ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অজয় দাশগুপ্ত

সিডনির মেলব্যাগ ॥ স্বস্তি নিরাপত্তা ও দায়বোধের রাজনীতি

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ১৯ আগস্ট ২০১৫

সিডনির মেলব্যাগ ॥ স্বস্তি নিরাপত্তা ও দায়বোধের রাজনীতি

যখন কোন ভাল যন্ত্রেও বৈরী বাতাস ঢুকে যায় তা হয় বিকল হয়ে পড়ে নতুবা কাজ করতে পারে না। আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রযন্ত্রে আজ যেন তাই দেখছি আমরা। যেসব মানুষ এ দেশের ভাল-মন্দের ধার ধারেন না, যাদের কাছে এ দেশের অস্তিত্ব আর চেতনার কোন দাম নেই তাদের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ। আর যারা সত্য বলছেন, যাদের লেখা কলম-কথায় সাহসের স্ফুরণ তারাই আছেন ঘোর বিপদে। আমাদের সময়ের সাহসী মানুষরা কখনও এ ধরনের বিপদে পড়েননি। কথা বলা ও মনের ভাবনা জানানোর জন্য প্রাণ হারানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি কোনদিন। আজ যখন আমরা বলছি আমাদের অগ্রযাত্রা হচ্ছে, আমরা এগোচ্ছি ঠিক তখনই নানা ধরনের ভ্রান্তি আর কুয়াশায় পথ হয়ে উঠছে দুর্গম। এই যে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী গেল এ নিয়েই ভাবুন। আজ যদি আওয়ামী লীগ গদিতে না থাকে এভাবে কি শোক দিবসের অনুষ্ঠান সব স্থানে দেখা যাবে? কী এক অদ্ভুত আচরণের খেলা চলছে। যাদের মনে-মননে কোথাও বঙ্গবন্ধু নেই তারাই এখন নাম ভূমিকায়। বিষয়টা কি বলে বোঝাতে হয়? কাউকে সম্মান জানানো বা তাঁকে চিরস্মরণীয় করার কাজ মূলত সময়ের হাতে। আমরা ইতিহাসেই দেখি যেসব রাজন্য বা সম্রাট নিজেদের বড় করে তুলতে চেয়েছিলেন তারা কেউই টেকেননি। আমাদের নেতা বঙ্গবন্ধু নিজেকে কখনও সেভাবে সামনে আনেননি। তিনি তাঁর কাজ করে গিয়েছিলেন, সময় আর ইতিহাসই তাঁকে তুলে এনেছিল। বাঘা বাঘা বাঙালীরা যা পারেননি তিনি একা সে কাজ করে দেখিয়ে গেছেন কর্মেই মুক্তি, ফলাফলে নয়। সেই নেতাকে এভাবে বাণিজ্যবন্দী করার ব্যাপারটা কি কেবল গুটিকয় মানুষের তৈরি ফাঁদ, না এতে ইন্ধন আছে? সব ইন্ধন প্রকাশ্য নাও হতে পারে। পরিবারের কর্তা যদি কোন সন্তানকে অযথা মাথায় তোলে সে তো আস্কারা পাবেই। বাকিরা তখন সাবধান হয়ে যায়। অন্তরে যাই থাক মুখে কিছু বলে না। আজ কি ফের সে রিহার্সেলই দেখছি আমরা? দেশের মানুষকে বোকা ভাবার কাজটা আগেও হয়েছিল। যারা তা করেন তাদের পরিণতি কী? মা সন্তানের লাশ দেখতে পায় না। সন্তানের সঙ্গে দেখা করতে পারে না। সন্তান যদি কুসন্তান হয় তো রিফিউজি কোটায় কিছু উটকো বাংলাদেশীর প্রশ্রয়ে জীবন কাটায়। তাদের রাজনীতি সময়ের কিছু সুবিধা ভোগ করলেও আখেরে দুর্ভোগ তাদের ছায়াসঙ্গী। আওয়ামী লীগে সে দুর্গতি নেই বটে, তবে তারা যখনই গদিতে তখন তাদের আচার-আচরণ পাল্টে যায়। এ কথা আমরা মানি বা না মানি, এটাই বাস্তবতা। তাদের সময়ে সবচেয়ে নিগৃহীত হন কাছের মানুষেরা। যারা তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে সত্য কোন্্টি বুঝিয়ে দিতে চান, যারা তাদের মঙ্গল কামনায় তোষণ বাস্তবিকতার বিপরীতে আসল কথা বা কাজ করার পরামর্শ দেন, ভুল-ভ্রান্তি সরিয়ে এগোনোর পথ বাতলে দিতে চান তারাই পড়েন বিপাকে। নেত্রী শেখ হাসিনা ব্যতীত অন্যদের কাছে এসবের আজ আর কোন মূল্য আছে কি নেই সেটাও প্রশ্ন। মুক্তজীবন ও মুক্তমত যে কোন দেশের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এটা না থাকলে কী হবে সেটা এখন মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই দেখতে পাই। প্রশ্ন হচ্ছে এই মতামত কতটা স্বাধীন আর কতটা যৌক্তিক। আমরা পাশ্চাত্য বা বিদেশের উন্নত সমাজেও ধর্মের শীলিত ব্যবহার আর মার্জিত প্রকাশ দেখছি। এটা মানতেই হবে যে, মানুষের ইতিহাস মানে এর অনেকটা জুড়ে থাকা ধর্মীয় ইতিহাস। জীবন ও সম্পদ বাঁচানোর দায়টা কিন্তু সরকারের। বিশেষত ব্যক্তিগত আক্রমণের বাইরে যে কোন সহিংসতা ঠেকানোর দায়িত্ব তাদের। আমাদের এই সরকার গোড়াতে তা করছিল; কিন্তু রাজনৈতিক ভোল পাল্টানো আর হঠাৎ বদলে যাওয়া দৃশ্যপটে মাহমুদুর রহমানীয় ‘আমার দেশ’ যখন থাবা বিস্তার করল তখন থেকে পেছনে হাঁটা শুরু। এই পশ্চাৎপদতা এখন আমাদের জাতীয় জীবনের প্রধান একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মনে হচ্ছে কারও কোন দায় নেই। যার যা খুশি করতে পারবে। বাকিরা মুখে বঙ্গবন্ধু বগলে মোশতাক নিয়ে সুখে দিন কাটিয়ে যাবেন এই বাংলাদেশে। আমরা বিদেশেও এ ধরনের কর্মকা-ের প্রসার দেখছি। নামে পরিষদ নামে আওয়ামী লীগ। বিশ্বাস করা কঠিন এমন সব মানুষ নেতৃত্বে যাদের মানসিক সুস্থতাও প্রশ্নবিদ্ধ। এমন আওয়ামী লীগ কি আসলেই কোন কাজে আসতে পারে? রাতদিন দুশমন আর শত্রু তৈরিতে ব্যস্ত। অন্যের ভাল-মন্দ নির্ণয়ে দিশাহারা। এদিকে, বিএনপি-জামায়াত ঠিকই তাদের ঘর গুছিয়ে নিচ্ছে। দেশে যা ঘটে, যেভাবে ঘটে তার ছায়া পড়ে বিদেশের বাঙালীদের জীবনে। তাদের পথ নির্ধারিত হয় সে ধারায়। আজ আওয়ামীবান্ধব তথা দেশ ও প্রগতির সঙ্গে থাকা মিডিয়া ও মানুষজন আর কতভাবে যে আঘাতপ্রাপ্ত বা শিকার তা ভাবতেও ভয় লাগে। আমরা এখনও চাই বাংলাদেশ তার আপন শক্তি ও আনন্দে জাগুক। ক্রিকেট, হকি, ফুটবলে আমাদের ঐক্য যেন সাম্প্রদায়িকতা বা ধর্মের আবরণে বিভক্ত না হয়। সমাজ, রাষ্ট্র ও সংসারে আজ যে উন্মাদনা তা প্রশমনে আসুক স্বস্তিদায়ক কোন পরামর্শ। অবিশ্বাস আর ভয়ের কবল থেকে মুক্ত হোক জীবন। সাংবাদিকতা কলম লেখনী কথা ও মানুষের জীবন হোক নিরাপদ। যেটুকু অর্জিত হয়েছে, যেটুকু হওয়ার কথা তার ভেতর সেতু রচনা হোক। নিজেদের মানুষকে অপমান করে দুশমনকে বুকে টানার অপরাজনীতি কাউকে কোনদিন ছাড় দেয়নি। আদর্শহীনতার ফলাফল হাতে হাতে পাওয়া না গেলেও তার মাসুল গুনতেই হয়। ফলে আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দৃঢ় ও বলিষ্ঠ এক রাজনীতির দিকে তাকিয়ে আছি, যেখানে আছে স্বস্তি ও নিরাপত্তা। [email protected]
×