ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

চার দিনব্যাপী সেলিম আল দীন উৎসবের সফল সমাপ্তি

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২২ আগস্ট ২০১৫

চার দিনব্যাপী সেলিম আল দীন উৎসবের সফল সমাপ্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নাটক রচনায় যেন নিজস্ব পথরেখা এঁকেছিলেন সেলিম আল দীন। হাজার বছরের বাংলার লোকজ সংস্কৃতির নির্যাসের সঙ্গে যোগ করেছিলেন বর্ণনাত্মক ধারা। গড়েছিলেন আপন মহিমায় উজ্জ্বল স্বতন্ত্র এক আঙ্গিক। তাইতো জন্মজয়ন্তীতে নানা আয়োজনে স্মরণ করা হলো বাংলা নাটকের শিকড় সন্ধানী এই নাট্যকারকে। গত ১৮ আগস্ট ছিল রবীন্দ্রনাথ পরবর্তী বাংলা নাটকের সবচেয়ে সফল ও সমাদৃত এই নাট্যজনের ৬৬তম জন্মবার্ষিকী। আর এ উপলক্ষে বিভিন্ন নাট্য সংগঠনের পাশাপাশি ‘তোমার সম্মুখে অনন্ত মুক্তির ছায়াপথ’ সেøাগানে চার দিনব্যাপী সেলিম আল দীন উৎসবের আয়োজন করে ঢাকা থিয়েটার। শিল্পের আলোয় বাংলা নাট্যের এই যুগস্রষ্টাকে নিয়ে অনুষ্ঠিত উৎসবের শেষ দিন ছিল শুক্রবার। তাঁর নাট্য ভাবনার বিষয়ের ওপর আলোচনা, তাঁকে নিবেদিত পদক প্রদান এবং তাঁর রচিত নাট্য প্রদর্শনীর মাধ্যমে বহুমাত্রিক আনুষ্ঠানিকতায় জানানো হয় শ্রদ্ধাঞ্জলি। এদিন বিকেল থেকে শিল্পকলা একাডেমি আঙিনায় শুরু হয় সমাপনী আয়োজন। সেলিম আল দীন স্মারক বক্তৃতা ও পদক প্রদানের সঙ্গে সন্ধ্যায় নাটক মঞ্চায়নের মাধ্যমে শেষ হয় উৎসব। বিকেল চারটায় একাডেমির সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় সেলিম আল দীন স্মারক বক্তৃতা। দ্বৈতাদ্বৈতবাদী শিল্পতত্ত্ব ও শিল্প সৃজন বিষয়ক অপরাপর মতবাদ বিষয়ে বক্তৃতা করেন অধ্যাপক আবদুস সালাম। স্মারক বক্তৃতার পর সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে পদক প্রদানের আয়োজন করা হয়। এ বছরের সেলিম আল দীন পদক প্রদান করা হয় পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক ও কথাসাহিত্যিক অরুণ সেনকে। তাঁর হাতে স্মারক পদকটি তুলে দেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। আর পদকের অর্থমূল্য হিসেবে ৫০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন সেলিম আল দীনের সহধর্মিণী বেগমজাদী মেহেরুন্নেসা। অরুণ সেনকে নিবেদিত প্রশংসা বচন পাঠ করেন ঢাকা থিয়েটারের পরিচালক নাট্যজন নাসির উদ্দীন ইউসুফ। এর আগে বজলুল করিম-মীর মকসুদ-উস সালেহীন পদক প্রদান করা হয় বরেণ্য অভিনয়শিল্পী ফেরদৌসী মজুমদারকে। আর ফওজিয়া ইয়াসমিন শিবলী পদকটি প্রদান করা হয় অভিনয় ও চিত্রশিল্পী শারমিন স্বাতীকে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মঞ্চকুসুমখ্যাত অভিনয়শিল্পী শিমুল ইউসুফ। পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশ করে অরুণ সেন বলেন, এই সম্মাননা প্রাপ্তিতে আমি অভিভূত। আর যাঁর নামের সঙ্গে জড়িত এই পদক সেই সেলিম আল দীন শুধু এই বাংলায় নয়, অপর বাংলায়ও সমানভাবে স্বীকৃত। তাঁর নাট্য রচনার মৌলিক প্রতিভা ও নাসির উদ্দীন ইউসুফের নির্মাণ কৌশল মিলে সৃষ্টি হয়েছে শিল্পের অনবদ্য আখ্যান। প্রকৃতির নির্যাসে গড়ে উঠেছে সেলিম আল দীনের নাটকের বিষয়। পাশাপাশি নাটকের আঙ্গিকজুড়ে আছে লোকজ সংস্কৃতি। আর সে নাট্যধারায় অঙ্গাঙ্গিভাবে তৈরি হয়েছে শিল্প-সাহিত্যের বন্ধন। বহুমুখী শিল্প-সাহিত্যের পথ ধরে বিকশিত হয়েছে সেলিম আল দীনের নাট্যধারা। পদক প্রদানের আনুষ্ঠানিকতা শেষে মঞ্চস্থ হয় সেলিম আল দীন রচিত ও নাসির উদ্দীন ইসুফ নির্দেশিত ঢাকা থিয়েটারের নাটক নিমজ্জন। পৃথিবীর তাবৎ গণহত্যাকে উপজীব্য করে এগিয়েছে প্রযোজনাটির কাহিনী। ফোকলোর সেমিনার আজ শুরু বাংলা একাডেমির ফোকলোর, জাদুঘর ও মহাফেজখানা বিভাগের উদ্যোগে এবং বগুড়া সরকারী আজিজুল হক কলেজের সহযোগিতায় আজ থেকে বগুড়ায় শুরু হচ্ছে ফোকলোর সেমিনার। আজ শনিবার ও কাল রবিরবার সরকারী আজিজুল হক কলেজ ক্যাম্পাসে শুরু হচ্ছে দুই দিনব্যাপী এ ফোকলোর সেমিনার। আজ সকালে সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করবেন সরকারী আজিজুল হক কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ড. বেলাল হোসেন। ধারণাপত্র উপস্থাপন করবেন বাংলা একাডেমির ফোকলোর, জাদুঘর ও মহাফেজখানা বিভাগের পরিচালক শাহিদা খাতুন। প্রধান অতিথি থাকবেন সরকারী আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সামস্-উল আলম। বিশেষ অতিথি থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ এবং বগুড়ার জেলা প্রশাসক মোঃ আশরাফ উদ্দিন। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। এতে তিনটি পৃথক অধিবেশনে ‘উত্তরবঙ্গের সমাজ ও সংস্কৃতিতে মাদারপীরের প্রভাব’, ‘মাদারপালার পরিবেশনারীতির লোকশৈলী’ এবং ‘মাদারপীরের গানের ঐতিহ্য ও মাদার বাঁশের জারি’ শীর্ষক তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন যথাক্রমে ড. বেলাল হোসেন, অধ্যাপক আল জাবির এবং সাইদুর রহমান বয়াতী। আলোচনায় অংশ নেবেন ফোকলোর গবেষক শফিকুর রহমান চৌধুরী, অধ্যাপক খৈয়াম কাদের, অধ্যাপক মোস্তফা আহাদ তালুকদার, ড. মীর ত্বাইফ মামুন মজিদ প্রমুখ। তিনটি অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন যথাক্রমে ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ, অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান এবং অধ্যাপক মীর আব্দুর রাজ্জাক। ‘আমার সোনার দেশ’ প্রদর্শনী আজ নদীমাতৃক দেশ, ছয় ঋতুর দেশ, অপরূপ নিসর্গের এই চির সবুজ লিলাভূমি আমাদের এই বাংলাদেশ। নদীনালা, খালবিল, হাওর-বাঁওর পাহাড়-সমুদ্র অপরূপ রূপের খেলা বাংলার নিসর্গের এই দেশে। বাংলার নিসর্গের সফল চিত্রশিল্পী সোহাগ পারভেজ বাংলার প্রকৃতিকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছেন তার চিত্রপটে। টেকনাফ থেকে তেুঁতুলিয়ার, আনাচে কানাচের অনেক জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন রং তুলি ক্যানভাস নিয়ে। তার তিন বছরের কাজ নিয়ে রাজধানীর গ্যালারি এ্যাথেনা আয়োজন করেছে ‘আমার সোনার দেশ’ শিরোনামের একক চিত্র প্রদর্শনী। প্রদর্শনীতে তার ৭১টি চিত্রকর্ম অংশ পেয়েছে যার মধ্যে ৬২টি জলরং, ১টি পেস্টাল, ১টি পোস্টার ও ৭টি এক্রেলিক কালারের ছবি। আজ শনিবার বিকেল ৫টায় শুরু হবে এ প্রদর্শনী। এতে সম্মানিত অতিথি থাকবেন শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী, শিল্প সমালোচক রবিউল হুসাইন, শিল্পী ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আফজাল হোসেন এবং শিল্প রসিক মাঈনুল আবেদিন ।
×