বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের সঙ্গে একই চক্র জড়িত। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে দেশকে কলঙ্কমুক্ত করতে হবে। রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কালো দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাবি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ কামাল উদ্দীন, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, ঢাবি শিক্ষক অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক মাহবুবা নাসরীন, ঢাবি অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ আলী আকবর প্রমুখ।
এ সময় উপাচার্য আরও বলেন, ওই দিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কারণে দেশ অন্ধকার থেকে মুক্ত হয়েছিল। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাহসী ভূমিকা সেদিন গণতন্ত্র বিকাশের পথকে সুগম করেছিল। ২০০৭ সালের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে সজাগ থাকতে হবে। এসব ঘটনার পেছনের কুশীলব ও নির্দেশদাতাদের সম্পর্কেও সকলকে সচেতন থাকতে হবে।
এদিকে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে রবিবার সকালে অপরাজেয় বাংলায় এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কবি অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন অর রশিদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মিজানুর রহমান, কলা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক সদরুল আমিন, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এ আকাশ বলেন, অধ্যাপক আনোয়ার হোসন প্রমুুখ। এতে সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানী।
ঢাবির ইতিহাসে আর যেন কালো দিবস ফিরে না আসে তার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে রাশেদ খান মেনন বলেন, যখনই অগণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতায় আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। ২০০৭ সালের ২০-২২ আগস্ট দেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য হলো যে এসব ঘটনার কোন বিচার বা সমাধান হয় না। অভিযুক্তদের অনেকেই এখনো চাকরিতে বহাল থাকায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
অধ্যাপক হারুন অর রশিদ বলেন, ২৩ আগস্টের ঘটনা ছিল পাকিস্তানীদের মতো সেনাশাসন দীর্ঘস্থায়ী করার একটি পাঁয়তারা। সেদিন যদি ছাত্রশিক্ষক রুখে না দাঁড়াত তা হলে আজও এ দেশ সেনাশাসনের অধীনে থাকত। যে যত শক্তিশালী হোক না কেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পথে পরিচালিত হবে।
অধ্যাপক সদরুল আমিন বলেন, দলমত নির্বিশেষে একত্র হলে কি হয় তা ২০০৭ সালের ২৩ আগস্ট তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ঐক্যবদ্ধভাবে যেকোন নিপীড়নকে রুখে দেয়া সম্ভব।
অধ্যাপক এম এ আকাশ বলেন, আমরা কেউ চাই না উর্দি পরিহিত কেউ দেশ পরিচালনা করুক। কারণ কোন সভ্য দেশ উর্দি দ্বারা পরিচালিত হতে পারে না।
এদিকে দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কালো দিবসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ২০ আগস্ট ঢাবির কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ফুটবল খেলা দেখার সময় কতিপয় সেনাসদস্য ছাত্রদের মারধর করেন। এর প্রতিবাদে ছাত্র সমাজ বিক্ষুব্ধ আন্দোলন গড়ে তোলেন। এ প্রেক্ষিতে তৎকালীন সেনা সমর্থিত সরকার সান্ধ্যআইন জারি করে এবং ২৩ আগস্ট রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ জন শিক্ষক এবং ৮ জন ছাত্রকে গ্রেফতার করে নির্যাতন চালায়। এর পর থেকে ২৩ আগস্ট ঢাবিতে কালো দিবস হিসেবে পালন করা হয়।