মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ র্যাবের অভিযানে শহীদ হামজা ব্রিগেড জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত তিন আইনজীবীর ব্যাংক ব্যালেন্সের উৎস কোথায় এ নিয়ে ক্লু উদঘাটনে নেমেছে র্যাব। অর্থের যোগানদাতা হিসেবে গ্রেফতার হওয়া সুপ্রীমকোর্টের এই তিন আইনজীবীকে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। বিশেষ করে ব্যাংক হিসাব বিবরণীর তথ্যের ভিত্তিতে শুধু গ্রেফতার হওয়া তিন আইনজীবীই নয়, তাদের সঙ্গে ব্যাংক লেনদেন করেছেন এমন সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের এ্যাকাউন্টের খোঁজখবর নিচ্ছে র্যাব। ব্যাংক এ্যাকাউন্টের সূত্র ধরেই অর্থের অন্য যোগানদাতাদের খুঁজে বের করা যতটা সহজ অন্য কোন মাধ্যমে তা সম্ভব নয়। এমনকি এসব আইনজীবীর সঙ্গে অতিরিক্ত যোগাযোগ রক্ষা করা ব্যক্তিদেরও তালিকা করা হয়েছে। সে তালিকা অনুযায়ী র্যাব সেভেনের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট তথ্য সংগ্রহে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী, ৫ লাখ টাকার উপর লেনদেন করলেই সেক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে ওই গ্রাহকের হিসাব বিবরণী ও হিসাব খোলার বিভিন্ন তথ্য নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে যাচাই বাছাই করা হয়। আকস্মিকভাবে বা হঠাৎ করে কোন সেভিংস এ্যাকাউন্টে অর্থের তহবিল বেড়ে গেলে কৈফিয়ত দিতে হয় সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে। এ ক্ষেত্রে সুপ্রীমকোর্টের ব্যারিস্টার ও অপর দুই আইনজীবী সেভিংস এ্যাকাউন্ট থেকে কিভাবে এত বিপুল অঙ্কের অর্থ লেনদেন করেছেন তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। এছাড়াও শুধু নগদ লেনদেনই নয়, মানি ট্রান্সফারের বিষয়টিও প্রেরক ও প্রাপকের মধ্যে অর্থ স্থানান্তরের সময় সম্প্রতি অর্থের উৎস, লেনদেনকারী ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক এমনকি মোবাইল নাম্বারও সংরক্ষণ করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। একইভাবে অর্থ উত্তোলনেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সামগ্রিক তথ্য কালেকশনের মধ্য দিয়ে চেক বাহকের পরিচয় সংরক্ষণ করে।
অপরদিকে, অন লাইন ব্যাংকিংয়ে অর্থ জমা এবং উত্তোলন উভয় ক্ষেত্রে লেনদেনকারীর সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি মোবাইল নাম্বারসহ পরিচয় সংরক্ষণ করা হয়। প্রশ্ন উঠেছে, এত নজরদারির পরও কিভাবে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা তার এ্যাকাউন্ট থেকে দু’দফায় মোট ৫২ লাখ টাকা লেনদেন করেছেন। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কেনই বা যোগাযোগ করেনি নাকি ওই ব্যাংকেই শহীদ হামজা ব্রিগেডের লোকবল রয়েছে কিনা তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় ও আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী র্যাব সেভেনের সদস্যরা গ্রেফতারকৃতদের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট পর্যালোচনা করেছে। ওই পর্যালোচনা অনুযায়ী গ্রেফতারকৃত তিন আইনজীবীর ব্যাংক হিসাব বিবরণীতে মোটা অঙ্কের অর্থের অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে। এর সূত্র ধরেই লেনদেনের সঙ্গে জড়িতদেরও হিসাব বিবরণী পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে। শহীদ হামজা ব্রিগেড নামক জঙ্গী সংগঠনের কালেকশনে থাকা ১ কোটি ৩৮ লাখ ৭০ হাজার টাকার যোগানদাতার পেছনে কারা রয়েছে তাও অনেকটা স্পষ্ট। অপরদিকে, গ্রেফতারকৃত তিন আইনজীবীর ব্যাংক এ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেন হওয়া ১ কোটি ৮ লাখ টাকা এই হিসাবের মধ্যে থাকলেও অর্থ জমাদানের উৎস এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে গ্রেফতারকৃদের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি, সুপ্রীমকোর্টে মামলা পরিচালিনা করে যেসব অর্থ আয় করেছে সেব অর্থই ব্যাংকে লেনদেন হয়েছে।
শুক্রবার রিমান্ডের দ্বিতীয় দিনে গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন বলে র্যাবের একটি সূত্রে জানা গেছে। এই তিন আইনজীবীকে কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন মামলার আইওসহ র্যাবের কয়েক উর্ধতন কর্মকর্তা। তবে র্যাব সেভেন সূত্র জানায়, তদন্তের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তবে মনিরুজ্জামান ডনের ১৬৪ ধারায় রেকর্ডকৃত জবানবন্দী অনুযায়ী ও হাটহাজারী, লটমনি পাহাড় ও নগরীর হালিশহর বসুন্ধরা এলাকা থেকে গ্রেফতার হওয়াদের তথ্যের উপর ভিত্তি করে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে।
গত ১৮ আগস্ট রাতে ধানম-ির ২৬ নম্বর রোড হতে গ্রেফতার হওয়া সুপ্রীমকোর্টের দুই জনসহ তিন আইনজীবীর রিমান্ড চলছে র্যাব সেভেন কার্যালয়ে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিশেষ করে ব্যাংক বিবরণীর উপর নির্ভর করে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছেন। কারণ, এ ব্যাংক বিবরণীতেই রয়েছে হামজা ব্রিগেডকে অর্থায়নে মোটা অঙ্কের লেনদেন। ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানার দুই সহকারী এ্যাডভোকেট হাসানুজ্জামান লিটন ও এ্যাডভোকেট মাহফুজ চৌধুরী বাপনও কিভাবে এবং কিসের ভিত্তিতে অর্থের যোগান দিয়েছেন তা নিয়ে চলছে নানা প্রশ্ন। তবে আইনজীবীদের এ স্বল্প সময়ের পেশায় বিপুল অর্থের উৎস নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। আয়কর বিভাগ এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশনও এর আগে এ ধরনের ব্যাংক বিবরণীর উপর কোন ধরনের অভিযোগের সম্মুখীন করেছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিন আইনজীবীর কাছ থেকে রিমান্ডে তথ্য আদায়ের বিষয়ে র্যাব সেভেনের সিও লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তা অধিকতর তদন্তের স্বার্থে প্রকাশ করা যাচ্ছে না। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।