ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিচার দাবিতে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন;###;প্রতিবাদ বিক্ষোভ উত্তাল সাতক্ষীরা

শিশু নির্যাতন ॥ কেড়ে নেয়া হলো ম্যাজিস্ট্রেটের বিচারিক ক্ষমতা

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ২১ আগস্ট ২০১৫

শিশু নির্যাতন ॥ কেড়ে নেয়া হলো ম্যাজিস্ট্রেটের বিচারিক ক্ষমতা

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা থেকে ॥ সাতক্ষীরার সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মুখে অবশেষে কাজের মেয়ে বীথির ওপর অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠায় সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট নূরুল ইসলামের বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। রাতে আদালত সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। এর আগে গৃহকর্মী বীথির ওপর নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনে সাতক্ষীরার সচেতন নাগরিক সমাজ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে। মুক্তিযোদ্ধা হাসান জাহিদ জজের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রেসক্লাব সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, বারের সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট শাহ আলম, মুক্তিযোদ্ধা হাসানুল ইসলাম, নারীনেত্রী নাসরিন খান লিপি, কল্যাণ ব্যানার্জী, মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জল, মাধব দত্ত, হাফিজুর রহমান মাসুম, শেখ হারুনার রশীদ বক্তব্য রাখেন। কাজের মেয়ে বীথিকে (১০) বুধবার বিকেলে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নূরুল ইসলামের ভাড়া বাড়ি থেকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুপুর একটার দিকে বাড়ির ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে মেয়েটি ‘পানি দাও পানি দাও’ বলে আকুতি জানালে স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটায় সাতক্ষীরার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক লস্কর তাজুল ইসলাম ও ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডাঃ রফিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে নির্যাতনের শিকার বীথি সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের বেডে শুয়ে তার ওপর বর্বর নির্যাতনের লোমহর্ষক কাহিনী বর্ণনা করে। মেয়েটি জানায়, ১ বছর ২ মাস আগে সাতক্ষীরা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট আদালতের পিয়ন, প্রতিবেশী চাচা সাগরের মাধ্যমেই তাকে নিয়ে আসা হয় ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল ইসলামের বাসায়। মেয়েটিকে আনার পর ম্যাজিস্ট্রেট নূরুল ইসলাম ঢাকায় তার শ্বশুর-শাশুড়ির বাসায় পাঠিয়ে দেন। ঢাকার মোহাম্মদপুর হাউজিং সোসাইটির ওই বাড়িতে প্রায় ১১ মাস তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। ম্যাজিস্ট্রেট নূরুল ইসলামের শাশুড়ি বিউটি বেগম প্রায়ই হাত-পা, মুখ বেঁধে নির্যাতন চালাত। তার গায়ে গরম খুন্তি ও রুটি তৈরির গরম তাওয়া দিয়ে ছেঁকা দেয়া হতো। রুটিবেলা বেলুন দিয়ে তার শরীরের অসংখ্য স্থানে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। মুখে খামচে দেয়া হতো। বাথরুমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখ হতো। সকালে ছোট দুটি রুটি এবং রাতে পচা পান্তাভাত খেতে দেয়া হতো। দুপুরে কোন খাবার তাকে দেয়া হতো না। নির্যাতনের সময় যাতে মেয়েটি চিৎকার না করতে পারে সেজন্য তার মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখা হতো। তাকে একটিবারের জন্য পরিবারের সঙ্গে দেখা বা কথা বলতে দেয়া হয়নি। প্রায় আড়াই মাস আগে ঢাকা থেকে ম্যাজিস্ট্রেট নূরুল ইসলাম তার সাতক্ষীরার পলাশপোলের ভাড়া বাড়িতে নিয়ে আসে তাকে। এদিকে বীথির সুচিকিৎসার জন্য গঠিত চার সদস্যের মেডিক্যাল টিম বৃহস্পতিবার তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছে। টিমের সদস্য শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ শামছুর রহমান জানান, মেয়েটির শরীরে একাধিক ক্ষত চিহ্নের মধ্যে বড় ধরনের চারটি ক্ষত রয়েছে। এর মধ্যে পিঠের বাঁ পাশে যে ক্ষতটি রয়েছে সেটি গরম কিছু দিয়ে ছেঁকা দেয়ার কারণেই দগদগে ঘা হয়েছে। ক্ষতটি সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ আগের হতে পারে বলে তিনি মনে করছেন। শিশুটির মানসিক চিকিৎসার প্রয়োজন বলেও তিনি মনে করেন। খুন্তির ছেঁকা ও গরম পানি ঢেলে আরও এক শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতন ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা নোয়াখালী থেকে জানান, বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী পৌর শহরে বিবি আমেনা (১২) নামের এক শিশু গৃহকর্মীর গায়ে গরম খুন্তির ছেঁকা ও গরম পানি ঢেলে নির্যাতন করা হয়েছে। শহরের উত্তর হাজীপুর এলাকার একটি ভাড়া বাসায় দফায় দফায় এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। গৃহকর্তা সাইফুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী নিনুবা বেগম এ নির্যাতন চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে আমেনা। বর্তমানে বেগমগঞ্জ ১০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
×