ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজারে প্রান্তিক চাষীরা আতঙ্কে ;###;মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি

মজুদ থাকা সত্ত্বেও লবণ আমদানির পাঁয়তারা

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ১৮ আগস্ট ২০১৫

মজুদ থাকা সত্ত্বেও লবণ আমদানির পাঁয়তারা

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ কক্সবাজারের উপকূলীয় পনেরো লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষার স্বার্থে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন জেলার লবণ চাষীরা। দেশে পর্যাপ্ত লবণ মজুদ থাকা সত্ত্বেও প্রান্তিক লবণ চাষীদের স্বার্থের বিরুদ্ধে আত্মঘাতীমূলক সিদ্ধান্ত নিতে একটি অসাধু চক্র জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন লবণ চাষী কল্যাণ পরিষদ। রবিবার বিকেলে কক্সবাজার হোটেল সৈকতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ লবণ চাষী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মোস্তফা কামাল চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক কায়ছার ইদ্রিছ, উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা ও এ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম অভিযোগ করে বলেন, আগের তিনটি বছরে দেশে প্রায় ছয় লাখ মেট্রিক টন লবণ মজুদ থাকলেও তা উপক্ষো করে অহেতুক ঘাটতি রয়েছে মর্মে এ বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে মেকানিক্যাল লবণ মিল মালিক চক্র (অসাধু ব্যবসায়ী) সিন্ডিকেট করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ট্যারিপ কমিশন এবং শিল্প মন্ত্রণালয়কে প্রভাবিত করার মাধ্যমে দেশে ফের ভারতীয় লবণ আমদানির পাঁয়তারা চালিয়ে আসছে। ইতোমধ্যে অসাধু ব্যবসায়ী চক্রটি মাঠ পর্যায়ে তদারকি না করে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনকে ভুল তথ্য দিয়ে চার লাখ মেট্রিক টন লবণ বিদেশ থেকে আমদানির অনুমতি নিতে সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের লবণ চাষী কল্যাণ পরিষদের নেতৃবৃন্দ। এদিকে দেশে বিপুল পরিমাণ লবণ মজুদ থাকার পরও চলতি বছর ফের বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করা হচ্ছে এমন খবরে উৎপাদন এলাকার হাজার হাজার প্রান্তিক চাষীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। ওসময় কক্সবাজার-২ মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য মোঃ আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, মাঠ পর্যায়ে সুষ্ঠুভাবে তদারকি না করে লবণ আমদানির জন্য অসাধু ব্যবসায়ীদের সহায়তা দিলে এতে দেশের ক্ষুদ্র লবণ চাষীরা আর্থিকভাবে দেউলিয়া হবে। চরম হুমকির মুখে পড়বে দেশীয় লবণ শিল্প ও প্রান্তিক চাষীরা। অহেতুক আমদানির ফলে লবণ চাষীরা তাদের উৎপাদিত লবণ উৎপাদন খরচের কম মূল্যে বিক্রি করার কারণে প্রান্তিক চাষীরা লবণ উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। বর্তমানে দেশে ভোক্তাদের চাহিদা অনুপাতে লবণ মজুদ রয়েছে। তদুপরি ২ মাস পর নতুনভাবে লবণ উৎপাদন শুরু হবে। তিনি বলেন, বিনা কারণে লবণ আমদানি করার ফলে লবণ চাষে ব্যাপক ধস নামার আশঙ্কা রয়েছে। এমপি আশেক উল্লাহ রফিক আরও বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সুবিধাভোগী এসব ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিলে দেশীয় লবণ শিল্পে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসবে। কারণ কম দামে বিদেশী লবণে বাজার সয়লাব হয়ে পড়লে এখানকার হাজার হাজার ক্ষুদ্র লবণ চাষী আগামীতে পুঁজি হারানোর ভয়ে লবণ উৎপাদনে মাঠে নামবে না। এতে কর্মসংস্থান হারাবে লবণ শিল্পের সঙ্গে জড়িত মানুষরা। রবিবার সকালে লবণ আমদানি বন্ধের দাবি জানিয়ে সংশ্লিষ্টমন্ত্রী বরাবরে লবণ চাষী কল্যাণ পরিষদের নেতৃবৃন্দ কক্সবাজারের জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দিয়েছে। বাংলাদেশ লবণ চাষী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট শহীদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বিসিকের তথ্য মতে ২০১৩ সালে ৪ লাখ ২৩ হাজার ৯শ’ ও ২০১৪ সালে ১ লাখ ৭২ হাজার ৫৫০ মেট্রিক টনসহ সর্বমোট ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন লবণ দেশে মজুদ রয়েছে। চলতি বছর বৈরী আবহাওয়ার কারণে লবণ উৎপাদন কম হলেও দেশে এ মুহূর্তে লবণ সঙ্কট নেই। কিন্তু আগের বছরের মজুদ লবণের ব্যাপারটি কৌশলে পাশ কাটিয়ে মেকানিক্যাল লবণ মিল মালিকদের একটি পক্ষ চলতি বছরের ঘাটতির বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে বিদেশ থেকে ফের লবণ আমদানির অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে সিন্ডিকেট সদস্যরা।
×