ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পরিকল্পনা কমিশন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মাধ্যমে দ্রুতই চালু হচ্ছে পাইলট স্কিম

অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে এবার চালু হচ্ছে ই-ফাইলিং

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৩ আগস্ট ২০১৫

অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে এবার চালু হচ্ছে ই-ফাইলিং

ফিরোজ মান্না ॥ অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধে এবার চালু হচ্ছে ই-ফাইলিং পদ্ধতি। পরিকল্পনা কমিশন ই-ফাইলিং চালুর অনুমোদন দিয়েছে। ই-ফাইলিং পদ্ধতি প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতায় থাকবে তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। তবে কাজটি বাস্তবায়নে থাকবে পরিকল্পনা কমিশন। প্রাথমিক পর্যায়ে পরিকল্পনা কমিশন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মধ্যে ই-ফাইলিং কার্যক্রম চালু হবে। এ জন্য ৫০ কোটি টাকার মতো ব্যয় ধরা হয়েছে। ই-ফাইলিং চালু হলে কাজের গতি বেড়ে যাবে। এর আগে বিভিন্ন দফতরে ই-টেন্ডারিং কার্যক্রম চালু হয়েছে। ই-টেন্ডারিংয়ের কারণে ওই সব দফতরে টেন্ডারবাজি অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে। কাগজের ফাইলের পরিবর্তে ই-ফাইলিং ব্যবস্থা চালু হলে ফাইল আটকে অনিয়ম দুর্নীতি করা সহজ হবে না। কোন কর্মকর্তা ফাইল আটকে রাখতে পারবে না। অল্পদিনের মধ্যে ই-ফাইলিং অন্যান্য দফতরেও চালু করা হবে। সূত্র জানায়, অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধ ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আনতেই ই-ফাইলিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ইলেক্ট্রনিক গবর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) অনলাইন প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হবে বিভিন্ন দফতর। ই-ফাইলিং চালু হলে অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীর দুর্নীতি আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যাবে। যে কোন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হবে। সময় লাগবে কম। বাড়বে কাজের গতি। প্রাথমিকভাবে কয়েকটি অফিসে ই-ফাইলিং কার্যক্রম চালু করা হবে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব অফিসকে ই-ফাইলিংয়ের আওতায় যুক্ত করা হবে। ইতোমধ্যে দেশের প্রায় অফিস আদালতেই ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালু করা হযেছে। ফলে ই-ফাইলিং কার্যক্রম শুরু করতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না। তবে কর্মকর্তা কর্মচারীদের এ বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধির কাজটিও করা হবে। তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলেন, ই-ফাইলিং সরকারের একটি ভাল উদ্যোগ। এই ধরনের পদ্ধতি বাস্তবায়নের একটি ফাইল প্রস্তুত করতে সময় কমে যাবে অনেক। ফাইলের কাজ দ্রুত শেষ হলে কাজের গতিও বেড়ে যাবে। থাকবে না আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় অনেক উন্নয়ন কাজ শুরু করতে সময়ক্ষেপণ হয়ে যায়। এখান থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। ই-ফাইলিং ব্যবস্থা হলে একটি ফাইল দ্রুত প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো সম্ভব হবে। যদি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে ই-ফাইলিং গ্রহণের জন্য দক্ষ জনবল না থাকে তাহলে কিন্তু আরেক জটিলতা তৈরি হবে। এটা শুধু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বলে কথা নয়, যে অফিসই ই-ফাইলিংয়ের আওতায় আসবে সেই সব অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের দক্ষ হতে হবে। তাহলেই এই উদ্যোগ সফল হবে। উন্নত দেশে ই-ফাইলিং ব্যবস্থা চালু হয়েছে বহু আগেই। ওই সব দেশে তথ্য প্রযুক্তিতে বহুদূর অগ্রসর। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে হলে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে আরও অনেক কাজ করতে হবে। সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারী উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। তবেই এমন উদ্যোগ সফল হতে পারে। সূত্র মতে, ই-ফাইলিং পদ্ধতি বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে। দ্রুতই আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করা হবে। বর্তমানে ৫০ কোটি টাকার বেশি সরকারী ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়ালি অনুমোদন করে থাকেন। অচিরেই তিনি এ অনুমোদন ইলেক্ট্রনিক্যালি করবেন। এতে অনেক সময় বাঁচবে। উন্নয়ন কাজও ত্বরান্বিত হবে। অযাচিত হস্তক্ষেপ ঠেকাতে এবং চলমান উন্নয়ন প্রক্রিয়া আরও গতিশীল হবে। ফাইল চালাচালিতে সময় নষ্ট হবে না। ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফাইল এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে যাবে। উন্নয়ন প্রকল্পের ক্রয় ব্যবস্থায় ই-গবর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) কার্যক্রম চালু হলে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। বেশিরভাগ প্রকল্পের ডিপিপি পাওয়ার পরে তা সঠিক বিবেচিত হলে কমিশন ও প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু প্রচলিত অবস্থায় কাগুজে ফাইল দুই দফা আনানেয়া করতে এবং প্রধানমন্ত্রীর ব্যস্ততার কারণে তা অনুমোদন শেষে ফিরে আসতে প্রকল্পের মূল সময় থেকে ৬ মাস ক্ষেত্র বিশেষে এক বছর চলে যায়। পরবর্তীতে অনুমোদিত প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে শেষ করা সম্ভব হয় না। এতে নতুন করে সংশোধনী আনতে হয়। ফলে একদিকে উন্নয়নে ধীরগতি-অন্যদিকে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা সরকারী অর্থ অপচয় করছেন। উন্নয়ন প্রকল্পের যথাযথ বাস্তবায়ন এবং তৃণমূলে দৃশ্যমান উন্নয়নের লক্ষ্যে এমন উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) একটি সূত্র জানায়, সরকারের জাতীয় ই-গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) পোর্টাল () তৈরি করা হয়েছে। ই-জিপি সিস্টেমটি সরকারের ক্রয়কারী সংস্থা (পিএ) এবং ক্রয়কারী (পিই)সমূহের ক্রয়কার্য সম্পাদনের জন্য একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। এই প্লাটফর্মের মাধ্যমে উন্নয়ন প্রকল্পের ক্রয়াদেশের অনুমোদন দেয়া হবে। ই-জিপি একমাত্র ওয়েব পোর্টাল যেখান থেকে এবং যার মাধ্যমে ক্রয়কারী সংস্থা এবং ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানসমূহ নিরাপদ ওয়েব ড্যাসবোর্ডের মাধ্যমে ক্রয়-সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যাবলি সম্পাদন করতে পারবে। ই-জিপি সিস্টেম সিপিটিইউতে স্থাপিত ডাটা সেন্টারে ধারণ করা হয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহার করে সরকারের ক্রয়কারী সংস্থা এবং ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান ই-জিপি ওয়েব পোর্টালে প্রবেশ করতে পারবে। এই পদ্ধতি ক্রমান্বয়ে সরকারের সব প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হবে। এর মাধ্যমে সরকারী ক্রয়-প্রক্রিয়ায় দরদাতাদের অবাধ অংশগ্রহণ ও সমসুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়াও ক্রয় প্রক্রিয়ায় দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। সূত্র মতে, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ২০০৬-এর ধারা ৬৭ এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮ এর বিধি-১২৮ অনুসরণে প্রণীত ও জারিকৃত ‘ইলেক্ট্রনিক গবর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) নির্দেশমালা’ মেনে সরকারী তহবিলের অর্থ দিয়ে যে কোন পণ্য, কার্য বা সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে ই-জিপি পদ্ধতি ব্যবহৃত হবে। এ জন্য ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল সরকার। উল্লেখ্য, টেন্ডারবাজি ঠেকাতে ২০১১ সালে ই-জিপি বাস্তবায়নে একটি নতুন আইন জারি করে সরকার। এরপরে সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের টেন্ডারকে এই প্ল্যাটফর্মের আওতায় আনা হয়েছে। বর্তমানে এই পদ্ধতিতে টেন্ডার আহ্বান করায় টেন্ডারবাজি অনেকাংশে কমে গেছে।
×