ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

স্বদেশ রায়

আদালতের দণ্ড ও মানুষের ভালবাসা

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২০ আগস্ট ২০১৫

আদালতের দণ্ড ও মানুষের ভালবাসা

দেশের সর্বোচ্চ আদালত আমাকে দণ্ড দিয়েছে, রাষ্ট্র ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নাগরিক হিসেবে আমি তা মেনে নিয়েছি। অন্যদিকে আমি আমার লেখার সপক্ষে সত্য তথ্য আদালতে উপস্থাপন করি, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই প্রধান বিচারপতি সে তথ্যকে সত্য বলে আদালতে স্বীকার করেছেন। আদালতের হাতে ন্যায়ের দণ্ড, আদালত আমাকে দণ্ড দিয়েছেন, আমার দায়িত্ব সত্য তুলে ধরা। আমি সত্য তুলে ধরেছি। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি আদালতে স্বীকার করেছেন। তাই এ বিচারের রায়ের পরে ‘ভবিষ্যত’ আর দেশের ষোলো কোটি মানুষের আরও একটি বিচারের রায়ের অবকাশ রয়ে গেছে। ভবিষ্যত বিচার করবে। সে ভবিষ্যত যদি কোন দীর্ঘ সময় পরেও আসে তাতে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। কারণ, সত্যের জন্যে, ন্যায়ের জন্যে, জাতির জন্যে কোন কাজে সাময়িক কোন রায় কোন বড় কিছু নয়। ভবিষ্যতে জাতি ও মানুষ যে রায় দেবে সেটাই অনেক বড়, আসুক না সে রায় শতবর্ষ পরে। দেশের ষোলো কোটি মানুষের রায়ের কিছু কিছু ইতোমধ্যে আমি আমার পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের কাছ থেকে পাচ্ছি। যেদিন আদালতে আমি প্রধান বিচারপতির কথোপকথন উপস্থাপন করি, আমাদের আইনজীবী তার কিছু অংশ পড়ে শোনানোর পরে প্রধান বিচারপতি স্বীকার করে নেন, এ বক্তব্য তাঁর। যে কথোপকথনে আছে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে অনুরোধ করা হচ্ছে ও মওদুদ তার হাতে পায়ে ধরেছে...। তাদের কথামত তিনি এক বিচারপতিকে বেঞ্চে রাখেননি। এরপর থেকেই কিন্তু আমার পাঠকরা আমাকে নানানভাবে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এদের ভেতর অনেকে আছেন, প্রায় তিন দশক আমার লেখা পড়ছেন, তারা গর্বের সঙ্গে বলেছেন, এর পরে যাই ঘটুক তাদের কোন দুঃখ নেই। তাঁদের বক্তব্য অনেক বড়; কিন্তু আমার ভাষায় বলতে চাই, আমার মতো একজন ক্ষুদ্র সাংবাদিকের লেখা তাঁরা গর্ব নিয়ে পড়েন, তাঁদের সে গর্ব অটুট আছে। কারণ, সত্যের ওপর ভিত্তি করেই আমার লেখা। এরপরে রায়ের দিন থেকে এ লেখা যখন লিখছি তখন অবধি যে ভালবাসা পাঠকের কাছ থেকে পাচ্ছি, সে ঋণ শোধ করার যোগ্যতা আমার কোনদিন হবে না। তবে পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের কাছে ঋণী হয়ে গেলাম। শুধু অভিনন্দন নয়, দেশ ও বিদেশ থেকেও এমন এসএমএস ও ই-মেইল পেয়েছি যে, প্রথমে যখন ভুল সংবাদ প্রচার হয়েছিল কয়েকটি টিভিতে যে আদালত আমাদের দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছে, তখন তারা লিখেছে- ‘আমরাও নিজ নিজ স্থানে আপনাদের সঙ্গে সহযাত্রী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছি।’ তারপরেও হাজার হাজার পাঠকের টেলিফোনে, সোস্যাল মিডিয়া কানেকশনে ও ই-মেইলে প্রশ্ন, কেন দণ্ড পেলাম? প্রথমেই বলেছি, এর উত্তর একমাত্র ভবিষ্যত ও ষোলো কোটি মানুষ সঠিকভাবে দেবে। এ দণ্ড গর্বের না অপমানের? যেমন আদালত থেকে আমাদের যে অর্ডারটি করা হয়েছিল, তার কোন ইংরেজী শব্দের অর্থ এমনটি আসে না যে, আদালত নিয়ে কুৎসা রটানো হয়েছে। এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বার বার টিভিতে বলেছেন, আদালত নিয়ে কুৎসা রটনা করা হয়েছে। বিচার শুরুর প্রথম দিনে আদালতে তাঁর সঙ্গে দেখা হলে, বিনীতভাবে তাঁর কাছে জিজ্ঞাসা করেছিলাম- মাহবুব ভাই আপনি ‘কুৎসা’ শব্দটি কেন বললেন, আমি কি কুৎসা রটিয়েছি? তিনি আমাকে এ প্রসঙ্গে কিছু কথা না বলে বললেন, আপনি কেন লিখলেন, প্রধান বিচারপতি শান্তি কমিটির মেম্বর ছিলেন। মি. সুরেন্দ্র কুমার সিনহা মাননীয় প্রধান বিচারপতি হওয়ার আগে যখন আপীল বিভাগে ছিলেন তখন ২০১৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর কামারুজ্জামানের মামলা চলাকালে আদালতে বলেন, তিনি শান্তি কমিটির মেম্বর ছিলেন, যা ঢাকা ট্রিবিউন প্রথম পাতায় ছাপে। এই নিউজ ছাপা হওয়ার পরে আমি আমার একটি কলামে লিখেছিলাম, তাঁর বিচারপতি থাকা উচিত নয়। কারণ, ’৭১-এ যিনি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিলেন তিনি দেশের বিচার বিভাগ কেন কোন সাংবিধানিক পদে থাকা মঙ্গলজনক নয় ও উচিত নয়। কারণ, তাদের চেতনা আমাদের সংবিধানের বাইরে। আমাদের সংবিধান যে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সৃষ্টি এই মুক্তিযুদ্ধকে তারা কখনও উর্ধে তুলে ধরতে পারেন না। এ সত্যও আমরা দেখেছি বিচার চলাকালে। আমাদের আইনজীবী স্বাধীনতার চেতনার সপক্ষে সাংবাদিকদের ভূমিকার কথা বললে প্রধান বিচারপতি ধমক দিয়ে বলেন, রাখেন স্বাধীনতা...। যাহোক, আমি জানি না, আমাদের এ্যাটর্নি জেনারেল কেন আমার ওই লেখায় দোষ পেলেন! যিনি নিজে স্বীকার করছেন তিনি শান্তি কমিটির মেম্বর ছিলেন, তা নিয়ে লেখা দোষের কেন জানি না। তবে আমরা সাংবাদিক, আমরা রাজপথে থাকি, সাধারণ মানুষের ভাষা ও সেøাগান আমরা শুনি। আমরা ১৯৯১ সালে এ দেশের রাজপথে সেøাগান শুনেছি, ‘রাষ্ট্রপতি রাজাকার, দেশবাসী হুঁশিয়ার’। সেদিন বিএনপি আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে রাষ্ট্রপতি করেছিল। আব্দুর রহমান বিশ্বাস শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন ১৯৭১ সালে। ১৯৯১ থেকে আজ ২০১৪ ও ১৫-তে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরুদ্ধারে জাতি আরও অনেক ঐক্যবদ্ধ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতি সেখানে এগিয়ে যেতে পেরেছে। তরুণ প্রজন্ম গত ২০০৮ থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার যাবতীয় পরিবেশ পাচ্ছে। তাই বিজ্ঞ এ্যাটর্নি জেনারেলকে বিনীতভাবে প্রশ্ন করতে হয়- এ সময়ে কোন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী বলা, রাজাকারকে রাজাকার বলায় দোষ কোথায়? এ সময়ে কি রাস্তায় সেøাগান উঠবে না ‘ওমুক পদে রাজাকার দেশবাসী হুঁশিয়ার’- এ নিশ্চয়তা কি এ্যাটর্নি জেনারেল দিতে পারেন? তাছাড়া এ কি খালেদার শাসনামল যে রাজাকারকে রাজাকার বললে দেশদ্রোহী, কুৎসা রটনাকারী হতে হবে? জাহানারা ইমামসহ ২৪ বিশিষ্ট নাগরিক রাজাকারের বিচার করার উদ্যোগ নিয়ে দেশদ্রোহী হয়েছিলেন খালেদার শাসনামলে। এ্যাটর্নি জেনারেল কি খালেদা ও শেখ হাসিনার শাসনামলকে এক করে ফেলছেন? আদালতে বিচারের সময় যখন আমার লেখার সপক্ষে তথ্য তুলে ধরা হলো, মি.সুরেন্দ্র কুমার সিনহা মাননীয় প্রধান বিচারপতিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মওদুদ বলেছে তার মামলার বিষয়ে আর সেই মতো কাজ হয়েছে। তখন বিজ্ঞ এ্যাটর্নি জেনারেল বললেন, এটা নাকি আদালতকে স্ক্যান্ডালাইজ করা হচ্ছে। দ্বিতীয় দিনে আবার এ তথ্য উপস্থাপনের সময় এ্যাডভোকেট সুজন, সাইফুদ্দিনসহ আরও একজন আদালতে চিৎকার করে উঠলেন। আদালতের ভেতর এমন কাজ গুণ্ডামির পর্যায়ে পড়ে, যা আদালতে কাম্য নয়। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের ভেতর সর্বোচ্চ নিয়মহীনতা। তাই স্বাভাবিক প্রশ্ন ওঠে, বাস্তবে এ্যাটর্নি জেনারেল ও সুজনরা কার পক্ষে কাজ করলেন? এ্যাটর্নি জেনারেল রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা, তিনি রাষ্ট্র ও জনগণের আইনজীবী। অন্যদিকে মি.সুজন সরকারী দলের একজন এমপি। তারা কি বাস্তবে শেখ হাসিনার নির্বাচনী অঙ্গীকারের বিরুদ্ধে গিয়ে দাঁড়ালেন না? শেখ হাসিনার নির্বাচনী অঙ্গীকার যুদ্ধাপরাধীর বিচার করা। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী স্বীকৃত যুদ্ধাপরাধী। মওদুদ আহমদ বিএনপি নেতা হিসেবে এই যুদ্ধাপরাধের বিচারের ট্রাইব্যুনাল ভেঙ্গে দিতে বলেছেন। অন্যদিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিচার শুরু হওয়ার পর থেকেই তার পরিবারের তৎপরতা সকলে জানেন। তাদের কথামতো যখন প্রধান বিচারপতি কাজ করলেন এ্যাটর্নি জেনারেল খুব চতুরভাবে বিষয়টিকে আদালতকে স্ক্যান্ডালাইজ বলে ও মি. সুজনরা গু-ামি করে বাস্তবে কোন্ সত্যটি ঢেকে দেয়ার চেষ্টা করলেন? কার পক্ষে কাজ করলেন? আদালতে দেয়া আমাদের তথ্যের ভেতর দিয়ে ও প্রধান বিচারপতির স্বীকার করে নেয়ার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়, প্রধান বিচারপতিকে বেঞ্চ গঠনে প্রভাবিত করছে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবার ও মওদুদ আহমদ। এদের একটি অংশ যুদ্ধাপরাধী পরিবার, অন্য অংশ যুদ্ধাপরাধী বিচারের ট্রাইব্যুনাল ভেঙ্গে দেয়ার দাবি করেছেন। তাই এই মওদুদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের মতানুযায়ী যে কাজ হয়েছে সেই কাজের সপক্ষে দাঁড়ানোর অর্থ কি পক্ষান্তরে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে দাঁড়ানো নয়? প্রধান বিচারপতি আদালতে অবশ্য এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন, এই লেখা লেখার পরে তিনি যদি বিচার থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিতেন তাহলে কে লাভবান হতো? এখানে তিনি কী বোঝাতে চাচ্ছেন তা স্পষ্ট। কিন্তু যদি অন্য কিছু হতো? কারণ, যাদের কথামতো বেঞ্চ গঠন হয়েছে তাদের আশা যদি পূর্ণ হতো? বিএনপি তো রায়ের দিন বিকেলে বলেছে, তারা হতাশ হয়েছে। তাদের এই বক্তব্যের ভেতর দিয়ে বোঝা যায়- তাদের আশার কিছু ছিল। সে আশা যদি পূর্ণ হতো। ইতোপূর্বে এ দেশের মানুষ দুটি ‘আমৃত্যু’ দেখেছে। যদি আমৃত্যু হতো? দোষ কার হতো? দেশের সাধারণ মানুষ দোষ দিত সরকারকে, দোষ দিত শেখ হাসিনাকে। অথচ আমরা জানি শেখ হাসিনা ছাড়া দ্বিতীয় কোন মানুষ এখন বাংলাদেশে নেই যিনি আন্তর্জাতিক চাপের মুখে দাঁড়িয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবেন। এ্যাটর্নি জেনারেল বিচারালয়ে আমাদের সাংবাদিকদের অনেক জ্ঞান দিয়েছেন। তিনি বর্তমানের সাংবাদিকতাকে অতি তুচ্ছ ও নিচুমানের শুধু বলেননি, তিনি আরও অনেক নিচে আমাদের অবস্থান দিয়েছেন। এ তাঁর নিজস্ব বক্তব্য। তাঁর বক্তব্যের বিপরীতে দাঁড়িয়ে নিজেদের বড় করার সপক্ষে যুক্তি দিয়ে নিজের পেশার মানুষকে ছোট করব না। তবে দেশের মানুষ জানে ১৯৯১ সালে শেখ হাসিনার উদ্যোগে যখন থেকে যুদ্ধাপরাধী বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় তখন থেকে সাংবাদিকরা কী দায়িত্ব পালন করে আসছে। তাই আমি কেন, যে কোন সাংবাদিক যদি এমন কোন তথ্য পায় যার ভেতর দিয়ে এই সত্যটি সামনে আসে যে, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি ঠেকাতে ষড়যন্ত্র চলছে তখন সে সাংবাদিক জেল, জরিমানা কেন জীবনের ঝুঁকি নিয়েও কাজ করবে। এ্যাটর্নি জেনারেল আমারও এ্যাটর্নি, যেহেতু আমি এ রাষ্ট্রের একজন তাই সাংবাদিকদের নিন্দা না করে সাংবাদিকদের এ দায়িত্বটি বুঝলে তিনি আরও বড় হতেন। কারণ, যখন কোন জাতীয় স্বার্থ আসে তখন একজন সাংবাদিককে তার জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিতে হয়। এই ঝুঁকি জেনেই কিন্তু এ পেশায় তারা আসেন। এ্যাটর্নি জেনারেল আমার লেখার ফখরুলের জামিনের অংশের কথা বলতে গিয়ে জীবনানন্দের ‘ক্যাম্পে’ কবিতার উদাহরণ টেনে বলেছেন, অশ্লীলতার জন্যে ওই কবিতা লেখার পরে তার চাকরি চলে গিয়েছিল। এ্যাটর্নি জেনারেলের এ কথার উত্তর প্রথমেই লিখেছি, প্রকৃত বিচার আমি ভবিষ্যতের কাছ থেকে আর দেশের ষোলো কোটি মানুষের কাছ থেকে পেতে অপেক্ষা করতে চাই। তবে বিজ্ঞ এ্যাটর্নি জেনারেলকে জানাতে হয়, জীবনানন্দ তাঁর জীবদ্দশায় জেনে গেছেন, ক্যাম্পে কবিতা অশ্লীল নয়। বুদ্ধদেব বসুর ‘রাত ভোর বৃষ্টি’, সমরেশ বসুর ‘প্রজাপতি’ও অশ্লীল হিসেবে নিষিদ্ধ হয়েছিল। সময়ই আবার তাকে অশ্লীলতা থেকে মুক্তি দিয়েছে। নিয়ে গেছে অনেক উপরে। তবে এরপরেও মাঝেমধ্যে এ্যাটর্নি জেনারেলের চিন্তার মতো এমন কালো মেঘ লেখক ও সাংবাদিকদের লেখার ওপর নামে। যেমন সম্প্রতি একজন বড় সুশীল মিডিয়ায় জীবনানন্দের বনলতা সেন কবিতার বনলতা সেনকে বেশ্যা হিসেবে বিচার করেছেন। কারণ, জীবনানন্দ লিখেছেন, ‘সব পাখি ঘরে আসে-সব নদী-ফুরায় এ-জীবনের সব লেন দেন;/ থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।’ ওই সুশীলের মতে অন্ধকারে কে থাকে, অন্ধকারে বেশ্যা থাকে। কিন্তু একজন কবিতার পাঠক কিন্তু এভাবে দেখে না, তার চিন্তা অত নিচে নামে না। পাঠক দেখেন, সমস্ত দিন অর্থাৎ সকল ঝড় ঝাপটা, জীবনের সকল চড়াই-উতরাইয়ের পরেও সন্ধ্যার নীরবতার শান্তির মতো জীবনে শুধু প্রিয়াই থাকে। আর সেই প্রিয়াকে আরও বাস্তব করে তোলার জন্যে জীবনানন্দ বনলতা সেন বলেছেন। শুধু বনলতা বলেননি অর্থাৎ প্রিয়াকে রক্ত মাংসের মানবিক বোধের বাস্তব নারী হিসেবে নিয়ে এসেছেন। অথচ বনলতা সেন নামক প্রিয়ার এ রূপকে বেশ্যা হিসেবে চিহ্নিত হলো ‘সুশীল’ চিন্তায়। ফখরুলের জামিনের বিষয় লিখতে গিয়ে লিখেছিলাম গ্রামের সামান্য জমি নিয়ে যারা মাথা ফাটিয়ে বছরের পর বছর জেলে আছে। জামিন পাচ্ছেন না। অথচ ফখরুল জামিন পায় যেহেতু তার টাকা আছে। এই টাকার অর্থও কিন্তু ওই সুশীল যেভাবে প্রিয়াকে বেশ্যায় রূপান্তরিত করেছেন, আমাদের এ্যাটর্নি জেনারেলও সেই কাজটি করেছেন। তিনি এখানে এই টাকা বলতে দরিদ্র মানুষের টাকা নেই, তারা সুপ্রীমকোর্টে লাখ লাখ টাকা ফিস দিয়ে আইনজীবী নিতে পারেন না- এই অর্থ না করে বিচারকরা টাকা ঘুষ খান এই অর্থ করেছেন। আমি দ-িত হয়েছি। তাঁর এই অর্থ করার কারণে। আগেও লিখেছি দ- নিয়ে কোন ক্ষোভ নেই, দুঃখ নেই। তবে একটি প্রশ্ন থেকে যায়, কেন এই মাথাগুলো প্রিয়াকে বেশ্যা বানায়, কেন অর্থের কথা শুনলেই ঘুষ হিসেবে ধরা হয়? কোথায় এ সমস্যাটা? সমাজবিজ্ঞানীদের চিন্তা করা প্রয়োজন এ সমস্যা কি সমাজের ভেতর, শিক্ষার ভেতর, না মানসিকতার ভেতর? কোন সমাজ একদিনে এগোয় না। সমাজের পথ অনেক দীর্ঘ। সহস্র বছরও এখানে অনেক ক্ষুদ্র সময়। তবে যখন বড় বড় মাথার ভেতর এভাবে প্রিয়াকে বেশ্যা বানানোর চিন্তা আগে আসে তখন শঙ্কিত হওয়া উচিত। কারণ, এ লক্ষণ সমাজের অনেক বড় দুঃসময়ের লক্ষণ। যাহোক, লেখার কলেবর বেড়ে যাচ্ছে। আর এ লেখায় আত্মপক্ষ সমর্থনেরও কিছু নেই। কারণ, সাংবাদিক হিসেবে, মিডিয়ার একটি অংশ হিসেবে জনকণ্ঠের যে দায়িত্ব তা জনকণ্ঠ পালন করেছে। সত্য তথ্য তুলে ধরেছে। যে তথ্য যার বিরুদ্ধে সেই প্রধান বিচারপতি স্বীকার করে নিয়েছেন। অন্যদিকে জনকণ্ঠ সাংবাদিকতার পেশার মর্যাদা থেকে এক পা নড়েনি। দণ্ড মেনে নিয়েছে; কিন্তু সত্য তথ্য প্রকাশ করে হাতজোড় করেনি। বাস্তবে গণতন্ত্রে এমন কোন স্থান থাকতে পারে না, যেখানে সত্য বলার পরেও হাতজোড় করতে হবে। এটা ছিল রাজার আমলে। যখন রাজা নিজে বিচার করতেন তখন। তাছাড়া পৃথিবীতে সত্যের জন্যে মৃত্যু অনেক সম্মানের; কিন্তু সত্যকে ফেলে দিয়ে আপোস করে বেঁচে থাকা বড়ই অপমানের। তবে এরপরেও এ্যাটর্নি জেনারেলকে আরও একটি প্রশ্ন করতে হয়, তিনি আমাদেরও এ্যাটর্নি। তিনি যে বেতন পান সেখানে আমাদের ট্যাক্সের টাকাও আছে। যখন আমাদের বিচার হচ্ছে। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, যিনি অভিযোগ স্বীকার করে নিচ্ছেন- তারপরেও এ্যাটর্নি জেনারেল কেন বললেন না, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি আমাদের বিচার করতে পারেন না। এখানে কি তিনি জনগণের সরকারের নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়ালেন না? তিনি কি একটি অন্যায়কে সমর্থন করলেন না যে, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনিই মূল বিচারক! তবে আমরা দণ্ডিত হয়েছি বলে নয়, সাংবাদিক ও মিডিয়াকে সব সময়ই সত্য প্রশ্নটি জাতির কাছে আনতে হবে। এখন দেশের গণতন্ত্রের স্বার্থে, রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে সর্বোপরি জাতির মর্যাদার স্বার্থে প্রশ্ন, রাষ্ট্রের একটি স্তম্ভের সর্বোচ্চ চেয়ারে বসে যিনি তাঁর নিয়মভঙ্গের তথ্যকে স্বীকার করে নিলেন, তিনি কি আর ওই চেয়ারে থাকতে পারেন? দেশের সব থেকে প্রবীণ আইনজীবী রফিক-উল হক বলেছেন, পদত্যাগ করা উচিত। প্রবীণ আইনজীবী রফিক-উল হক, সাংবাদিক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, সাংবাদিক আনিস আলমগীরসহ অনেকেই এ মতামত দিয়েছেন। জাতীয় সংসদের সদস্যগণ মূলত সকল প্রতিষ্ঠানের ও গণতন্ত্রের মূল রক্ষক। এখন বিষয়টি তাঁরা নিশ্চয়ই ভেবে দেখবেন কী তাঁদের করণীয়। [email protected]
×