ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

সোহাগের রং মাখা চিত্রপটে আমার সোনার দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৩ আগস্ট ২০১৫

সোহাগের রং মাখা চিত্রপটে আমার সোনার দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রঙের ওপর রং চাপিয়ে চিত্রিত হয়েছে স্বদেশের রূপ। চিত্রপটজুড়ে ভেসে উঠেছে বাংলার মোহময় প্রকৃতি। স্বতঃস্ফূর্ত রঙের সঙ্গে রেখার গতিময়তায় ক্যানভাসে বিবৃত হয়েছে রূপময় লোকজ বাংলা। শিল্পীর তুলির আঁচড়ে দৃশ্যমান নদীমাতৃক দেশ, ছয় ঋতুর দেশ, অপরূপ নিসর্গের এই চির সবুজ লীলাভূমি আমাদের এই বাংলাদেশ। প্রতিটি ছবিতে ভাস্বর নদী-নালা, খাল-বিল, হাওড়-বাঁওড় কিংবা পাহাড়-সমুদ্রের লাবণ্যের রূপরেখা। আর সোনার বাংলার এই নয়নজুড়ানো নিসর্গকে ক্যানভাসে মেলে ধরেছেন চিত্রশিল্পী সোহাগ পারভেজ। বাংলার প্রকৃতিকে মননের নির্যাসে তুলে ধরেছেন চিত্রপটে। ছবি আঁকার তাগিদে বিভাময় প্রকৃতির সন্ধানে ঘুরে বেরিয়েছেন টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার আনাচে-কানাচে। শিল্পীর তিন বছরের সেই শিল্পযাত্রার সৃজিত ছবি নিয়ে প্রগতি সরণির এ্যাথেনা গ্যালারিতে শুরু হলো প্রদর্শনী। শিরোনাম আমার সোনার দেশ। শনিবার শরতের বিকেল প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী, শিল্প সমালোচক রবিউল হুসাইন, শিল্পী ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আফজাল হোসেন এবং শিল্পরসিক মাঈনুল আবেদিন। অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন শিল্পী সোহাগ পারভেজ। প্রদর্শনীর প্রতিটি ছবিই যেন রূপময় বাংলার নিসর্গের নান্দনিকতা আর সেই অঞ্চলভিত্তিক যাপিত জীবনের কথা। একটি ছবিতে দৃশ্যমান কোন এক গ্রামের নদীর পার। থইথই জলভরা নদীর ওপরে নীলাভ আকাশে প্রবাহিত হচ্ছে মেঘের ভেলা। আর নদী পারে জড়ো হয়েছে বেদে বহরের সারি সারি নৌকা। এর মাঝে একটি নৌকায় বসে কর্মব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে নারী ও পুরুষ বেদেরা। চাক্তাই খাল শিরোনামের চিত্রপটে দেখা মিলে ওই খালের অপরূপ দৃশ্যগাঁথা। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত এ খালের পাড়ে গড়ে উঠেছে খাতুনগঞ্জের নানা আড়ত। গড়ে উঠেছে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। ছবিতে চোখে পড়ে নৌকা বোঝাই মাল নিয়ে পাড়ে ভিড়ছে ছোট-বড় নৌকা। নৌকা থেকে আড়তদারদের মালামাল উঠানোর দৃশ্যও অনুপমভাবে চিত্রিত হয়েছে ক্যানভাসে। এভাবেই সোহাগের ক্যানভাসে ধরা দিয়েছে প্রকৃতি ও প্রাণের উচ্ছ্বাস। জল রঙে আঁকা তাঁর ছবিগুলোয় উঠে এসেছে প্রাণচাঞ্চল্য। বান্দরবনের পাহাড়ী পরিবেশ, লেক, মুরং পরিবার, রাঙামাটির শান্ত পাহাড়ের শরীর ঘেঁষে ছুটে চলা নদী কিংবা বেদেনির অঙ্গের লোকজ সাজÑ প্রকৃতির সঙ্গে জীবন এসে মিশেছে সোহাগের শিল্পের আঙিনায়। সোহাগের ছবিতে নিসর্গের রং ও নিসর্গের অবয়ব সব সময়ই হাজির। প্রকৃতিকে দেখার নিজস্ব অবলোকন আছে তার। উজ্জ্বল রং ব্যবহার করলেও তাঁর ছবিতে লক্ষ্য করা যায় আলো-ছায়ার খেলা। তাতে তার চিত্রপট উপস্থিত হয় এক মায়াবী আবহ নিয়ে। নিসর্গের বহুমাত্রিক রূপে উদ্ভাসিত হয়েছে এই চিত্রকরের চিত্রকর্ম। প্রর্দশনীতে মোট চিত্রকর্মের সংখ্যা ৭১টি। এর মধ্যে ৬২টি জলরং, ১টি পেস্টাল, ১টি পোস্টার ও ৭টি এক্রেলিক মাধ্যমে চিত্রিত ছবি। তিন সপ্তাহব্যাপী এ প্রদর্শনী চলবে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। মোহাম্মদ ইকবালের ক্যানভাসে সাধু-সন্তর প্রতিচ্ছবি ॥ চিত্রকর্ম সৃজনে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল এক শিল্পী মোহাম্মদ ইকবাল। আর এই শিল্পীর আগ্রহের অন্যতম বিষয় হচ্ছে সমাজবিচ্যুত সাধু-সন্ত মানুষ। সেই সঙ্গে ক্যানভাসে উঠে আসে অসহায় নারী ও শিশুর প্রতিকৃতি। এবার শিল্পী রঙের খেলায় আলো ফেলেছেন সাধুদের মুখের ওপর। অসহায় নারী এবং শিশুর মুখ তার ক্যানভাসে ওঠে এসেছে নতুন করে। এমন সব ছবি নিয়ে রাজধানীর উত্তরার গ্যালারি কায়ায় শুরু হলো এই শিল্পীর চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। শনিবার সন্ধ্যায় আউটসাইড অব দ্য সোশ্যাল বন্ডেজ বা সামাজিক বন্ধনের বাইরে শীর্ষক এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবী ও ঢাকার জাপান দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানাবে। নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন শিল্পী মোহাম্মদ ইকবাল। স্বাগত বক্তব্য রাখেন গ্যালারি কায়ার পরিচালক গৌতম চক্রবর্তী। প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম প্রসঙ্গে মোহাম্মদ ইকবাল বললেন, সাধু-সন্তুর প্রতি আমার আগ্রহ সব সময়। জাপানে গিয়ে আমার গবেষণার বিষয় ছিল ‘সভ্যতা ও বিপর্যয়’। একটা বিষয় আমাকে সব সময় ভাবায় সেটা হচ্ছে এই যে, আমাদের সভ্যতার বিকাশ কি সব মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে। তিনি বললেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স চার বছর। তখন যে ভয়াবহতা আমি উপলব্ধি করেছি। সেই ভয়াবহতা আজও চলতি পথে বর্তমানের শিশুদের চোখে-মুখে দেখি। রফিকুন নবী বলেন, মোহম্মদ ইকবাল আমার ছাত্র। তখন থেকেই দেখেছি সে খুব সচেতন মানুষ। সেই সমাজ সচেতনতা তার ক্যানভাসে প্রতিফলিত হতো তখন। সেই ধারাবাহিকতা এখনও রয়েছে। ক্যানভাসে একজন শিল্পীর উদ্বেগ ও মানুষের প্রতি সহমর্মিতা ফুটে উঠেছে। গৌতম চক্রবর্তী বলেন, মোহম্মদ ইকবাল দেশের একজন স্বনামধন্য শিল্পী। উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন জাপানে। তবে দেশের সঙ্গেও তার নিবিড় সম্পর্ক বহমান। পক্ষকালব্যাপী এ প্রদর্শনীতে শিল্পী ৩৪টি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে। প্রদর্শনী শেষ হবে ৫ সেপ্টেম্বর। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে। খেলাঘর আসরের শোক দিবসের আলোচনা ॥ চলছে শোকের মাস আগস্ট। পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট বাঙালী জাতির ইতিহাসের কলঙ্ক লেপন করেছিল সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী উচ্ছৃঙ্খল সদস্য। নিষ্ঠুর ঘাতকের বুলেটে প্রাণ হারান হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। পিতা হারানো সেই শোকের দিনটি স্মরণ করে শনিবার জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভার আয়োজন করে কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর। বিকেলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষণ ভবনের নিচতলায় এ স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমাদ ও শিশুসাহিত্যিক আলম তালুকদার। এছাড়া আলোচনায় অংশ নেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল ফারাহ পলাশ এবং চার প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রণয় সাহা, নূরুর রহমান সেলিম, আলী আকবর বিশ্বাস ও শফিকুর রহমান শহীদ। খেলাঘরের শিশুদের উদ্দেশে গোলাম কুদ্দুছ বলেন, একাত্তরের যে অপশক্তি নারী ও শিশু নির্যাতন এবং মানুষ হত্যা করেছে সেই ঘাতকরাই পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্টের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারের হত্যার মাধ্যমে তারা একাত্তরে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়। এমনকি এই পাষ-দের হাত থেকে রক্ষা পায়নি শিশু শেখ রাসেল থেকে শুরু করে সেদিনের মাতৃগর্ভা নারী। পরবর্তীতে এই হত্যাকারীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে লালন-পালনও করা হয়েছে। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে এই ঘাতকদের চিনে রাখতে হবে। উপড়ে ফেলতে হবে তাদের শিকড়।
×