ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এমপিওভুক্তির তুঘলকি কাণ্ডের তদন্তে চার সদস্যের কমিটি

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২০ আগস্ট ২০১৫

এমপিওভুক্তির তুঘলকি কাণ্ডের তদন্তে চার সদস্যের কমিটি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এক মাসেই সাড়ে তিন হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিওভুক্তি সেই তুঘলকি কা- খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। অধিদফতরের মাদ্রাসা শাখার বিরুদ্ধে ওঠা গুরুতর এ অনিয়মের অভিযোগের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে স্কুল ও কলেজ শাখার নতুন এমপিওভুক্তির বিষয়টিও। মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুনের নির্দেশে গঠন করা পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি তিন শাখার এমপিও পুনর্মূল্যায়ন করবে। মহাপরিচালক জানিয়ে দিয়েছেন, তদন্তে অনিয়মের প্রমাণ পেলে এমপিও বাতিল করা হবে। অনিয়ম হলে কেউ রেহাই পাবে না। এর আগে ১৩ আগস্ট জনকণ্ঠ পত্রিকায় ‘রাতারাতি এমপিও’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের পরই তদন্ত করে সর্বশেষ এমপিও পুনর্মূল্যায়নের ঘোষণা দেয় প্রশাসন। ঘোষণা অনুসারে তিন শাখার জন্য পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এক শাখার তদন্ত করবে অন্য শাখার কর্মকর্তারা। তবে এক শাখার কর্মকর্তারা অন্য শাখার কর্মকর্তাদের অনিয়ম পেলেও তা ধরবেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। মাউশির কর্মকর্তারাই বলছেন, দুটি কারণে তদন্ত কমিটি গঠনের উদ্দেশ্য ব্যহত হবে। একটি হচ্ছেÑ দুই শাখার কর্মকর্তারা নিজেরা বোঝাপড়া করে ভাল রিপোর্ট দিয়ে দিবেন। কেউ কারও অনিয়ম ধরবেন না। আরেকটি হচ্ছে মাদ্রাসা শাখায় যাদের বিরুদ্ধে গণহারে এমপিও দেয়ার অভিযোগ ওঠেছে তাদেরও একটি তদন্ত কমিটিতে রাখান হয়েছে। এ অবস্থায় সঠিক ফল আদৌ পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান শিক্ষক-কর্মকর্তারা। জানা গেছে, বেসরকারী কলেজে জুলাই মাসের প্রদত্ত এমপিও যাচাই-বাছাই করতে গঠন করা হয়েছে চার সদস্যবিশিষ্ট কমিটি। এ কমিটির আহ্বায়ক হচ্ছেন মাউশির সহকারী পরিচালক (কলেজ-৪) কাজী নুরে আলম সিদ্দিকী। সদস্য সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-২) এ এস এম আব্দুল খালেক, শিক্ষা কর্মকর্তা (মাধ্যমিক-১) চন্দ্র শেখর হালদার ও শিক্ষা কর্মকর্তা (মাধ্যমিক-২) মোঃ আফসার উদ্দিন। স্কুলের এমপিও তদন্তে গঠিত কমিটিতে আছেন মাদ্রাসা শাখার উপ-পরিচালক আবুল হোসেন, সহকারী পরিচালক নাসির উদ্দিন, সেপিপের অর্থ ও হিসাব শাখার সহকারী পরিচালক তানভীর মোশাররফ খান। মাদ্রাসার এমপিও তদন্তে গঠিত কমিটিতে আছেন উপ-পরিচালক (বেসরকারী কলেজ) মেজবাহ উদ্দিন সরকার, সহকারী পরিচালক (সেসিপ) দিলরুবা আক্তার, সহকারী পরিচালক (শারীরিক শিক্ষা) আব্দুস সালাম ও সহকারী পরিচালক (কলেজ-৩) হেলাল উদ্দিন। জানা গেছে, এর আগে এক মাসেই সাড়ে তিন হাজার শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিওভুক্ত করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মাদ্রাসা শাখা। প্রতি মাসে গড়ে যেখানে নতুন এমপিও হয় ৭০০-৮০০, সেখানে সর্বশেষ এক মাসেই অবিশ্বাস্যভাবে মাদ্রাসায় সাড়ে তিন হাজার এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। নতুন সৃষ্ট মাদ্রাসা অধিদফতর ও আঞ্চলিক কেন্দ্রে চলে যাবে এমপিও’র কাজÑ তাই দ্রুত অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে অযোগ্যদেরও রাতারাতি এমপিওভুক্ত করে ফেলেছেন এ শাখার কর্তা ব্যক্তিরা। ভুয়া এমপিওভুক্ত করে সরকারের কোটি কোটি টাকা গচ্ছা দেয়ার এ ঘটনা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে র্শিক্ষা প্রশাসনে। মাউশির মাদ্রাসা শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম দুর্নীতির খবর এটাই প্রথম নয়। এমপিওভুক্তিতে নানা অপকর্ম করে এখানকার কর্মকর্তা কর্মচারীদের শাস্তিও হয়েছে বহুবার। দুদকের তদন্তেও বিভিন্ন সময় ধরা খেয়েছেন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। কিছুটা স্পর্শকাতর জায়গা হওয়ায় গণমাধ্যমের নজরও এখানে অন্য শাখার তুলনায় কম থাকে। এমপিও’র ফাইল যেহেতু মাউশির পরিচালকই (মাধ্যমিক ) চূড়ান্ত করেন সেহেতু এখানে মহাপরিচালকের চোখকে ফাঁকি দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জালিয়াতির সুযোগও বেশি এই শাখায়। পরিচালককে বুঝিয়ে ম্যানেজ করতে পারলেই হয়। এই শাখাকে ‘টাকার খনি’ও বলে থাকেন অন্যান্য শাখার কর্মকর্তা কর্মচারীসহ সারাদেশ থেকে আসা শিক্ষক-কর্মচারীরা।
×