ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ক্ষমতায় থাকতে জজ মিয়া নাটক, এখন দাবি ন্যায় বিচারের

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২২ আগস্ট ২০১৫

ক্ষমতায় থাকতে জজ মিয়া নাটক, এখন দাবি ন্যায় বিচারের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ক্ষমতায় থাকতে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় বিচারের নামে জজ মিয়া নাটক সাজালেও এখন এ ঘটনার সঠিক তদন্ত ও ন্যায়বিচার দাবি করছে বিএনপি। জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই বিএনপি এ কৌশল নিয়েছে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছে। শুক্রবার সকালে কারামুক্ত বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদুকে নিয়ে শেরেবাংলা নগরে জিয়ার মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় সঠিক তদন্ত ও ন্যায়বিচার দাবি করেন। তিনি অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক কারণে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার দায় বিএনপির ওপর চাপানোর চেষ্টা হচ্ছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পেছনে বিএনপির কোন হাত ছিল না। এ হামলার সঙ্গে বিএনপি কোনভাবেই জড়িত নয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক কারণে তাদের এ ঘটনায় জড়াতে চায়। তিনি বলেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা একটি জঘন্য ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাইÑ এটা যেই করে থাকুক না কেন সঠিক তদন্ত করে যারা সত্যিকারভাবে দায়ী তাদের বিচার করা হোক। কাউকে রাজনৈতিকভাবে বিপদাপন্ন না করে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। অপর এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক কারণে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার জন্য বিএনপিকে দায়ী করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই বিএনপি গণতান্ত্রিকভাবে জাতীয়তাবাদী রাজনীতি করে। এই রাজনীতিতে সন্ত্রাসের কোন স্থান নাই। অতএব আমরা কোন হত্যার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নই। তবে আওয়ামী লীগ কী বলল তাতে কিছু আসে যায় না। আর আওয়ামী লীগ অভিযোগ করলেই এটা জনগণ বিশ্বাস করে না। নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘যিনি মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন, যার কণ্ঠ আমরা শুনেছি, সেই জিয়াউর রহমানকে আওয়ামী লীগ বলে পাকিস্তানের এজেন্ট।’ আওয়ামী লীগ কাদের সিদ্দিকীকেও বলে রাজাকার। তাদের পক্ষে বললে মুক্তিযোদ্ধা, তাদের বিপক্ষে বললে রাজাকারÑ এই হচ্ছে আওয়ামী লীগের নীতি। জঙ্গী অর্থায়নের অভিযোগে বিএনপিপন্থী তিন আইনজীবী গ্রেফতারের বিষয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমি এ বিষয়ে জানি না। তবে সরকার দেখানোর চেষ্টা করছে বিএনপি সন্ত্রাসকে মদদ দেয় ও বিএনপি সন্ত্রাসী দল। সরকার নানাভাবে বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে পরিচিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। সেজন্যই বিএনপির বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। কিন্তু দেশের জনগণ জানে এ কথা সত্য নয়। তিনি বলেন, বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সরকার অদ্ভুত সব মামলায় মাসের পর মাস আটকে রেখেছে। এ পরিস্থিতির পরিবর্তন প্রয়োজন। এর জন্য দেশে জনগণের সরকার প্রয়োজন, কোন দলবাজির সরকার নয়। এরকম একটি সরকারকে ক্ষমতায় আনতেই খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি আন্দোলন করছে। নজরুল ইসলাম বলেন, আমরাই সর্বপ্রথম ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার বিচারের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তাই আমরা এ ঘটনার বিচার চাই। আর বিএনপির সঙ্গে কখনও কোন জঙ্গী কানেকশন ছিল না, ভবিষ্যতেও থাকবে না। আমরাই প্রথম জঙ্গীদের ধরে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাই। বর্তমান সরকারকে জনসমর্থনহীন আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে দ্রুত সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন দিতে হবে। জামিন বাতিল করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ারকে কারাগারে প্রেরণ এবং চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শওকত মাহমুদকে গ্রেফতারের পর রিমান্ড দেয়ার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তাদের মুক্তি দাবি করেন নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনরা আদালত অবমাননাকর কথাবার্তা বললেও তাদের গ্রেফতার করা হয় না। অথচ ঠুনকো অপরাধে বিএনপির লোকজনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় নজরুল ইসলাম খান ও শামসুজ্জামান দুদুর সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেনÑ বিএনপির সহ-তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব ও সহদফতর সম্পাদক শামিমুর রহমান শামীম প্রমুখ। উল্লেখ্য, ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধ চলাকালে ১২ জানুয়ারি নাশকতার মামলায় গ্রেফতার হন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু। ৭ আগস্ট উচ্চ আদালতের আদেশে জামিনে মুক্তি পান শামসুজ্জামান দুদু। প্রসঙ্গত, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলার ঘটনায় আইভি রহমানসহ নিহত হন ২৪ জন। আহত হন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ আরও অনেকে। এ ঘটনার পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বিএনপির মদদেই গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। আর বিএনপি-জামায়াতের পক্ষ থেকে এ ঘটনার দায় আওয়ামী লীগের ওপরই চাপানোর চেষ্টা করা হয়। এ ঘটনার পর বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় ও বিচারের দাবি জোরালো হলে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বিচারের নামে জজ মিয়া নাটক সাজায়। তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর সিআইডি ২০১১ সালে যে সম্পূরক অভিযোগপত্র দিয়েছে, তাতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানকেও আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা।
×