ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার

শীঘ্র সাঈদী ও মুজাহিদের আপীল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৩ আগস্ট ২০১৫

শীঘ্র সাঈদী ও মুজাহিদের আপীল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের দেয়া দ-ের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগে পাঁচটি মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হলেও এখন পর্যন্ত তিনটি মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়নি। এ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় আশা করছেন শীঘ্রই দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও আলী আহসান মুজাহিদের মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হতে পারে। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর নিয়ম অনুযায়ী রিভিউ করা হবে। জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপীলের রায় ঘোষণা করা হয় ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর, মুজাহিদের রায় ঘোষণা করা হয় চলতি বছরের ১৬ জুন আর সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর আপীলের চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হয় ২৯ জুলাই। এর আগে জামায়াতের দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা ও মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের মামলার চূড়ান্ত আপীল নিষ্পত্তি শেষে তাদের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে। বর্তমানে নিজামী-মীর কাশেমসহ আরও আটটি মামলা আপীল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের আপীলের পূর্ণাঙ্গ রায় তাড়াতাড়িই পাওয়া যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, অচিরেই মুজাহিদের রায় পাব। কারণ ঐকমত্যের ভিত্তিতে আপীল বিভাগের বিচারকগণ মুজাহিদের আপীলের রায় ঘোষণা করেছেন। যেহেতু ঐকমত্যের ভিত্তিতে এ রায় হয়েছে সেহেতু একজন বিচারক রায় লিখবেন। অন্য বিচারকদের ভিন্নমত পোষণ করে রায় লেখার সুযোগ নেই। সেই হিসেবে আমার অনুমান তাড়াতাড়িই পাওয়া যাবে। অন্যদিকে সাঈদীর মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ও শীঘ্রই বের হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। সাঈদী ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আমৃত্যু কারাদ- প্রদান করেছেন আপীল বিভাগ। আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের করা দুটি আপীল সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে আংশিক মঞ্জুর করে এ রায় দেয়া হয়। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ ওই রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অপর চার বিচারপতি হলেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (বর্তমানে প্রধান বিচারপতি), বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবিরের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সাঈদীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- প্রদান করেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। মুজাহিদ ॥ একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে ট্রাইব্যুনাল কর্র্তৃক মৃত্যুদ-াদেশ পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলবদর কমান্ডার বুদ্ধিজীবী হত্যার মাস্টার মাইন্ড আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের আপীল খারিজ করে মৃত্যুদ- বহাল রেখেছেন আপীল বিভাগ। চলতি বছরের ১৬ জুল প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপীল বেঞ্চ ঐকমত্যের ভিত্তিতে এ রায় ঘোষণা করেন। বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার চেষ্টায় বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে মুজাহিদের মৃত্যুদ- বহাল রাখা হয়েছে। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। বুদ্ধিজীবী হত্যায় এটাই আপীল বিভাগের প্রথম রায়। উল্লেখ্য, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- প্রদান করেন। এই প্রথম বাংলাদেশের মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করা কোন ব্যক্তি বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগে উচ্চ আদালত তাকে মৃত্যুদ- বহাল রাখলেন। আপীল বিভাগ রায়ে অভিযোগ-১ সাংবাদিক সিরাজউদ্দিন হোসেনকে অপহরণ ও হত্যার দায়ে আসামি মুজাহিদকে খালাস দিয়েছেন। অভিযোগ-২ ট্রাইব্যুনালের দেয়া ৫ বছরের সাজা বহাল রেখেছেন। অভিযোগ-৫ এ বদি রুমিসহ অন্যদের হত্যার ঘটনায় ট্রাইব্যুনালের দেয়া যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ- বহাল রেখেছেন। অভিযোগ-৬ ট্রাইব্যুনালের দেয়া বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগে মৃত্যুদ- বহাল রাখা হয়েছে। অন্যদিকে অভিযোগ-৭ এ বকচর হত্যাকা-ে ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদ- কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মুজাহিদের বিরুদ্ধে ৭টি অভিযোগের মধ্যে ২টি অভিযোগ (২ ও ৪) প্রমাণিত না হওয়ায় অভিযোগের দায় থেকে তাকে খালাস দেন। অন্যদিকে ৫টি অভিযোগ (১, ৩, ৫, ৬, ৭) সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল তাকে ৩নং অভিযোগে ৫ বছর ও ৫নং অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান করেন। ৬ ও ৭নং অভিযোগে মুজাহিদকে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়। ১নং অভিযোগটি ৬নং অভিযোগের সঙ্গে একীভূত করায় ১নং অভিযোগে পৃথক কোন দ- দেয়নি ট্রাইব্যুনাল। সাকা চৌধুরী ॥ একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে ট্রাইব্যুনাল কর্র্তৃক হত্যা ও গণহত্যার দায়ে মৃত্যুদ-াদেশ পাওয়া বিএনপির শীর্ষ নেতা সাকা বাহিনীর (নিজস্ব বাহিনী) প্রধান স্বঘোষিত ব্রিগেডিয়ার সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদ- বহাল রেখেছেন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। চলতি বছরের ২৯ জুলাই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপীল বেঞ্চ এই ঐতিহাসিক মামলার রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা ছিলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। আপীল আংশিক মঞ্জুর করা হয়। ৭ নম্বর অভিযোগ থেকে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে খালাস দেয়া হলো। ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৮, ১৭ ও ১৮ নম্বর অভিযোগে সাজা বহাল রাখা হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনা ২৩টি অভিযোগের মধ্যে নয়টি প্রমাণিত হয়। ৩, ৫, ৬ ও ৮ নম্বর অভিযোগে সাকাকে মৃত্যুদ-াদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। আপীল বিভাগ তা বহাল রাখেন। ৭ নম্বর অভিযোগে সাকা চৌধুরীকে ২০ বছর কারাদ- দেন ট্রাইব্যুনাল। এই অভিযোগ থেকে আসামিকে খালাস দিয়েছেন আপীল বিভাগ। ২ ও ৪নং সাকাকে ট্রাইব্যুনাল ২০ বছরের কারাদ- প্রদান করেন। সেটা আপীল বিভাগ বহার রেখেছেন। অন্যদিকে ১৭ ও ১৮ নম্বর অভিযোগে সাকাকে ৫ বছর করে কারাদ- প্রদান করা হয়। আপীল বিভাগ সেটাও বহাল রেখেছেন। ৮টি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ॥ বর্তমানে আপীল বিভগে আরও ৮টি মামলায় ৯ জনের আপীল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর কাশেম আলী, আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত মোবারক হোসেন, জাতীয় পার্টির সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির নেতা (পলাতক) আব্দুল জব্বার (রাষ্ট্রপক্ষ) জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুস সুবহান ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের মাহিদুর রহমান এবং আফসার হোসেন চুটু।
×