ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করেছে সৌদিরা, জানত যুক্তরাষ্ট্র;###;সানার এক আশ্রয়কেন্দ্রে বুধবার রুটি হাতে এক ইয়েমেনী বাস্তুচ্যুত শিশু -এএফপি

সংঘাত কবলিত ইয়েমেন দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ২১ আগস্ট ২০১৫

সংঘাত কবলিত ইয়েমেন দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে

জাতিসংঘ বলেছে ইয়েমেন কয়েক মাসের সংঘাতের ফলে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। দেশে ২ কোটি ১০ লাখ মানুষের জন্য সাহায্যের প্রয়োজন। পেন্টাগণের এক কর্মকর্তা বলেছেন, সৌদি সরকার পার্শ্ববর্তী ইয়েমেনে শিয়া মুসলিমদের বিরুদ্ধে ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র তা জানে। খবর বিবিসি ও ইউএস নিউজ অনলাইনের। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর (ডাব্লিউএফপি) প্রধান এরথারিন কুসিন বলেছেন, ইয়েমেনের বাজারে মানুষের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য নেই। তিনি বলেন, অব্যাহত সহিংসতার কারণে ত্রাণ সংস্থাগুলো সংশ্লিষ্ট এলাকায় যেতে পারছে না। সংস্থার হিসেবে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষের জন্য জরুরী সাহায্যের প্রয়োজন। সৌদি সমর্থিত ইয়েমেনী সরকারের প্রতি অনুগত বাহিনী ও সহযোগীরা এবং হুতিবিদ্রোহী যোদ্ধারা লড়াইয়ে লিপ্ত রয়েছে ইয়েমেনের অনেক স্থানে। মিসেস কুসিন তিন দিনের ইয়েমেন সফরের পর কায়রোতে বক্তব্য রাখছিলেন। তিনি বলেন, প্রধান বন্দরগুলোর আশপাশে লড়াইয়ের কারণে ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, যাদের ত্রাণ সাহায্যের প্রয়োজন খুব বেশি তাদের কাছে পৌঁছা যাচ্ছে না এবং ত্রাণদল দাতাদের কাছ থেকে তেমন আর্থিক সহযোগিতা পাচ্ছে না। ইয়েমেন তাই সত্যিকার বিপর্যয়ের সম্মুখীন। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান স্টিফেন ও ব্রায়েন ইয়েমেন থেকে ফিরে ইতোমধ্যে বুধবার নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন যে, ইয়েমেনে মানুষের দুর্ভোগ-পরিস্থিতি ধারণার বাইরে। তিনি হোদেইদা বন্দরে সৌদি জোটের বোমা হামলার তীব্র সমালোচনা করে বলেন, এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন। সৌদি আরবে নির্বাসিত থাকা ইয়েমেনী সরকারকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য উপসাগরীয় দেশগুলো হস্তক্ষেপ চালাচ্ছে ইয়েমেনে। ইয়েমেন চরম পর্যায়ে মানবাধিকার সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছে বলে জাতিসংঘ মন্তব্য করেছে। সংস্থাটি এ সঙ্কটকে দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া ও ইরাকে সঙ্কটের সমপর্যায়ের বলে উল্লেখ করেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পেন্টাগণের কর্মকর্তা বলেছেন, সৌদি সরকার ইয়েমেনে ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র এ ঘটনা জানে; কিন্তু এ মরণঘাতী অস্ত্রের নির্বিচার ব্যবহার বন্ধ করার কোন উপায় থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছে খুব কম। এ অস্ত্রের ব্যবহারে আরব বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর অন্যতম ইয়েমেনে মানবাধিকার পরিস্থিতিতে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বিশ্ব সংস্থাগুলো ইয়েমেনে এ হামলাকে যুদ্ধাপরাধ এবং বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য হামলা বলে সতর্কবাৃণী উচ্চারণ করলেও পেন্টাগণ ক্লাস্টার বোমা সম্পর্কে সৌদি আরবের সঙ্গে আলোচনা করেছে কিনা, বা বোমা ব্যবহার থেকে নিবৃত্ত রাখার জন্য সৌদি সামরিক বাহিনীকে চাপ দিয়েছিল কিনাÑ সে ব্যাপারে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে পেন্টাগণ। কিন্তু এক কর্মকর্তা ইউএস নিউজকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র অবগত রয়েছে যে, সৌদি আরব ইয়েমেনে ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করেছে। ইয়েমেনে ইউনিসেফের প্রতিনিধি জুলিয়ান হার্নিস বলেছেন, এ সংঘাত ইয়েমেনী শিশুদের জন্য বিশেষভাবে বিপর্যয় ডেকে এনেছে। শিশুরা সেখানে বোমা ও গুলিতে নিহত হচ্ছে এবং যারা বেঁচে থাকছে তারা অব্যাহত হুমকি, রোগ ও অপুষ্টির শিকার হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৪শ’ শিশু নিহত হয়েছে। অন্যদিকে, সশস্ত্র গ্রুপগুলো লড়াইয়ের জন্য ৩শ’ ৭৭ শিশুকে সৈনিক হিসেবে রিক্রুট করেছে। এ সংঘাতে মার্চ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ২ হাজার বেসামরিক নাগরিক। এ ছাড়া আহত হয়েছে ১৯ হাজার মানুষ এবং ৫ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
×