এমএ রকিব/সাইদুল আনাম, কুষ্টিয়া ও দৌলতপুর থেকে ॥ কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়ন এলাকায় ভূমি খেকো পদ্মার ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। প্রমত্তা পদ্মা একে একে গ্রাস করে নিচ্ছে নদী উপকূলীয় এলাকার ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাদি জমিসহ বিস্তীর্ণ জনপদ। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে অসংখ্য পরিবার। ইতোমধ্যেই অনেক পরিবার তাদের বাড়িঘর ও জমাজমি হারিয়ে হয়ে পড়েছে নিঃস্ব। দীর্ঘদিন ধরে এই নদী ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলেও এ পর্যন্ত ভাঙ্গন রোধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় দুর্গতদের মাঝে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে ২০১৩ সালে জলবায়ু ট্রাস্ট থেকে এই নদী ভাঙ্গন রোধে প্রায় ২২ কোটি ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এই বরাদ্দ থেকে পানিতে ফেলার জন্য সাত কোটি টাকার ব্লক তৈরি করা হলেও সেগুলো আর কাজে লাগানো হয়নি। দীর্ঘ দুই বছর যাবত এসব ব্লক পরিত্যক্ত অবস্থায় ডাঙ্গায় পড়ে রয়েছে।
সরেজমিন খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, তিন সপ্তাহ আগে নতুন করে দৌলতপুরের ফিলিপনগর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে শুরু হয় এই নদী ভাঙ্গন। ইতোমধ্যেই এ ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের সিংহভাগ এলাকা এবং ঐতিহ্যবাহী ইসলামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ইসলামপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বহু ঘরবাড়ি, আবাদি জমি, গাছপালা পদ্মা গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদী পাড়ের বাসিন্দা একরামূল জানান, রাক্ষুসী পদ্মা একে একে গ্রাস করে নিচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বর্তমানে হুমকির মুখে রয়েছে ফিলিপনগর মাধ্যমিক ও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ অসংখ্য ঘরবাড়ি। ইসলামপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম কিবরিয়া বলেন, ১৫ দিনের ব্যবধানে বিদ্যালয়টি স¤পূর্ণ নদীগর্ভে চলে গেছে। এতে বিদ্যালয়ের ৪শ’ ৬৫ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান হয়ে পড়েছে অনিশ্চিত। ইসলামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মঈনুল ইসলাম জানান, গত দুই বছরে পদ্মার ভাঙ্গনে বিদ্যালয়টির ১টি নতুন ও ১টি পুরাতন পাকা ভবন সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। পাশেই অস্থায়ী টিনশেড কয়েকটি রুম করে সেখানে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ তৈমূল হক বলেন, ভাঙ্গন রোধে জলবায়ু ট্রাস্ট থেকে বরাদ্দ পাওয়া ওই টাকায় ৫শ’ ৭৫ মিটার কাজের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও সেখানে ২ হাজার ৭শ’ মিটার পর্যন্ত তীব্র ভাঙ্গন দেখা দেয়। এ অবস্থায় ৫শ’ ৭৫ মিটার কাজ করলে তা টেকসই হতো না। ফলে সেখানে ব্লক ফেলার কাজ বন্ধ রাখা হয়। তিনি জানান, ভাঙ্গন রোধে পদ্মার উজান ও ভাটিতে ২ হাজার ২শ’ ২৫ মিটার পর্যন্ত কাজের নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পদ্মা নদীর ডান তীর ফিলিপনগর সংরক্ষণ নামের এ প্রকল্পের কাজ বর্ষা মৌসুম শেষ হলেই শুরু হবে।