ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

উপকূলে ৪২ বছর পর আবার চালু হচ্ছে মুজিব কিল্লা

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২২ আগস্ট ২০১৫

উপকূলে ৪২ বছর পর আবার চালু হচ্ছে মুজিব কিল্লা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রায় ৪২ বছর পর নতুন করে চালু হচ্ছে ঐতিহাসিক ‘মুজিব কিল্লা’। উপকূলীয় এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত প্রায় দু’শ’ মুজিব কিল্লা চলতি বছরের মধ্যেই চালু করা হবে। মুজিব কিল্লা চালুর জন্য ইতোমধ্যেই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরকে নির্দেশনা দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। সূত্র জানায়, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপকূলীয় এলাকায় অনেক ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করেছিলেন। সে সময় উপকূলীয় এলাকায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুর আশ্রয়ের জন্যও আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে এসব আশ্রয় কেন্দ্রের নাম রাখা হয় ‘মুজিব কিল্লা’। সারাদেশে এখন ১৯৬টি মুজিব কিল্লা রয়েছে বলে জানায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। ঐতিহাসিক এসব মুজিব কিল্লা নতুন করে চালুর জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে গত মাসে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে অধিদফতরে পাঠানো এক চিঠিতে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যও অভিহিত করতে বলা হয়েছে। কোন্ জেলার কোন্ উপজেলায় কতটি মুজিব কিল্লা রয়েছে। এ ছাড়া কোন্ কোন্ মুজিব কিল্লা নতুন করে মেরামত করা প্রয়োজন এসব বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দাখিল করতে নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালায় মুজিব কিল্লার কথা উল্লেখ রয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী এসব মুজিব কিল্লার সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। তবে কোথাও কোথাও মুজিব কিল্লাগুলোর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির হাতে নেই। কোন্ কোন্ এলাকার মুজিব কিল্লার দায়িত্ব দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির হাতে নেই সেটাও জানাতে হবে মন্ত্রণালয়কে। ১৯৭০ সালের ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ে মানুষ মারা যায় ৫ লাখেরও বেশি, তখন বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি। সে সময় বিশ হাজার জেলে নৌকার সলিল সমাধি ঘটে সাগরে। ৪ লাখ বসতবাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ১০ লাখ গবাদিপশুর মৃত্যু হয়। সে সময় সাড়ে তিন হাজার বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৭০ সালের ভয়াল ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের অভিজ্ঞতা সামনে রেখে সারাদেশে আশ্রয় কেন্দ্র তৈরিতে মনোযোগ দেয় তৎকালীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার। সে সময় দেশের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তোলেন আশ্রয় কেন্দ্র। তবে গবাদিপশুর জন্য পৃথক আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করে বঙ্গবন্ধু সরকার। কেননা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিপন্ন হয়ে পড়ে গবাদিপশুও। সে কারণে এসব মুজিব কিল্লা তৈরি করা হয়। তবে সে সময়ে সব জায়গায় ইটের মাধ্যমে এসব আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ তৈরি করা সম্ভব হয়নি। কোথাও কোথাও মুজিব কিল্লাগুলো মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়। সে কারণে এসব কিল্লাকে কেউ কেউ মাটির কিল্লা বলেও অভিহিত করে থাকেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশব্যাপী দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের উদ্যোগ গ্রহণ করে ১৯৭২ সালে গঠন করেছিলেন ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী (সিপিপি)। সেই কর্মসূচীর মাধ্যমে সারাদেশে ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতি নেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে তৈরি করেছিলেন মাটির কিল্লা যা মুজিব কিল্লা নামে পরিচিত। সেই মুজিব কিল্লা আজও ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সময় প্রাণি সম্পদের আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে এখনও এসব মুজিব কিল্লা বিভিন্ন এলাকায় থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে মেরামত করা হয় না। সংস্কারের অভাবে কোন কোন কিল্লা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়েও পড়েছে। ১৯৭২ সালে বেশিরভাগ মুজিব কিল্লা নির্মাণ করা হয়েছিল মাটি দিয়ে। পরবর্তীতে স্থানীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি স্ব-উদ্যোগে এসব কিল্লা সংস্কার করে। কোথাও কোথাও এখন এসব কিল্লা পাকা করা হয়েছে। তবে এখন নতুন করে যেসব কিল্লা নির্মাণ করা হবে, সেসব কিল্লা আর মাটি দিয়ে তৈরি করা হবে না। এসব কিল্লা হবে ইট ও কাঠ দিয়ে তৈরি। চলতি বছরের মধ্যেই এসব মুজিব কিল্লা সংস্কার করে নতুন করে চালু করা হবে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর নবেম্বর মাসে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে পরিদর্শনে গেলে দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন। সে সময় তিনি উপকূলীয় এলাকায় মুজিব কিল্লারও খোঁজখবর নেন। মুজিব কিল্লাগুলো নতুন করে সচল করার বিষয়েও নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে নির্দেশনা অনুযায়ী পুনরায় মুজিব কিল্লা নতুন করে চালুর উদ্যোগ নেয় মন্ত্রণালয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকার থেকে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন উদ্যোগের অংশ হিসেবে দেশের ১৩টি উপকূলীয় জেলার ৩৭টি উপজেলার ৩২১টি ইউনিয়নে প্রায় ৫০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী গড়ে তোলা হয়েছে। এসব স্বেচ্ছাসেবী দুর্যোগের আগাম বার্তা প্রচার করে আশ্রয় কেন্দ্রে লোকজনকে সরিয়ে নিয়ে আসে। এছাড়া সেলফোনের মাধ্যমে জেলেদের কাছেও আগাম বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়। তাই দুর্যোগের আগে সাগরে এখন জেলে থাকে না বললেই চলে। এখন কোন দুর্যোগ আসার আগেই জেলেদের সাগর থেকে উপকূলে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়। স্বেচ্ছাসেবী ছাড়াও উপকূলীয় জেলায় এখন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কাজ করছে। এসব কমিটি সভাপতি ও সদস্য সচিবের মোবাইল নম্বরে এসএমএস এ্যালার্ট পাঠানো হয়। দুর্যোগে সামগ্রিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ঐতিহাসিক মুজিব কিল্লা নতুন করে চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
×