ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

দিল্লীতে মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক

দুই দেশের বিশাল বাজার কাজে লাগাতে পারলে ‘বড় কিছু’ করা সম্ভব

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২০ আগস্ট ২০১৫

দুই দেশের বিশাল বাজার কাজে লাগাতে পারলে ‘বড় কিছু’ করা সম্ভব

বিডিনিউজ ॥ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশাল বাজারকে কাজে লাগাতে পারলে প্রতিবেশী এই দুই দেশ ‘বড় কিছু’ করতে পারে। বুধবার নয়াদিল্লীতে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জীর শেষকৃত্যে অংশ নেয়ার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন বলে তার প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান। বাংলাদেশের মেয়ে শুভ্রা মুখার্জীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বুধবার সকালে দিল্লী পৌঁছান শেখ হাসিনা। তিনি রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে প্রণব মুখার্জীর প্রতি সমবেদনা জানান এবং তার ছেলে অভিজিৎ মুখার্জীর বাড়িতে গিয়ে শুভ্রা মুখার্জীর কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে লোধি রোডের শ্মশানে গিয়ে শুভ্রা মুখার্জীর শেষকৃত্যে অংশ নেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। শেষকৃত্য শেষে রেসকোর্স রোডে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবনে যান শেখ হাসিনা। সেখানেই বৈঠক করেন দুই নেতা। শেখ হাসিনার প্রেস সচিব ইহসানুল করিম পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের বিশাল বাজারের কথা প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমরা নিজেরাই অনেক কিছু করতে পারি।’ বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে স্বাক্ষরিত সাম্প্রতিক চুক্তিকে দুই প্রধানমন্ত্রীই স্বাগত জানান। প্রেস সচিব জানান, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় যৌথ মহড়ার কথা বলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। জবাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের মহড়া হলে তা হবে প্রশংসনীয় উদ্যোগ। স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের কাজ ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ এগিয়ে চলায় সন্তোষ প্রকাশ করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, যেকোন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়ার চেয়ে বাস্তবায়ন ‘অনেক কঠিন’। কোন ‘সমস্যা ছাড়াই’ স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়িত হওয়ায় এ ঘটনা বিশ্বের কাছে ‘দৃষ্টান্ত’ হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। মোদি বলেন, চুক্তি বাস্তবায়নের এ ঘটনা রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর জন্য গবেষণার বিষয় হতে পারে। গত জুন মাসে ঢাকা সফরের অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে মোদি বাংলাদেশের আতিথেয়তার প্রশংসা করেন। ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর’ পরিদর্শনের স্মৃতিচারণ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে গিয়ে তিনি অভিভূত হয়েছেন। এই জাদুঘরের ডিজিটালাইজেশন এবং আধুনিকায়নে প্রযুক্তি সহায়তা দেয়ার কথাও বলেন নরেন্দ্র মোদি। ইহসানুল করিম বলেন, ‘এজন্য একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর বিষয়েও ভারতের প্রধানমন্ত্রী আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।’ শুভ্রা মুখার্জীর কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ের কথা বৈঠকে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাবা শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের সদস্যরা হত্যার শিকার হওয়ার পর দীর্ঘদিন তিনি নির্বাসনে ভারতে ছিলেন। তখন থেকেই প্রণব মুখার্জীর পরিবারের সঙ্গে তার সম্পর্ক, যা দিন দিন আরও গভীর হয়েছে। এ কারণে ভারতের রাষ্ট্রপতির স্ত্রীর প্রয়াণের কথা শুনেই ‘ছুটে এসেছেন’ বলে শেখ হাসিনা জানান। নরেন্দ্র মোদি তার আসন্ন যুক্তরাজ্য সফরের কথা তুলে ধরে বলেন, তখন তার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নাতনি ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে দেখা হবে। দুই প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের সময় শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা ও মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুল ছাড়াও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ ও প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও পররাষ্ট্র সচিব জয়শংকর উপস্থিত ছিলেন। সংক্ষিপ্ত সফর শেষে বিকেলে প্রধানমন্ত্রী ঢাকার পথে রওনা হন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিং এবং বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানান। শুভ্রা মুখোপাধ্যায়ের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শেষ শ্রদ্ধা ॥ ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জির প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার সকালে তিনি নয়াদিল্লীর ১৩ তাল কাটরা রোডে প্রণব মুখার্জির ছেলে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে যান। সেখানে তিনি শুভ্রা মুখোপাধ্যায়ের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান। শুভ্রা মুখোপাধ্যায়ের শেষকৃত্যে অংশ নিতে বুধবার সকালে ঢাকা থেকে দিল্লী পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এবং দিল্লীতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী। দিল্লী পৌঁছে শেখ হাসিনা সরাসরি ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে যান। সেখানে তিনি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাত করেন এবং তার প্রতি সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ ছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এ সময় উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে শেখ হাসিনা যান তালকাটরা রোডে। সেখানে শুভ্রা মুখোপাধ্যায়ের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন। পরে সেখান থেকে যান লোধি রোড শ্মশানে। সেখানেই শুভ্রা মুখোপাধ্যায়ের শেষকৃত্য হয়। প্রধানমন্ত্রী সেখানে প্রায় ৪০ মিনিট অবস্থান করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ভাইস প্রেসিডেন্ট হামিদ আনসারি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধী, বিজেপির জ্যেষ্ঠ নেতা এলকে আদভানি, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন। প্রেস সচিব জানান, শেষকৃত্যে যোগ দেয়ার পর শেখ হাসিনা রেস কোর্স রোডে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবনে যান। সেখানে বৈঠক করেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী ফিরেছেন ॥ ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জীর শেষকৃত্যে অংশ নিয়ে সংক্ষিপ্ত সফর শেষে ভারত থেকে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দিল্লী থেকে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে ঢাকায় এসে পৌঁছেন প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীরা। শুভ্রা মুখার্জীর শেষকৃত্যে অংশ নিতে সকালে ঢাকা থেকে দিল্লী পৌঁছেন শেখ হাসিনা। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এবং দিল্লীতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী।
×