ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিড়ম্বনা কিংবা উপভোগ

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২০ আগস্ট ২০১৫

বিড়ম্বনা কিংবা উপভোগ

ঋতু পরিক্রমায় বর্ষা অনন্য ও গুরুত্বপূর্ণ একটি ঋতু। গ্রীষ্মের দাবদাহ শেষে বর্ষা নিয়ে আসে পরম স্বস্তি। আমাদের দেশের গ্রামগুলো এদেশের প্রাণ। যেখানে বসবাস করে দেশের সিংহভাগ মানুষ। যাদের জীবন-জীবিকার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে বর্ষা। গ্রামের যাতায়াত ব্যবস্থাগু আগের তুলনায় কিছুটা ভাল হলেও এখনও অনেক গ্রাম রয়েছে যেখানের মানুষের মেঠোপথ পাড়ি দিয়ে বাজারে-বন্দরে আসতে হয়। বর্ষায় এসব পথ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়, চলতে গেলে হাঁটু অবধি দেবে যায়। তবুও মানুষেরা বর্ষার অপেক্ষায় থাকে। গ্রামের অধিকাংশ মানুষই কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। চৈত্র-বৈশাখে কৃষি জমিগুলো যখন ফেটে চৌচির হয়ে যায়, তখন বর্ষা আসে তাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে। কৃষি জমিগুলো ফিরে পায় নতুন জীবন। আর কৃষক নেমে পড়ে নতুন উদ্যমে ফসল ফলানোর আনন্দে। আবার এসব মানুষের আবাসস্থল ততটা সুখকর নয়। অধিক বর্ষণে দেখা যায় ঘরের চালার ফুটো দিয়ে পানি পড়ে। কৃষাণী পাত্র হাতে সে পানি ধরে ঘরকে ভিজে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। অনেকে পুকুরে মাছ চাষ করে। ঘন বর্ষায় পুকুর তলিয়ে মাছ ভেসে যায় খালে-ডোবায়। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা আবার সে মাছ ধরতে গামছা, বঁড়শি, জাল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শ্রাবণে যখন একটানা বৃষ্টি হয় তখন গ্রামবাসীর অলস সময় কাটে। একটানা বৃষ্টিতে তাদের করণীয় কিছু থাকে না। গোয়ালঘর থেকে গরুগুলো বের করার উপায় থাকে না। একটানা বৃষ্টিতে গরুগুলো থেমে থেমে ডাকে। হাঁস-মুরগিগুলো ঘরের ছাঁচে দাঁড়িয়ে উদাস ঝিমোয়। গাছের পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা পাখিগুলো হঠাৎই গা ঝাপটায়। জমিগুলো তলিয়ে যায়। কেউ কেউ ছোট নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে বেরিয়ে পড়ে। আবার ফেরার পথে গরুর জন্য নৌকায় করে ঘাস কেটে নিয়ে আসে। এ সময় কেউ অসুস্থ হলে পরে নিকটস্থ হাসপাতালে বা চিকিৎসালয়ে নিয়ে যাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। তবে যে মানুষগুলো দিন আনে দিন খায়, গ্রামের সেসব মানুষের জন্য বর্ষা আসে যেন অভিশাপ হয়ে। মাটিকাটা-ধানকাটা-হকার-রিক্সা/ভ্যান চালানো পেশার সঙ্গে যারা জড়িত, টানা বর্ষায় তাদের উপার্জন বন্ধ হয়ে যায়। তখন অনাহারে-অর্ধাহারে কোনমতে তাদের দিন কাটাতে হয়। অনেকে ঋণ করে এ সময় সংসার চালিয়ে ঋণী হয়ে পড়ে। আমরা যারা শহরে বসবাস করি তাদের অধিকাংশের বাড়িই গ্রামে। সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে যাদের সুযোগ রয়েছে তারা প্রত্যেকে প্রত্যেকের গ্রামের দিকে যদি একটু মনোযোগী হয় তাহলে আমাদের গ্রামগুলোর চেহারা পাল্টে যেতে পারে। গ্রামের মানুষের যে দুঃখ-দুর্দশা রয়েছে সেগুলো থেকে মুক্তি পেতে পারে। যাদের জন্য বর্ষা বিড়ম্বনার তাদের জন্য উপভোগ্য হতে পারে। মোহাম্মদপুর, ঢাকা থেকে
×