ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৭১ টিভির জমা দেয়া সিডির বিষয়ে আদেশ পরে ॥ আপীল বিভাগ

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১৯ আগস্ট ২০১৫

৭১ টিভির জমা দেয়া সিডির বিষয়ে আদেশ পরে ॥ আপীল বিভাগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধান বিচারপতির সঙ্গে অন্য এক বিচারপতির কথোপকথন নিয়ে একাত্তর টেলিভিশনে প্রচারিত খবর এবং আলোচনা অনুষ্ঠানের ভিডিও সিডি আরও পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তীতে আদেশ দেয়া হবে বলে জানিয়েছে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপীল বেঞ্চে বিষয়টি আদেশের জন্য ধার্য ছিল। শুনানিতে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতকে বলেন, একাত্তর টিভির সিডি জমা দেয়ার দিনও টকশোতে আদালতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আইনজীবীও আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এটা একটি প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বিচারক কিছু নয়। বিচারককে বাদ দিয়ে বিচার হয় না। এই প্রতিষ্ঠান (বিচার বিভাগ) ফেল করলে রাষ্ট্রে আইনের শাসন বলে কিছুই থাকবে না। তিনি আরও বলেন, যে যত ক্ষমতাধর হোক, আইনের শাসন ও তার প্রতি যদি সম্মান না থাকে, তাহলে তার ও সন্ত্রাসীর মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে না। চুরি ডাকাতি যেমন অপরাধ, এটাও (বিচারাধীন বিষয়ে সমালোচনা) তেমনি একটা অপরাধ। প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, আমেরিকান প্রেস ফ্রিডমের কথা বলা হয়, সেখানে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে সমালোচনা হয় না। বিশ্বের কোথাও এরকম নজির নেই। তিনি আরও বলেন, আমরা যে রায় দেই, সেটা কারও পছন্দ না হতেই পারে। সেই রায় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করতে তো কোন বাধা নেই। রায় নিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা করতে কোন বাধা নেই। সবারই এটা বোঝা উচিত।’ আদেশের জন্য দিন ধার্য থাকায় মঙ্গলবার আদালতে উপস্থিত ছিলেন একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু, পরিচালক বার্তা সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি ফরজানা রুপা প্রমুখ। শুনানি শেষে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম নিজ কার্যালয়ে প্রধান বিচারপতির মন্তব্যের বিষয়ে ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, সকলকে আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। নইলে আইনের শাসন ভেঙ্গে পড়বে। আইনের শাসনের প্রতি যাদের সম্মান নেই, তাদের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের কোন পার্থক্য নেই, সাংবাদিকরা প্রধান বিচারপতির এমন মন্তব্যের বিষয়টি স্পষ্টভাবে এ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে জানতে চাইলে তিনি ভালভাবে শুনতে পাননি বলে জানিয়েছেন। যদিও প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করার সময় তিনিই সবচেয়ে কাছাকাছি ছিলেন এবং প্রধান বিচারপতির কথাগুলো এজলাসে সবচেয়ে পেছনের ছিটে বসা সাংবাদিকরাও স্পষ্ট শুনেছেন। উল্লেখ্য, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে অন্য এক বিচারপতির কথোপকথন নিয়ে একাত্তর টেলিভিশনে প্রচারিত খবর এবং আলোচনা অনুষ্ঠানের ভিডিও সিডি গত রবিবার সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে দাখিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রচারিত প্রধান বিচারপতি ও আরেক বিচারপতির কথোপকথনের অডিও সিডিও দাখিল করেছে একাত্তর টিভি কর্তৃপক্ষ, যেখানে এক বিচারপতিকে বেঞ্চে না রাখতে সাকার পরিবারের পক্ষ থেকে অনুরোধ করার বিষয়টি প্রধান বিচারপতি স্বীকার করেছেন। এছাড়া বাড়ির মামলায় মওদুদ আহমদ এক বিচারপতিকে বেঞ্চে না রাখতে প্রধান বিচারপতির হাতে পায়ে ধরেছেন, প্রধান বিচারপতির কণ্ঠে এমন স্বীকারক্তিও ওই সিডিতে রয়েছে। পরে ওইদিন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার নেতৃত্বে দুই সদস্যের আপীল বেঞ্চ বিষয়টি মঙ্গলবার কার্যতালিকায় আদেশের জন্য রাখার নির্দেশ দেন। পরে মঙ্গলবার আদালত আদেশ না দিয়ে একাত্তর টিভির দাখিল করা সিডি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তীতে আদেশ দেয়া হবে বলে জানান।
×