্থায় গনকটুলীর বাসার সামনে ফেলে যায়। রতœা বেগম জানান, বিকেলে রাজাকে বাসার সামনে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে জরুরী বিভাগে আনা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রতœা আরও অভিযোগ করেন, রাজার মানসিক সমস্যা ছিল। তাকে পিটিয়েই আরজু হত্যা করেছে। ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই সেন্টু চন্দ্র দাশ জানান, নিহত রাজার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে নেয়া হয়েছে। হাজারীবাগ থানার ডিউটি অফিসার আবুল কালাজ আজাদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ ॥ রাজধানীর তুরাগে ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী আসাদুজ্জামান সেলিম (৩৪) নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যু হয়েছে। এ সময় তার বন্ধু মোটরসাইকেলের চালক জাকির হোসেন (৩৩) গুরুতর আহত হয়েছে। নিহত আসাদুজ্জামান ব্র্যাক ব্যাংকের আজিমপুর শাখার সিনিয়র অফিসার ছিলেন। নিহত সেলিমের বাবার নাম আমজাদ হোসেন। গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ী জেলার পাংশা থানার আমবাড়ী গ্রামে। আর তার বন্ধু জাকির হোসেন হাইকোর্টের সহকারী বেঞ্চ অফিসার। নিহতের আত্মীয় শামসুর রহমান জানান, সেলিম ও জাকির দুই বন্ধু মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনে বাসা ভাড়া নিয়ে একসঙ্গে থাকেন। রবিবার বিকেলে তারা মোটরসাইকেলে আশুলিয়ায় আরেক বন্ধুর বাসায় বেড়াতে যান। সেখান থেকে গভীর রাতে তারা মোটরসাইকেল চালিয়ে মিরপুরে ফিরছিলেন। রাত ১টার দিকে তুরাগ থানাধীন ধৌর এলাকায় একটি বেপোরোয়া গতির ট্রাক তাদের মোটরসাইকেলকে সজোরে ধাক্কা দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ সেখান থেকে তাদের গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে জরুরী বিভাগে আনে। রাত ২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেলিমের মৃত্যু হয়। তুরাগ থানার উপ-পরিদর্শক মধুসুধন পান্ডে জানান, নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়। সোমবার দুপুরে সেলিমের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পারিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এদিকে সোমবার সকালে শ্যামপুরে ট্রাকের ধাক্কায় মজিবুর রহমান (৫০) নামে আরেক মোটর শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। নিহতের গ্রামের বাড়ি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের মীরেরবাগে। তিনি পুরান ঢাকার ধোলাইখালে একটি মোটর পার্টসের দোকানে কাজ করতেন। নিহতের ভাই শফিকুল ইসলাম জানান, সকাল ১০টার দিকে ভাই মজিবুর রহমান পোস্তগোলা ব্রিজের টুলবক্সের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় বেপোরোয়া গতির একটি ট্রাক তাকে ধাক্কা দেয়। পরে পথচারীরা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরী বিভাগে আনেন। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ভবন থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু ॥ সোমবার সকালে পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে জুয়েল মিয়া (৩০) নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় শফিকুল ইসলামের (৩৫) নামে আরেক শ্রমিক আহত হয়েছে। নিহতের বাবার নাম হারুন অর রশিদ। গ্রামের বাড়ি ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন থানার কুঞ্জিরহাট গ্রামে। নিহতের সহকর্মী সোলেমান মিয়া জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সূত্রাপুরের হেমন্ত দাস রোড়ের ডালপট্টি এলাকায় নির্মাণাধীন ছয়তলা ভবনের পাঁচতলায় কাজ করছিলেন তারা। এ সময় হঠাৎ কাঠের তৈরি মাচা ভেঙ্গে পড়ে জুয়েল ও শফিকুল গুরুতর আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জুয়েলের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া শফিকুলকে ধানম-ির একটি বেসরকারী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শিশু দগ্ধ ॥ সোমবার দুপুরে রাজধানীর ডেমরার সারুলিয়া এলাকায় একটি বাড়ির গ্যাস রাইজার বিস্ফোরণে আরিয়ান (১১) ও দীন ইসলাম (৫) নামে দুই শিশু দগ্ধ হয়েছে। পরে তাদের উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। ঢামেক হাসপাতাল বার্ন ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পার্থ শংকর পাল জানান, আরিয়ানের ৯৫ শতাংশ ও দীন ইসলামের শরীরের ১৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। আরিয়ানের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মারাত্মক দগ্ধ আরিয়ান সারুলিয়া এলাকার কিশোরালয় কিন্ডারগার্টেনের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। তার বাবার নাম কুতুব উদ্দিন। তারা পশ্চিম বক্সনগর এলাকায় থাকে। দগ্ধ আরিয়ানের ফুপু নাসিমা বেগম জানান, আঁখি আক্তার তার ছেলে দীন ইসলামকে নিয়ে তাদের বাসায় কাজে আসেন। দুপুর ১টার দিকে আরিয়ান ও দীন ইসলাম দোতালার ছাদে খেলা করছিল। এ সময় নীচতলায় হঠাৎ গ্যাস রাইজার বিস্ফোরিত হলে চারদিকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে আরিয়ান ও দীন ইসলাম দগ্ধ হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে জেল পুলিশ ॥ সোমবার বিকেলে পুরান ঢাকার ওয়ারী কাপ্তানবাজার এলাকা থেকে মিজানুর রহমান (৩৪) নামে এক জেল পুলিশকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করেন তার সহকর্মীরা। তিনি শেরপুর কারাগারে কর্মরত রয়েছেন। তার গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুর-মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়ায়। ওয়ারি থানার উপ-পরিদর্শক শরিফুল ইসলাম জানান, সকালে মিজানুর রহমান শেরপুর থেকে বাসে করে তার বাড়ি মুন্সীগঞ্জ যাচ্ছিলেন। বাসের ভেতরে তিনি অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়েন। পরে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। এ সময় তার কাছে থাকা ব্যাগ নিয়ে যায় অজ্ঞানপার্টির সদস্যরা। ব্যাগে তার কাপড়, সাড়ে চার হাজার টাকা ও মোবাইল ছিল। খবর পেয়ে কাপ্তানবাজার এলাকা থেকে তিনি মিজানুর রহমানকে উদ্ধার করে বিকেল সাড়ে ৪টায় হাসপাতালে ভর্তি করেন। দক্ষিণখানে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার ॥ রাজধানীর দক্ষিণখানে মোশকার হোসেন মাসুদ (৩৮) নামে এক ব্যক্তির ঝুলন্ত লাশ পুলিশ উদ্ধার করেছে। খবর পেয়ে পুলিশ গাওয়াইর এলাকার ৪০৭ নম্বর বাড়ির দরজা ভেঙ্গে তার পচাগলা লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সোমবার রাত সোয়া ৮টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়। পুলিশ জানায়, পারিবারিক কলহের জের ধরে মোশকার ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। নিহতের বাবার নাম আনোয়ার হোসেন। গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানার খাজুরিয়া গ্রামে। দক্ষিণখান থানার এসআই মাহমুদুল হাসান জানান, ওই বাড়িওয়ালার স্ত্রী তাসলিমা পারভীনের খবরের ভিত্তিতে বাসার দরজা ভেঙ্গে তার পচাগলা ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।
×