ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অভিজিত হত্যায় ৭ জন শনাক্ত- একজনের বিস্তারিত তথ্য মিলেছে

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২২ আগস্ট ২০১৫

অভিজিত হত্যায় ৭ জন শনাক্ত- একজনের বিস্তারিত তথ্য মিলেছে

গাফফার খান চৌধুরী ॥ লেখক অভিজিত রায় হত্যায় জড়িতদের মধ্যে একজন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। নামসহ পুরো পরিবারের তথ্য, স্থায়ী, অস্থায়ী আবাসস্থলসহ যাবতীয় তথ্য মিলেছে। শুধু গ্রেফতারের অপেক্ষা। গ্রেফতারের পরেই অভিজিত হত্যার অনেক অজানা রহস্য উদ্ঘাটিত হবে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত ৭ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। ব্যবহৃত সাতটি মোবাইল ফোনের মধ্যে একটি উদ্ধার করেছে ডিবি পুলিশ। সার্বিক বিষয়াদি পর্যালোচনা করে জড়িতদের আনুমানিক ছবি আঁকাও সম্পন্ন হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের বিশেষজ্ঞরা ছবি এঁকে দিয়েছেন। ছবি থেকে ধারণা নিয়ে খুনীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। অভিজিত রায় ও অনন্ত বিজয় দাশ হত্যায় ৭ দিনের রিমান্ডে তিন জনের কাছ থেকেও অনেক তথ্য বেরিয়ে আসছে বলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে রাত ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা লেখক প্রকৌশলী ড. অভিজিত রায়কে (৪২) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। বাধা দিতে গিয়ে তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যার (৪০) বাঁ হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল হত্যাকারীদের চাপাতির আঘাতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। স্বামী-স্ত্রী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ায় সে দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের একটি দল বাংলাদেশে আসে। তারা তদন্তে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে সহায়তা করছে। ঘটনার পর কয়েক দফায় স্ত্রী বন্যার জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়। বন্যা জানান, দুই যুবক চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে তার স্বামীকে হত্যা করে। হত্যার পর তারা ভিড়ের মধ্যে মিশে পালিয়ে যায়। বন্যা হত্যাকারীদের চেহারার বর্ণনাও দেন। তিনি বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত আলামতের মধ্যে এফবিআই ১৩/১৪টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে দেয়। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত আলামত পরীক্ষার প্রতিবেদন ডিবির হাতে পৌঁছেনি। এদিকে গত ১৭ আগস্ট র‌্যাব সাদেক আলী মিঠুৃ (২৮), তৌহিদুর রহমান (৫৮) ও মোঃ আমিনুল মল্লিক (৩৫) নামে তিনজনকে গ্রেফতার করে। র‌্যাব সংবাদ সম্মেলনে জানায়, গ্রেফতারকৃতরা নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। এর মধ্যে সাদেক আলী মিঠু অভিজিত হত্যায় সরাসরি জড়িত। আর বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের নাগরিক তৌহিদুর রহমান জঙ্গী সংগঠনটির অর্থায়নকারী ও ব্লগার হত্যার পরিকল্পনাকারী। তাদের পরিকল্পনা আর অর্থায়নে অভিজিত রায় ও সিলেটে অনন্ত বিজয় দাশ হত্যার ঘটনা ঘটে। মূল পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নের নির্দেশ আসে কারাবন্দী আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের আধ্যাত্মিক নেতা মুফতি জসীমুদ্দিন রাহমানীর কাছ থেকে। তাদের ৭ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করছে অভিজিত রায় হত্যা মামলার তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অভিজিত হত্যার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী তার স্ত্রী। স্ত্রীর জবানবন্দী অনুযায়ী প্রথমে দুই হত্যাকারীর ছবি আঁকানো হয়। বাংলাদেশের আঁকিয়েদের দিয়ে চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বন্যার বর্ণনা মোতাবেক হুবহু ছবি আঁকতে পারেননি কেউ। এরপর এ ব্যাপারে সহায়তা চাওয়া হয় এফবিআইয়ের কাছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের বিশেষজ্ঞ ছবি আঁকিয়েরা প্রথমে দুই খুনীর হুবহু ছবি এঁকে দেন। এরপর শুরু হয় প্রযুক্তিগত তদন্ত। তদন্তে হত্যাকা-ে ৭ জন জড়িত থাকার অকাট্য প্রমাণ মেলে। হত্যাকারীরা ছোট ছোট টেক্স মেসেজের মাধ্যমে পুরো হত্যা মিশন সফল করে। হত্যাকারীরা পরস্পরের মধ্যে মোবাইল ফোনে কথা বলেনি। হত্যাকা-ে নতুন সাতটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করা হয়। মোবাইলগুলো খুবই সস্তা। প্রতিটি মোবাইল ফোনের দাম এক থেকে দেড় হাজার টাকা। সাতটি মোবাইল ও সাতটি সিম হত্যাকা-ের ৩ থেকে ৪ দিন আগে কেনা হয়। ব্যবহৃত সিমসহ সাতটি মোবাইল ফোনের মধ্যে ছয়টিই গায়েব করে ফেলা হয়। একটি মোবাইল ফোন গায়েব করার আগেই উদ্ধার করতে সক্ষম হয় ডিবি। ডিবি সূত্র বলছে, সেই মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে হত্যাকা-ে জড়িত ৭ জনকেই প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা হয়। এর মধ্যে একজন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য মিলেছে। তার নাম, পিতা, মাতা, ভাইবোন, বাড়ির স্থায়ী-অস্থায়ী ঠিকানা, আসামির পড়াশোনাসহ যাবতীয় তথ্য পাওয়া গেছে। শুধু গ্রেফতারের অপেক্ষা। তাকে গ্রেফতার করতে পারলেই অভিজিত হত্যা মামলার অনেক অজানা তথ্য বেরিয়ে আসবে। এদিকে শনাক্ত হওয়া সাত জনের মধ্যে অভিজিত রায়ের স্ত্রীর বর্ণনা অনুযায়ী আগেই ২ জনের ছবি আঁকা সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে বাকি ৫ জনেরও ছবি এঁকে দেয় এফবিআই। আসামির ছবি মোতাবেক অভিযান চলছে। এ ব্যাপারে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, অভিজিত হত্যায় ৭ জনের জড়িত থাকার প্রযুক্তিগত অকাট্য প্রমাণ এখন তাদের হাতে। এর মধ্যে একজন সম্পর্কে বিস্তারিত জানা গেছে। তাকে গ্রেফতার করতে পারলেই এ মামলার অনেক রহস্য বেরিয়ে আসবে। শনাক্ত হওয়া ৭ জনেরই ছবি এঁকে দিয়েছে এফবিআই। সে মোতাবেক অভিযান অব্যাহত আছে। হত্যাকা-টি সংঘটিত হয় মোবাইল ফোনে ছোট ছোট মেসেজ আদান প্রদানের মাধ্যমে। ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের মধ্যে একটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারকৃতদের অভিজিত হত্যা মামলায় ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তাদের কাছ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তারা ব্লগার হত্যা সমর্থন করেন। এদের মধ্যে সাদেক আলী মিঠু বা সাদিকের জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সাদিক সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে।
×