ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

এগারো বছরেও গ্রেনেড হামলার বিচার হলো না

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২২ আগস্ট ২০১৫

এগারো বছরেও গ্রেনেড হামলার বিচার হলো না

অবসর সময় ভারতীয় হিন্দী ফিল্ম দেখতে ভাল লাগে। মুম্বাই মাদ্রাজের হাল আমলের মারদাঙ্গা ফিল্ম। সালমান খান, আমির খান, শাহরুখ খান যেসব ছবিতে হিরোর রোল করে। এই তিন খানের পাশাপাশি রয়েছে আরেক খান নবাব সাইফ আলী খান এবং অক্ষয় কুমার, অজয় দেবগন বা নাগ অর্জুন। নিজ পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মস্তান কিংবা ধর্মের নামে অধর্ম ব্যবসায়ীদের এই নায়করা যখন পিটিয়ে ভর্তা বানায় তখন বেশ মজা পাই। কখনও প্রতিবাদী যুবকের বেশে, কখনও মেধাবী ছাত্র হিসেবে কিংবা কখনও পুলিশের ইন্সপেক্টর-এসপি’র পোশাকে। ওদের ভূমিকায় নিজেকে ভাবতে ভাল লাগে। মনে হয় আমি নিজেই শয়তানদের শায়েস্তা করছি। বিশেষ করে নারী ইন্সপেক্টর-এসপিরা যখন পুলিশের স্মার্ট পোশাক পরে একাই সন্ত্রাসীদের আস্তানা ধ্বংস করে দেয় কিংবা ধর্মযাজকের পোশাকে অস্ত্র-মাদক ব্যবসায়ীদের মুখোশ উন্মোচন করে এবং ভ্রষ্ট জনপ্রতিনিধি নামের মাফিয়াডনদের হাতকড়া পরিয়ে প্রকাশ্যে রাজপথ দিয়ে টানতে টানতে আইনের কাঠগড়ায় নিয়ে দাঁড় করায়, তখন খুব আনন্দ পাই। মনে মনে ভাবি আমাদের দেশেও যদি তাদের মতো নারী ইন্সপেক্টর-এসপি থাকত? আমার ছবি দেখা নিয়ে কেউ কেউ ঠাট্টা-মশকরা করেন। আমি হাসি। বলি এ হচ্ছে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো। দর্শনটা হলো অবচেতন মনে নিজেই যেন মুম্বাইর নায়কদের মতো সমাজের অনাচারের বিরুদ্ধে লড়তে চাই; কিন্তু পারি না, চিত্তের দুর্বলতা বা ভয়ের কালচারের কারণে। তাই নায়করা যখন পারে তখন তা দেখে অন্তত চোখের সুখটা পাই। কখনও কখনও নিজেই সালমান খান বনে যাই (অবশ্য মনে মনে)। কারণ আমাদের ভরসার জায়গাটা খুব সীমিত, সঙ্কুচিত। তবে হ্যাঁ, ভরসার একটি জায়গা এখনও আছে বলেই ঘর-বাহির-সমাজ-রাষ্ট্র এবং সর্বোপরি স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বেঁচে আছে, বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। সে জায়গাটি জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা। জননেত্রী। দেশরতœ। পিতার আদর্শের ঝাণ্ডা বহন করে চলেছেন। তাঁর কাছেই আমাদের আকুল আবেদন- ‘আমাদের সন্তানদের বাঁচান। চারদিকে দাঁতাল শুয়োরের দল। হিংস্র বর্বর এবং শিশু ও নারীর প্রতি বড়ই নির্দয় লোলুপ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ওই হায়েনারা বাংলাদেশের মৌল আদর্শ এবং ভিত নড়বড়ে করে দিতে চাইছে। চক্রান্তের জাল চারদিকে, পেছনে রয়েছে পরাজিত পাকিস্তানের স্বার্থরক্ষাকারী মিলিটারি জায়া। এখন রক্তঝরা আগস্ট। বাঙালী জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বেদনাদায়ক, সবচে’ কলঙ্কজনক মাস। এই মাসেই আপনি আপনার মা-বাবা, ভাই, ভ্রাতৃবধূ ও অন্যান্য আপনজনকে হারিয়েছেন। হায়েনার দল তাদের নিয়ে গেছে। এখনও বৃষ্টিঝরা রাতে কানে বাজে ‘আমাকে মার কাছে যেতে দাও, আমাকে মেরো না, আমি হাসু আপার কাছে চলে যাব’Ñ ঘাতকরা এই ছোট্ট শিশু রাসেলের বুকটিও বুলেটে বুলেটে ঝাঁজরা করে দিয়েছিল। বাঙালী জাতি সেই মুহূর্তে হারাল তার স্বপ্ন তথা উন্নত জীবন আর মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার। আজ যখন এ লেখা লিখছি তখন ২১ আগস্ট। ২০০৪ সালের এই দিনে ঘাতকের দল আপনারও প্রাণনাশের চক্রান্ত করেছিল। বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে সিরিজ গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল। আপনারই সহযোদ্ধা মিসেস আইভি রহমানসহ ২৪ জন প্রাণ হারালেন। আল্লাহ পাক আপনার জীবন রক্ষা করলেও দলের চার শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। অনেকে আজও গ্রেনেডের স্পিøন্টার বইতে বইতে যন্ত্রণাকাতর। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমি সে ঘটনারও একজন সাক্ষী। তাজা রক্তের প্লাবনে কাতর মানুষগুলোর চেহারা আজও আমার চোখের সামনে ভেসে বেড়ায়। এত বড় একটি ঘটনা, ১১ বছর পার হয়ে গেল, খুনীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো গেল না, এ প্রশ্ন কার কাছে রাখব? এ বিচার কার কাছে চাইব? বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। এক্ষেত্রেও চক্রান্তের শেষ নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বঙ্গবন্ধুর এক খুনীকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে। কানাডায় পলাতক ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত খুনীকেও কানাডা ফেরত দেবে না বলেছে। কারণ কানাডা মৃত্যুদণ্ডে বিশ্বাস করে না। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল বিশাল নেতার মুখ থেকে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসনের সবক নিতে হয় আমাদের। প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে, তবে কি মার্কিনীদের কাছে খুনী-সন্ত্রাসীদেরই মানবাধিকার রয়েছে? যারা ওই সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হয়েছে, এখনও হচ্ছে তাদের কি মানবাধিকার নেই? তারা স্ট্যাচু অব লিবার্টি স্থাপন করেছে, আমরা তাবত বিশ্ব থেকে তা দেখতে যাই। আমার মনে হয় আজ সময় হয়েছে বলার, বন্ধুরা আপনাদের দেশে ওই স্ট্যাচু অব লিবার্টি মানায় না, বরং ওর অপমান হয়। কানাডাকে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে- আপনারা মৃত্যুদণ্ডে বিশ্বাস করেন না বলে কি বিশ্বের তাবত ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত মানবতাবিরোধী অপরাধীদের আশ্রয় দেবেন? তাহলে তো কানাডা হবে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য? এরা সভ্য জাতি বলে দাবি করতে পারে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও না। অবশ্য আমেরিকা-কানাডার এই ভূমিকা আমাদের একটি মেসেজ দিচ্ছে যে, তারা আমাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তার বদলে আমাদের হত্যার জন্য হানাদার পাকিস্তানী মিলিটারি জান্তাকে সমরাস্ত্র থেকে শুরু করে সকল প্রকার সামরিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতা দিয়েছে। পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। এমনকি পাকিস্তানের পক্ষে সপ্তম নৌবহর বঙ্গোপসাগরের পথে পাঠিয়েছিল। সেদিন ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে ভারত এবং সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিশ্বের তাবত মুক্তিকামী মানুষের প্রতিবাদের মুখে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে। আমেরিকার সপ্তম নৌবহর প্রতিরোধে সোভিয়েত ইউনিয়নকেও রেড ফ্লিট পাঠাতে হয়েছিল। আজ তাদের প্রতি নতুন করে কৃতজ্ঞতা। ধন্যবাদ। আমেরিকা যে বার্তাটি দিয়েছে তা গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। এই সেদিনে পদ্মা সেতু নিয়ে কি চক্রান্তটাই না করল! বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণের অর্থ ছাড়ই দিল না। অথচ বলল দুর্নীতি হয়েছে। তদন্তে না পেয়ে বলল, দুর্নীতির ‘পরিকল্পনা’ হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি তার যথোপযুক্ত জবাব দিয়েছেন আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করে। ৪১ বছর পর সীমান্ত নির্ধারণ মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি বাস্তবায়ন করলেন। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করলেন। এ সব মনে হয় মার্কিন মুল্লুকের ভাল লাগে না। ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে আপনি দেশের স্বার্থবিরোধী গ্যাস রফতানিতে রাজি হলেন না, রাষ্ট্র ক্ষমতার লোভও আপনি সংবরণ করলেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনকে পাশে দাঁড় করিয়ে বললেন, “জনাব, আপনার দেশে এক শ’ বছরের তেল-গ্যাস মজুদ রেখে কথা বলছেন। আমরা তো এখনও আবিষ্কারই করতে পারিনি আমাদের কত গ্যাস আছে। আগে জেনে নেই, তারপর অন্তত ৫০ বছরের মজুদ রেখে, তারপর দেখব বাড়তি গ্যাস কি করব না করব।’ আমাদের পরিকল্পনা হলো গ্যাসভিত্তিক ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলা। এতে আমাদের দেশে ইন্ডাস্ট্রি হবে। তরুণরা কাজ পাবে। ক্লিনটনের মতো প্রেসিডেন্টকে পাশে দাঁড় করিয়ে এমন কথা বলার সৎ সাহস কেবল আপনারই রয়েছে। যে কিসিঞ্জার বলেছিল ‘বাংলাদেশ এক তলাবিহীন ঝুঁড়ি।’ সেই কিসিঞ্জারকেই আপনি সবক দিয়েছিলেন দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করায় আন্তর্জাতিক সেরেস পুরস্কারটি তার হাত থেকে নিয়ে। আজ বাংলাদেশ নিম্নমধ্য আয়ের দেশ। উন্নত দেশের দিকে এগিয়ে চলছে। এখনও ওদের চক্রান্ত বিভিন্নমুখী। দেশাভ্যন্তরে কিছুকাল ধরে অস্থিরতা সৃষ্টির চক্রান্ত চলছে। সিলেটের রাজন হত্যার পর খুলনার রাকিব হত্যা, রাজনের বয়সেরই। কী বীভৎস সেই সব দৃশ্য! সেই সব মৃত্যু! অভাবের তাড়নায় স্কুল ছেড়ে এক মোটরসাইকেল গ্যারেজে কাজ নেয় রাকিব, দৈনিক ৫০ টাকা বেতন। পান থেকে চুন খসলে অকথ্য ভাষায় গালাগালি, মারধর। অভাবের তাড়নায় স্কুল ছেড়ে শাকসবজির ব্যবসায় নামে রাজন। তাকে বানানো হলো চোর। নির্মমভাবে মেরে ফেলা হলো তাদের। রাজন কিংবা রাকিব কিংবা রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে গণধর্ষণের শিকার কলেজছাত্রী (ডেইলি স্টার, ৫ আগস্ট, ২০১৫) এরাও তো আমার-আপনার সন্তান হতে পারত, এমনটি ভাবতে পারলে সম্ভবত কিছুটা হলেও স্বস্তি পেতাম। কিন্তু ওরা তো আমাদের মতো লোকের সন্তান নয়। আমরা সিভিল সোসাইটির সদস্য আর ওরা কেউ শাকসবজির ব্যাপারী, কেউ গ্যারেজের কর্মচারী, কেউ গৃহপরিচারিকা, কেউ গার্মেন্টস কর্মী, পেটের দায়ে স্কুল ছেড়ে কাজে লেগেছিল। সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে নিয়ে ক’দিন বেশ তোলপাড় হলো। এক পা হারানো এই পঙ্গু লোকটাকে পুলিশ গ্রেফতার করে হাতকড়া পরিয়ে টেনে-হিঁচড়ে নেয়ার দৃশ্য মানুষ দেখেছে। এটা কেউ সহজভাবে গ্রহণ করেনি। তারপরও বলব, শেখ হাসিনা আছেন বলেই সর্বোচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে সে মুক্তি পেয়েছে। একটি টকশোতে দেখলাম সিপিবির এক নেতা বলছেন, সাংবাদিকদের একটি গ্রুপ প্রবীরের ব্যাপারে নীরব রয়েছে। সিপিবি তো তাই। তার জানা দরকার যাদের নীরব থাকার কথা বললেন তারাই সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দেখা করে তার জামিন করিয়েছেন। নইলে রিমান্ড বাতিল করে জামিন করানো সহজ ছিল না। তবু সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ তা করেছেন। অবশ্য প্রবীর যে স্ট্যাটাস দিয়েছে তাতে তার পক্ষে দাঁড়ানোটাই বরং অন্যায় আবদারের শামিল। প্রবীর থানায় গেছে একটি জিডি করতে যে, ‘প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তাকে হত্যা’ করতে চাইছে। থানা না কি এ জিডি নেয়নি। তারপর সে স্ট্যাটাস দিয়েছে ‘তার মৃত্যু হলে ওই প্রভাবশালীরা দায়ী থাকবেন (?)’ তাহলে তো সব মানুষই তার প্রতিপক্ষের নামে এমন জিডি করে রাখবে। এটা কি কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ সমর্থন দিতে পারে? আমি সমর্থন করি না। তবে হ্যাঁ, একটা পঙ্গু মানুষকে হাতকড়া পরানো কেবল বাড়াবাড়িই নয়, এতে প্রমাণ হয় কারো প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে তাকে গ্রেফতার ও হাতকড়া পরানো বা রিমান্ড দেয়া হয়েছিল। সিপিবির চুলপাকা নেতার টকশো তাই গুরুত্বহীন। এই পুলিশ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম, নিজামী-মুজাহিদ, সাকা-সাঈদী কারো হাতে কড়া পরায়নি। মানুষ নদীতে পড়লে খড়কুটো ধরে বাঁচতে চায়। সিপিবির একই অবস্থা। তাদের বক্তব্য যতটা না প্রবীর সিকদারের জন্য তারচেয়ে বেশি বর্তমান শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী জোট রাষ্ট্র ক্ষমতায় আছে বলেই। তাই তাদের অনেক বক্তব্যে জামায়াতপন্থী বিএনপির গন্ধ ছড়ায়। তারচেয়ে বড় যে প্রশ্নটি সামনে এসে দাঁড়ায়Ñ একটি ইস্যুতে একেক মন্ত্রীর একেক বক্তব্য। এতে ক্ষমতা কেন্দ্রে অসামঞ্জস্য প্রকাশ পায়। আরেকটি প্রশ্ন হলো গ্রামে-গঞ্জে দেখা যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের কিছু লোক আওয়ামী লীগে জামায়াতীকরণ চালু করেছে। চাকরিগুলোও জামায়াতীরা অনায়াসে দখল করে নিচ্ছে। এই ক্ষমতাসীনরা ভুলে যায়, বিএনপিও একই ভুল করে আজ নিঃশেষ প্রায়। অর্থাৎ জামায়াতে বিলীন। কখনও-সখনও শুনি মানুষ নাকি হঠাৎ করে নিষ্ঠুর-নৃশংস হয়ে উঠেছে। আমি বলি হঠাৎ করে নয়। অনেক দিন আগে থেকেই যেদিন জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছিল। দীর্ঘদিনের মিলিটারি শাসন, জঙ্গীবাদ লালন, গণপরিবহনে পেট্রোলবোমা মেরে যাত্রীসাধারণ হত্যা, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অনৈতিক ব্যবহার, জঙ্গীবাদ লালন, সিভিল সোসাইটি বা ওপরের সমাজে ব্যভিচার এবং অর্থ সম্পদ গড়ার লোভে সর্বনাশা ড্রাগ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়া, ঘুষ-দুর্নীতি তো আছেই, রক্ষক ভক্ষক হয়ে যাওয়া, দেশপ্রেমবিহীন পুলিশের অপকর্ম-অবহেলা, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা এবং ক্ষেত্র বিশেষে বিচারহীনতার কালচার, চুরি-চামারি, ঘুষ-দুর্নীতি, লুটপাটের টাকায় স্ত্রী-সন্তানের সন্তুষ্টি ও আয়েশী জীবনযাপন দেয়া এবং প্রশ্ন না করার কালচার, বরং এনজয় করার কালচার, এসব কারণেই তরুণ সমাজের একটি বড় অংশকে বিপথগামী করছে। শিক্ষক-সাংবাদিক-আইনজীবী-বুদ্ধিজীবীদের রাতারাতি গাড়ি-বাড়ির মালিক হবার লোভ, এমনকি চরম অপরাধী বা একাত্তরের নৃশংস যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষেও রাজনৈতিক নেতৃত্বের হরিহর আত্মা, আইনজীবী তথা সংশ্লিষ্টদের অবস্থান, এসব অপকর্মই সমাজকে অসুস্থ করে তুলেছে। আমি বলছি না ভাল রাজনীতিক নেই, ভাল সাংবাদিক-আইনজীবী-পেশাজীবী নেই, আমি বলছি না ভাল জনপ্রতিনিধি নেই। সবই আছে, তবে তাদের সংখ্যা একেবারেই সীমিত এবং সে কারণেই আমরা ফিরে ফিরে বঙ্গবন্ধুর দ্বারস্থ হই, শেখ হাসিনার কাছে যাই, তার কাছেই আমাদের চাওয়া-পাওয়া। সবচেয়ে অবাক হই যখন দেখি একটা চোর-দুর্নীতিবাজ এবং নৈতিকতাবিবর্জিত ব্যক্তিও বড় দলের হয়ে পবিত্র পার্লামেন্টে বসে কিংবা যখন দেখি চরম অসৎ চরিত্রহীনও ধর্মের কথা বলে, মসজিদ-মাদ্রাসা বানায়, মন্দিরে-মঠে অনুদান দেয় এবং সংশ্লিষ্টরা তা বিনা বাক্যে গ্রহণ করে এবং ঐ শয়তানের জন্য আল্লাহর দরবারে লম্বা মোনাজাত করে, শয়তানদের দীর্ঘায়ু এবং আরও ধন-সম্পদের মালিক বানানোর জন্য দোয়া করে। এই সমাজে বাস করে আমি, আপনি বা আমাদের সন্তানরা বিশেষ করে গরিবের সন্তানরা ক্ষেতের আল দিয়ে হাঁটবে কি করে? এ লেখার শিরোনাম ‘এগারো বছরেও গ্রেনেড হামলার বিচার হলো না?’ কেন হলো না সে প্রশ্ন নাগরিক হিসেবে আমরা রাখতেই পারি। এবং অবশ্যই দাবি হিসেবে। ঢাকা ॥ ২১ আগস্ট ২০১৫ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব
×