ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সেলিম আল দীনের জন্মদিনের আয়োজন

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ২০ আগস্ট ২০১৫

সেলিম আল দীনের জন্মদিনের  আয়োজন

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ নাট্যাচার্য ড. সেলিম আল দীনের ৬৬তম জন্মবার্ষিকী ছিল ১৮ আগস্ট মঙ্গলবার। রবীন্দ্র-উত্তরকালের উপমহাদেশের বাংলা নাটকের অন্যতম দিকপাল, অনন্যসাধারণ এই নাট্যকারের জন্মদিন উপলক্ষে তার নাট্য-ঐতিহ্যের ধারক নাট্যসংগঠনগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে। এর মধ্যে ঢাকার বাইরে সেলিম আল দীন নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বগুড়া থিয়েটারসহ অপরাপর কয়েকটি সংগঠন। এ উপলক্ষে বগুড়া শহরের শহীদ টিটু মিলনায়তনে সেলিম আল দীন পাঠশালার আয়োজনে ও বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার, বগুড়া থিয়েটার, কলেজ থিয়েটার, ভোর হল’র সহযোগিতায় পালিত হয় দিবসটি। আয়োজনের শুরুতে সেলিম আল দীনের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর অনুষ্ঠিত হয় শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণী ও সেলিম আল দীনের নাট্য ভাবনা নিয়ে মুক্ত আলোচনা। সবশেষে মঞ্চস্থ হয় বগুড়া থিয়েটারের ৬৩তম পরিবেশনা নটক ‘দ্রোহ’। সেলিম আল দীন কে ধ্রুব তারা মেনে বর্ণনাত্মক রীতিতে এ নান্দনিক নাটকটি রচনা করেছেন ও একইসঙ্গে শিল্প নির্দেশনা দিয়েছেন নাট্যব্যক্তিত্ব তৌফিক হাসান ময়না। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন কনক কুমার পাল অলক, ফারুক হোসেন, জাকিউল ইসলাম সবুজ, পাপড়ি ইসলাম, বিধান কৃষ্ণ রায়, জিনিয়া ফারজানা জ্যোতি, রওনক জাহান রাকা, নিশু ইসলাম, সবুজ বর্মণ, সর্দার হামিদ, আমজাদ শোভন, তপন পাটোয়ারি, মাহবুবে সোবহানি বাপ্পী, মিল্লাত, ওসমান, সিজুল, জিয়া, সাইফুল, রাহুল,স্মরণ প্রমুখ। দ্রোহ নাটকটির আলোক বিন্যাস করেছেন দ্বীন মোহাম্মদ দীনু। সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন নজরুল ইসলাম ও সঙ্গীত সহকারী ছিলেন অভি ঘোষ, সজল সরকার, নিবিড়। ‘দ্রোহ’ নাটকে দেখানো হয়েছে মানবিক জীবনচিত্র। মানুষের অপ্রাপ্তি হতে সৃষ্টি হয় ক্ষোভ, ক্ষোভ হতে দ্রোহ, দ্রোহ হতে বিদ্রোহ, বিদ্রোহ হতে বিপ্লব আর বিপ্লব থেকে সৃষ্টি হয় স্বাধীনতা। বাঙালীর চরিত্রের মাঝে লুকিয়ে রয়েছে লড়াইয়ের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। এ লড়াই কখনও মানুষে-অমানুষে, কখনও প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের আবার কখনও আদর্শিক ন্যায়ের সঙ্গে অনাদর্শিক অন্যায়ের। ‘দ্রোহ’ এমনি একটি বর্ণনাত্মক রীতিতে রচিত বহুমুখী লড়াইযের কাব্যিক পুরাণ। নাটকের কাঠামো রচিত হয়েছে বগুড়া জেলার অদূরে সারিয়াকান্দি অঞ্চলের যমুনার কোল ঘেঁষে দাঁড়ান বা জেগে ওঠা চরের মানুষের নিত্য যাপিত জীবন নিয়ে। এ জীবনে রয়েছে যেমন প্রেমের সিক্ত কোমল সুবাস তেমনি রয়েছে কর্কশ বাস্তবতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সদম্ভ হুঙ্কার। ভৌগোলিক কারণেই নদীপারের মানুষেরা হয় অদম্য সাহসী, ইস্পাত কঠিন মনোবলে অটুট। কেননা তাদের প্রতিনিয়ত লড়তে হয় প্রমত্তা যমুনার সঙ্গে। এ লড়াইয়ে কখনও জয়ী হলেও থেমে থাকে না তাদের সংগ্রামের চিত্র। ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধে উঠতে না পারা সমাজপতিরা হয়ে ওঠে বিষাক্ত কালসাপের মতো ভয়ঙ্কর। তাদের পাতানো জালের বিষে কখনও কখনও নীল হয়ে ওঠে কোমল এ সকল মানুষের অন্তর। হাজার বছরের সম্পৃতির বাতাবরণ হয় বিনষ্ট। ধর্মীয় গোঁড়ামি, অজ্ঞতা ও অশিক্ষার অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে শ্বেত বালুচর লাল রক্তে ভিজে ওঠে। উঠে আসে গল্পের পেছনের অজানা আরও এক গল্পের। যমুনা পাড়ের মানুষের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন গৌরবদীপ্ত লড়াইয়ের কাহিনী নাটকে যেমন রোমাঞ্চকর রং ছড়ায় তেমনি সেই সময়ের বিশ্বাস ঘাতকদের মুখোশ উম্মোচিত হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত তরুণ দ্রোহের নেতৃত্বে। নাটকের শেষে উচ্চারিত হয় বিভেদ ভুলে এক কাতারে আসার আহ্বান। সকল অশুভ অন্ধকারকে সরিয়ে নতুন আলোকের দীপ্তিময় অভার পুণ্য কিরণের ধারায় সিক্ত করার মাঙ্গলিক আকুতি। কেননা আকাশ থেকে যে বৃষ্টির ধারা নামে, সেও দেখে না কোন সীমারেখা, সবার ওপর বর্ষিত হয় সে। যমুনার জল তৃষ্ণা নিবারণ করে আপামর মানুষের। তাহলে মানুষে মানুষে কেন এত বিভাজন, কেন এত রক্তপাত? নাগরিক বিবেকের কাছে এই প্রশ্ন রেখে শেষ হয় নাটক।
×